চুল কালার করার প্রাকৃতিক উপায় । ঘরোয়া হেয়ার কালার টিপস ২০২৫- Natural ways to color hair. Homemade hair color tips 2025
আরো পড়ুনঃ ফেসিয়াল করার সঠিক নিয়ম - ঘরে বসে ফেসিয়াল করার Step by Step গাইড
মানুষের সৌন্দর্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চুল। তাইতো, সৌন্দর্য সচেতন মানুষ বিভিন্ন যত্নের পাশাপাশি অনেক সময় চুল কালার করেন।
আর চুলে কালার করতে অনেকেই বাজারের কেমিকেলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, যা দীর্ঘমেয়াদে চুলের ক্ষতি করে। কিন্তু অনেকে জানেন না, যে ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই সহজে চুলে কালার আনা যায়। এতে চুলের যেমন ক্ষতি হয় না, তেমনই এটি চুলকে করে মজবুত ও ঝলমলে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো চুল পাকার কারণ, চুল কালারের সহজ ঘরোয়া ৫টি প্রাকৃতিক উপায়, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি চুলে এনে দিতে পারেন সুন্দর কালার ও বাড়তি পুষ্টি। চলুন তাহলে দেখি-
প্রাকৃতিক লালচে-বাদামি রঙের জন্য – হেনা- For a natural reddish-brown color – Henna
হেনা বা মেহেদি পাতা চুলের প্রাকৃতিক রঙ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ উপায়। তাছাড়া, এটি কেবল চুলে কালারই আনে না, বরং চুলের গোড়াকে মজবুত করে এবং খুশকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
চুল লালচে-বাদামি কালার করতে হেনার ব্যবহার- Using henna to color hair reddish-brown
প্রথমে ৪/৫ টেবিল চামচ হেনা পাউডার নিন ও সামান্য কফি বা চায়ের লিকার মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। আপনি চাইলে ১ চা চামচ লেবুর রস এবং ১ চা চামচ টক দই মেশাতে পারেন। উপাদানগুলো ৬/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন, তারপর চুলে লাগান এবং ২/৩ ঘণ্টা রাখার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন (শ্যাম্পু না ব্যবহার করাই ভালো)।
চুলে বাদামি রঙের প্রাকৃতিক ছোঁয়া পেতে – কফি- To get a natural touch of brown in your hair – Coffee
চুলেকে হালকা থেকে মাঝারি মানের বাদামি শেড পেতে সাহায্য করে কফি। চুলে কপির ব্যবহার খুবই সহজ এবং সকল প্রকার ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতি। কপি চুলকে করে তোলে চকচকে এবং আগের প্রাকৃতিক কালারকেও আরো গাঢ় করে।
চুল বাদামি কালার করতে কফির ব্যবহার- