নামাজ না পড়ার শাস্তি কি?। কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ

আরো পড়ুনঃ মাসিক অবস্থায় ইসলাম মতে নারীর করণীয় ও বর্জনীয়

"নামাজ" ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। নামাজ না পড়লে কী শাস্তি হবে? কোরআন ও হাদীসে নামাজ পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি, দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি, কবরের আজাব এবং তওবা করার সঠিক নিয়ম জানতে পড়ুন বিস্তারিত এই গাইডটি।

আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা গুগলে সার্চ করে জানতে চান, নামাজ না পড়ার বিষয়গুল সম্পর্কে। আর আপনিও যদি জানতে চান, তাহলে আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন। তাই, আজকের এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি একটু সময় করে পড়ুন।

নামাজ না পড়ার পরিণতি – কোরআন ও হাদীসের আলোকে

কোনো কাজের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার সঠিক একটি পদ্ধতি হল, কাজটি করার জন্য উৎসাহ দেওয়া। অপর পদ্ধতি হল, সেই কাজ না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করা। আর কোনো কিছুর গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই এই দুই পদ্ধতির যে কোনো একটি অবলম্বন করা যায়। 

তবে, সেটি পূর্ণতা পায়, যখন দু'ই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। নামাযের উপর গুরুত্বারোপের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে উভয় পদ্ধতিকে অবলম্বন করেছেন। কারণ, নামায পড়ার জন্য তিনি যেমন উৎসাহিত করেছেন তেমনিভাবে নামায না পড়ার পরিণতি সম্পর্কেও বারবার সতর্কও করেছেন। নিচে আমরা এই বিষয় সম্পর্কে জানবো।

নামাজ কেন ফরজ?

ইসলামের যে পাঁচটি মূল স্তম্ভ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো নামাজ। নামাজ প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করা হলো ফরজ ইবাদত। এটি মূলত বান্দার সঙ্গে মহান আল্লাহ পাকের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করার একট গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহতায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেনন, 

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًاনিশ্চয়ই নামাজ মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা: ১০৩)

তাছাড়া, নামাজ মানুষকে সকল অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করে, আত্মশুদ্ধি আনে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠে। তাই, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করলে তা মারাত্মক গুনাহ।

কোরআনে নামাজ না পড়ার ভয়াবহ শাস্তি কি?

মহন আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনের বহু স্থানেই নামাজ পরিত্যাগের শাস্তির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া, নামাজ বর্জনকা্রীর জন্য কি ভয়াবহ পরিণতি হবে, সেই বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যেমন-

** فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ ٭ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ যারা নামাজে গাফেল, তাদের জন্য দুর্ভোগ।” (সূরা মা'উন: -)

** مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ ۝ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ  “জাহান্নামে তোমাদেরকে কি জিনিস ঢুকিয়েছে?” তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ পড়তাম না।’ (সূরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)

এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে খুব সহজে বোঝা যায় যে, যারা নামাজ বর্জন করবে, তাদের জন্য শেষ পরিণতি ভয়ানক জাহান্নাম।

হাদীসে নামাজ পরিত্যাগকারীর অবস্থা

রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, 

  • “মানুষ ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ।” (সহীহ মুসলিম- ৮২)

এই কথাটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেবে, সে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হতে পারে। আরেক হাদীসে এসেছে, 

  • “নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরি কাজের মতো।” (তিরমিযী: ২৬১৮)

হাদীসসমূহে আরও বলা হয়েছে যে, নামাজ না পড়ার কারণে কবরের আজাব শুরু হয় এবং মৃত্যুর পরে কঠিন হিসাবের মুখোমুখি হতে হয়।

নামাজ না পড়ায় দুনিয়াতে এর প্রভাব

নামাজ না পড়ার কেবলমাত্র আখিরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও রয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। যেমন-

  • হৃদয়ের অশান্তি- নামাজ না পড়লে মানুষের অন্তরে অস্থিরতা ও অবসাদের সৃষ্টি হয়।
  • রিযিক সংকুচিত হয়- হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, নামাজ না পড়লে রিজিকের বরকত অনেক কমে যায়।
  • পাপের প্রতি ঝোঁক- নামাজ মানুষকে সকল অন্যায় ও পাপ থেকে রক্ষা করে। আর নামাজ না পড়লে মানুষ গুনাহের দিকে ধাবিত হয়।
  • আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি- যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে, তারা হয় আত্মবিশ্বাসী ও আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখে। আর নামাজহীন জীবনে, এই শক্তিকে হারিয়ে ফেলে।

