নারীদের পর্দা- ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও আধুনিক বাস্তবতা - Women's veil - Islamic perspective and women's reality

আরো পড়ুনঃ ৫ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা – নামাজ কেন জীবন বদলায় জানুন 

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের পর্দা মানে হলো, নিজেকে লজ্জাস্থানসহ সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখা। যাতে, অন্যের অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টি ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।

পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নূর ও সূরা আহযাবে পর্দার নির্দেশ স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে, "তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে" (সূরা আন-নূর: ৩১)। তাই, পর্দা শুধু পোশাক নয়, আচরণ, চলাফেরা ও কথাবার্তাতেও  সংযত হতে হয়। 

যদিও, আধুনিক সমাজে পর্দা অনেক চর্চা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও আত্মসম্মান রক্ষার উপায় রয়েছে। তাই সচেতনতা, ধর্মীয় জ্ঞান ও পারিবারিক সহায়তায় পর্দা পালন করা সম্ভব। এটি নারীর উন্নয়ন ও আত্মমর্যাদার অন্যতম চাবিকাঠি।

পর্দা কাকে বলে?- What is a screen?

ইসলামের দৃষ্টিতে "পর্দা" শব্দটি মূলত ব্যবহৃত হয়েছে, শালীনতা, নম্রতা এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসাবে। পর্দা মানে শুধুমাত্র মুখ ঢেকে রাখা নয়, বরং এটি এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে নারীর পোশাক, চলাফেরা, আচরণ এবং কথাবার্তায় শালীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। 

ইসলামে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য পর্দা সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে, নারীদের ক্ষেত্রে এটি অধিক গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে, কারণ পর্দা তাদের (নারীর) আত্ম সম্মান, নিরাপত্তা এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে।

কোরআন ও হাদীসে নারীদের পর্দার নির্দেশনা- Instructions on women's veiling in the Quran and Hadith

ইসলামের প্রধান মূল দুই ভিত্তি, মহান আল্লাহর বাণী আল কোরআন ও নবী কুরিম (সাঃ) এর বাণী হাদীসে পর্দা নিয়ে বিস্তারিতভাবে দিক নির্দেশনা রয়েছে। নিচে মহান আল্লাহর বাণী আল কোরআন ও মবী করিম (সাঃ) এর বাণী হাদীসে পর্দা সম্পর্কে যা বলেছেন-

কোরআনে নারীদের পর্দার নির্দেশনা- Instructions on women's veiling in the Quran

আল্লাহ তাআলা বলেন,  “হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন, তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যা সাধারণত প্রকাশ হয় তা ছাড়া। এবং তারা যেন তাদের ওড়নার প্রান্তগুলো বক্ষদেশে টেনে দেয়।” (সূরা আন-নূর, আয়াত- ৩১)

হাদীসের নারীদের পর্দার নির্দেশনা- Hadith's guidance on women's veiling

হাদীসে শরীফে রাসূল পাক (সা.) বলেন, “যে নারী সুগন্ধি মেখে লোকের মাঝে বের হয়, সে যেন ব্যভিচারিণীর মতো।” (তিরমিযি)

উপরের আয়াত ও হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পর্দা শুধু শরীরকে ঢাকার বিষয় নয়, বরং তা চরিত্র ও মন-মানসিকতার ব্যাপক অংশ জুড়ে রয়েছে।

পর্দা পালনকারী নারীর ফজিলত- The virtues of a woman who observes the veil

ইসলাম ধর্মে পর্দা পালনকারী নারীদের জন্য মহান আল্লাহ পাক অসংখ্য ফজিলত ও পুরস্কার ঘোষণা করেছে। নিচে কয়েকটি ফজিলত ও পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যেমন-

** আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ- পর্দা ইবাদতের অন্যতম  একটি অংশ। আর এই ইবাদতের মাধ্যমে একজন নারী মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

** জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়- রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, যারা পর্দা রক্ষা করে বা মেনে চলে, তারা কিয়ামতের দিনে সুরক্ষিত থাকবে।

** সামাজিক মর্যাদা- একজন পর্দাশীল নারী সবসময় সমাজে সম্মানিত ও নিরাপদ থাকে। কারণ, তাঁর চলাফেরায় অহংকার বা অপমান নয়, বরং সম্মান প্রকাশ পায়।

** চোখের হেফাজত: পর্দা শুধুমাত্র নারীকেই নয়, বরং পুরুষদের দৃষ্টকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে সমাজে অপসংস্কৃতি ও অনৈতিকতা অনেক কমে যায়।

কিভাবে পর্দা পালন করবেন?- How to observe the veil?

ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা বলতে শুধুমাত্র একটি চাদর বা বোরকা পরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি বহুমাত্রিক এবং জীবনব্যাপী চর্চার অন্যতম একটি বিষয়। নিচে পর্দার মূল ৩টি দিক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- 

আরো পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে পড়ার ৫টি দোয়া ও আয়াত – মানসিক শান্তি ও সুরক্ষার আমল

ইসলামে নারীদের পোশাক- Women's clothing in Islam

ইসলামে নারীর পোশাক কেমন হওয়া উচিত তা নিচে দেখুন-

  • যা অস্বচ্ছ ও মোহনীয় না হয়। 
  • যা ঢিলেঢালা এবং শরীরের আকৃতিকে স্পষ্ট করে না।
  • যা অলংকারের মতো বা অত্যন্ত সাজসজ্জা প্রদর্শনকারী হয় না।
উদাহরণ বলা যায়- হিজাব, বোরকা, শাল, লম্বা কুর্তি ও পায়জামা ইত্যাদি।

ইসলামে নারীদের চলাফেরা- Women's Movement in Islam

ইসলামে নারীদের চলাফেরার ক্ষেত্রে নম্রতা ও গম্ভীরতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অহেতুক কেউ বাইরে ঘোরাফেরা, পুরুষদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় মিশ্রণ ও হাসাহাসি পর্দার সীমাকে লঙ্ঘন করে। নারীরা ঘরের বাহিরে বের হলে যেন, প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া দৃষ্টিগ্রাহ্য না হয় এবং দৃষ্টিকে নিচু করে চলা একান্ত কাম্য।

ইসলামে নারীদের কথা বলা- Talking about women in Islam

মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমরা সবসময় কোমল আকর্ষণীয় ভাষায় কথা বলো না, যাতে যে ব্যক্তির অন্তরে রোগ আছে, সে কিছু আশা করে। বরং তোমরা স্পষ্ট স্বাভাবিক কথা বলো।” (সূরা আহাজাব, আয়াত- ৩২)

সুতরাং মহান আল্লাহর উপরের বানী থেকে সহজে বোঝা যায়, নারীদের কথা বলার ভঙ্গি হওয়া উচিত সংযত, সরল ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন।

আধুনিক সমাজে পর্দা – চ্যালেঞ্জ ও সমাধান- The veil in modern society – challenges and solutions

বর্তমান আধুনিক এই সমাজে নারীদের পর্দা রক্ষা করে চলা- ফেরা করা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও, এর সমাধান রয়েছে, যা আমাদের তা বাস্ত বায়ন অবশ্যই করতে হবে। নিচে আধুনিক সমাজে পর্দার চ্যালেঞ্জ ও সমাধান দেখুন- 

আধুনিক সমাজে নারীর পর্দার চ্যালেঞ্জ- The challenge of women's veiling in modern society

** সামাজিক চাপ- বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে পরিবার, বন্ধু কিংবা কর্মক্ষেত্রে পর্দা পালনকারী নারীদের তুচ্ছ করা হয়।

** মিডিয়ার প্রভাব- গণমাধ্যমে নারীদেরকে বেশিরভাগ সময় উপস্থাপন করা হয়, সাধারণত নির্লজ্জ পোশাকে, যা নারীর পর্দার ধারণাকে অনেক দুর্বল করে তোলে। 

** পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব- আধুনিকতার নামে বর্তমানে নারীরা বুঝতেই পারেন না যে, তারা কীভাবে নিজের সম্মান হারাচ্ছেন।

আধুনিক সমাজে নারীর পর্দার সমাধান- The solution to women's veiling in modern society

  • পরিবারে ইসলামীক শিক্ষার চর্চা চালু করা।
  • স্কুল-কলেজে ইসলামিক নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।
  • পর্দা পালনকারীদের বিশেষভাবে সামাজিক স্বীকৃতি ও সম্মান করা।
  • হিজাব ও পর্দাকে ফ্যাশনের পরিবর্তে সেটিকে ইবাদত হিসেবে তুলে ধরা।

পর্দা ও নারীর মর্যাদা – ভুল ধারণার জবাব- The veil and the dignity of women – answers to misconceptions

এখন আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি বড় ধরণের ভুল ধারণা রয়েছে যে, পর্দা নারীদের স্বাধীনতাকে হরণ করে, তাদের দমন করে ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত সত্য কথা হলো-

  • ইসলাম নারীকে পুরুষের চোখ থেকে নিরাপত্তা দিয়েছে।
  • নারীর দেহ নয়, তার জ্ঞান ও চরিত্রকে মূল্যায়ন করতে বলেছে।
  • ইসলামের পর্দা নারীকে বস্ত্রবন্দী করে না, বরং তাকে সম্মানিত করে।
আসল কথা হলো, পর্দা নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঢাল স্বরূপ। যা, তাদেরকে পুরুষের থেকে লালসামুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন  এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

শেষকথা- ইসলাম নারীর স্বাধীনতা ও সম্মান নিশ্চিত করে- Conclusion - Islam ensures women's freedom and dignity

ইসলামে পর্দা নারীর ওপর কোনো শৃঙ্খল নয়, বরং এটি তার সম্মান ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। নারী যেন শুধুমাত্র সৌন্দর্যের বস্তু না হয়, বরং তার চরিত্র, বুদ্ধি ও বিশ্বাসের কারণে মানুষ তাকে মূল্যায়ন করে এটাই হলো ইসলামের মূল শিক্ষা।

আজকের আধুনিক এই বাস্তবতায়, যেখানে নারীকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়, সেখানে পর্দাই পারে একজন নারীকে আত্মমর্যাদা ও আস্থা দিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে চলার পথ দেখাতে। তাই, আসুন আমরা সবাই ইসলামী পর্দার-বিধানের গুরুত্ব বুঝি সেটিকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করি।

আরো পড়ুনঃ পরীক্ষায় সফলতার জন্য ৫টি দোয়া – পরীক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী সমাধান

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে ও উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url