ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ঘরোয়া ফেসপ্যাক – বেসনের ফেসপ্যাক, মুলতানি মাটি, টমেটোর ম্যাজিক

আরো পড়ুনঃ মেকআপ ছাড়াই কিভাবে সুন্দর দেখা যায়? – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার পরিপূর্ণ গাইড

ত্বক আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু বিভিন্ন কারণ, যেমন দূষণ, সূর্যের তাপ, মানসিক চাপ কিংবা অযত্নের ফলে, আমাদের ত্বক হারিয়ে ফেলে তার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।

বর্তমানে বাজারে থাকা কেমিকেলযুক্ত পণ্য ব্যবহার করে যদিও, অনেকেই সাময়িক ভালো কোন ফল পেলেও, সেটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই, প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়াটাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। 

সহজ কিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বেসন, মুলতানি মাটি ও টমেটো দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বককে ফর্সা, দাগহীন ও কোমল করতে সাহায্য করে। এই লেখায় আমরা জানবো, এমন ৭টি সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া ফেসপ্যাক সম্পর্কে, যা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও সতেজ।

ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরোয়া ফেস প্যাক

ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে আমরা অনেকেই ব্যয়বহুল কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু, আপনি কি জানেন? প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাক দ্বারা ঘরে বসে সহজেই ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব? 

আর ঘরোয়া উপাদান হলো, যেমন বেসন, মুলতানি মাটি ও টমেটো, ত্বকের যত্নে যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য পিপাসুরা ব্যবহার হয়ে আসছে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো এমন কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া ফেসপ্যাক, যেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল ও দাগহীন হবে। চলুন তাহলে দেখি-

ঘরোয়া ফেসপ্যাক কেন ব্যবহার করবো?

ঘরোয়া ফেস প্যাক ব্যবহারের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, পাশাপাশি এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকার কারণে ঘরোয়া ফেস প্যাক ব্যবহার করা উচিত। তবে, সাধারণত নিচের কারণগুলোর জন্য এটি ব্যবহার করবো। যেমন-
  • খরচ বাঁচে।
  • সহজলভ্য উপাদান।
  • ত্বকের গভীরে কাজ করে।
  • এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  • প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ফর্সা করে তোলে।

বেসনের ফেসপ্যাক – প্রাকৃতিক স্কিন ব্রাইটনার

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-

  • বেসন ২ টেবিল চামচ।
  • কাঁচা দুধ ১ টেবিল চামচ।
  • মধু ১ চা চামচ।
  • হলুদ ১ চিমটি।
উপরের ৪ ধরণের উপাদানকে একসঙ্গে ভালোকরে মিশিয়ে মসৃণ একটি পেস্ট বা প্যাক তৈরি করুন। এবার পেস্ট মুখ ও গলায় লাগিয়ে ১৫/২০ মিনিট রাখার পর, হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই উপাদানটি সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করুন।

উপকারিতা-

বেসন ত্বকে জমে থাকা অতিরিক্ত তেলকে শোষণ করে নেয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আর হলুদ প্রাক্রিতিকভাবেই জীবাণুনাশক এবং দুধ ত্বককে করে রাখে কোমল।

মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক – তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-
  • মুলতানি মাটি ২ টেবিল চামচ।
  • গোলাপজল ২ টেবিল চামচ।
  • লেবুর রস ১ চা চামচ।
এবার উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন এবং মুখে লাগান। হালকা শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন।

উপকারিতা-

মুলতানি মাটি ত্বকের তেলতেলে ভাবকে যেমন দূর করে, তেমনিভাবে লোমকূপের ভেতর থাকা ময়লাকে পরিষ্কার করে, ফলে ব্রণের প্রবণতা অনেক কমে যায়।

টমেটোর ম্যাজিক ফেসপ্যাক – প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-
  • টমেটোর রস ২ টেবিল চামচ।
  • মুলতানি মাটি ১ টেবিল চামচ।
  • মধু ১ চা চামচ।
উপরের সবকটি উপাদান একত্রে ভালো করে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি আপনার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতা-

টমেটোতে রয়েছে পরিমাণে লাইকোপিন উপাদান, যা ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা করে এবং রোদে পোড়া কালো দাগ হালকা করে।

দই ও মধুর ফেসপ্যাক – ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-

  • টক দই ২ টেবিল চামচ।
  • লেবুর রস ১ চা চামচ।
  • মধু ১ চা চামচ।
উপরের সবকটি প্রচুর উপাদান একত্রে ভালো করে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি আপনার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতা-

টক দইয়ে পাওয়া যায় ল্যাকটিন অ্যাসিড, যা ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে এক্সফলিয়েট করে এবং মধু ত্বক কোমল করে।

আরো পড়ুনঃ গরমে ত্বক ফর্সা রাখার নতুন বৈজ্ঞানিক সমাধান

শসা ও অ্যালোভেরা ফেসপ্যাক – ঠান্ডা ও সতেজ ত্বকের জন্য

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-

  • শসার রস ২ টেবিল চামচ।
  • অ্যালোভেরা জেল ১ টেবিল চামচ।
  • গোলাপজল ১ চা চামচ।
উপরের সবকটি প্রচুর উপাদান একত্রে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতা-

এই মিশ্রণ বা ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বককে ঠাণ্ডা করে, পোরস টাইট করে পাশাপাশি ইনফ্ল্যামেশন কমায়।

আলুর রস ও চালের গুঁড়ার প্যাক – দাগহীন ত্বকের জন্য

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-

  • আলুর রস ২ টেবিল চামচ।
  • চালের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ।
  • লেবুর রস ১ চা চামচ।
উপরের সবকটি প্রচুর উপাদান একত্রে ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতা-

আলু ত্বক ফর্সা কারার কাজ করে, চালের গুঁড়া স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে এবং লেবুর রস ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

হলুদের পেস্ট ফেসপ্যাক – জীবাণু ও ব্রণ প্রতিরোধে কার্যকর

তৈরির উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি-

  • কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ।
  • দুধ ১ টেবিল চামচ।
  • বেসন ১ টেবিল চামচ।
উপরের সবকটি প্রচুর উপাদান একত্রে ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন, এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে ১/২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

উপকারিতা-

কাচা হলুদ ত্বকের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে, দুধ ত্বককে কোমল রাখে এবং বেসন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়া্তে সাহায্য করে।

ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য নিয়মিত ব্যবহারের টিপস

ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক ফর্সা এবং উজ্জল করতে নিচের টিপসগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে।
  • প্রতিটি ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
  • প্যাক মুখে ১৫–২০ মিনিটের বেশি রাখবেন না।
  • ব্যবহারের পর হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • সপ্তাহে ২–৩ বার ফেসপ্যাক ব্যবহারেই যথেষ্ট।

ঘরোয়া ফেসপ্যাকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

এর সোজাসাপ্টা উত্তর হলো না, তবে অনেকে আছেন, যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল, তারা লেবু বা টমেটোর মতো অ্যাসিডযুক্ত উপাদান ব্যবহারে সামান্য জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা দুধ বা অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

শেষকথা- ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরোয়া উপাদান

আমাদের ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করার জন্য, বাজার থেকে কেনা কেমিকেলযুক্ত ক্রীম ব্যবহার না করে, আমরা চাইলেই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ঘরোয়া ফেসপ্যাকগুলো ব্যবহার করতে পারি, যা অধিক নিরাপদ ও কার্যকর। 

বেসন, মুলতানি মাটি, টমেটো, অ্যালোভেরা বা শসার মতো উপাদান প্রতিদিনের রূপচর্চায় অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি পেয়ে জাবেন উজ্জ্বল, কোমল ও দাগহীন ত্বক। তাছাড়া, ঘরোয়া প্যাকের নিয়মিত ব্যবহারে কোনো খরচ ছাড়াই, আপনার সৌন্দর্য হবে প্রাকৃতিক ও দীপ্তিময়।

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি উপকারি মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের পেজকে ফলো করে সঙ্গে থাকুন। আমাদের ব্লগের নাম বা ঠিকানা Tiretx

সচারাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারে কতদিনে ফল মিলবে?

সাধারণত ২ থেকে ৩ সপ্তাহে ভালো ফলা ফল মিলতে শুরু করে, তবে এটি নিয়মিত ব্যবহার জরুরি।

সব ধরনের ত্বকের জন্য কি একই ফেসপ্যাক উপযুক্ত?

না, কারণ, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি ভালো, অপরদিকে শুষ্ক ত্বকের জন্য দই-মধু জাতীয় ফেসপ্যাক উপযুক্ত।

আরো পড়ুনঃ মুলতানি মাটি- উপকারিতা ও ১০টি ঘরোয়া ফেস প্যাক | ত্বকের যত্নে সম্পূর্ণ গাইড

প্রতিদিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যায় কি?

না, কারণ প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে ২বার কিংবা ৩ বার ব্যবহারই যথেষ্ট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url