নামাজ না পড়ায় আখিরাতে শাস্তির বিবরণ

নামাজ না পড়ালে আখিরাতে শাস্তি হবে কঠিনতর ভয়াবহ। এবিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে তার বিবরণ পাওয়া যায়। নিচে এই বিষয়ে দেখুন-

জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া 

হে আমার রব! সে আমাকে পথভ্রষ্ট করেছে। আমি অবশ্যই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।” (সূরা ছোয়াদ- ৮৫)

তাই, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।

কবরের শাস্তি 

রাসূল (সা.) এক হাদীসে বলেন, “নামাজ না পড়ার কারণে এক ব্যক্তিকে কবরের মাঝে এমনভাবে চেপে ধরা হবে যে, তার হাড়গোড় একে অপরের সাথে গেঁথে যাবে।” (মুসনাদে আহমদ)

হাশরের ময়দানে অপমান

নামাজ বর্জনকারীরা হাশরের ময়দানে অপমানিত হবে। তাদের মুখ অন্ধকার হবে, চেহারায় কলঙ্ক থাকবে এবং তারা আরশের ছায়া থেকে বঞ্চিত হবে।

নামাজ ছেড়ে দিলে কিভাবে তওবা করতে হবে?

আল্লাহ পাক অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তাই, যারা নামাজ ছেড়ে দিয়েছে, তারা যদি আন্তরিকভাবে তওবা করেন, মহান আল্লাহ পাক তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন। নিচে তওবার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে দেখুন-

আন্তরিক অনুশোচনা করা

প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে, নামাজ না পড়াটি ছিল আপনার একটি মারাত্মক ভুল। এর জন্য হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হতে হবে এবং মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে।

পরবর্তী জীবনে নামাজ পড়ার দৃঢ় সংকল্প নেওয়া 

মহান আল্লাহ পাক বেলেছেন “হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা যুমার: ৫৩)

নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করা

পূর্বের ন্যায় নামাজ ছেড়ে না দেওয়া এবং এক মুহূর্তও দেরি না করে, আজ থেকেই নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।

কাজা নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা

পূর্বের ফেলে যাওয়া নামাজগুলো যতটা সম্ভব কাজা করা উত্তম।

শেষ কথা- নামাজই মুক্তির চাবিকাঠি

নামাজ মুসলমানের জীবনের মূল একটি ভিত্তি। এটি শুধুমাত্র ফরজ এবাদত নয়, বরং মানুষের জীবনের কল্যাণ ও শান্তির অন্যতম একটি মুল চাবিকাঠি। তাই, যারা নামাজ পরিত্যাগ করে, তারা যেন নিজেরাই নিজেদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। মহান আল্লাহ বলেন,

  • وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ “তোমরা আমার নামাজ কায়েম করো, আমি তোমাদের সাহায্য করবো।”
আমরা যদি পার্থিব জীবনের সকল অস্থিরতা, চিন্তা, হতাশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাই তাহলে, নিয়মিত নামাজই হলো একমাত্র উপায়। আমরা যারা নামাজের প্রতি উদাসীন থাকি, তারা যেন আজই ফিরে আসি সঠিক এই পথে।

আরো পড়ুনঃ সূরা বাকারার ৬ টি ফজিলত – ঘরকে শয়তান মুক্ত রাখার সেরা আমল

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি উপকারি মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের পেজকে ফলো করে সঙ্গে থাকুন। আমাদের ব্লগের নাম বা ঠিকানা Tiretx

FAQ– পরিচিত প্রশ্নোত্তর

নামাজ না পড়া কি কবিরা গুনাহ?
হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ না পড়া ইসলামে কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

নামাজ না পড়লে কি রিজিক বন্ধ হয়ে যায়?
হাদীসে বলা হয়েছে, যারা নামাজ পরিত্যাগ করে তাদের রিজিক সংকুচিত হয়।

পুরনো কাজা নামাজ কীভাবে আদায় করবো?
সময় অনুযায়ী পরিকল্পনা করে দিনে কয়েকটি করে কাজা নামাজ আদায় করতে হবে।

নামাজ না পড়লে কীভাবে তওবা করবো?
আন্তরিক অনুশোচনা, ক্ষমা প্রার্থনা, নিয়মিত নামাজ শুরু ও কাজা নামাজ আদায় করেই তওবা করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url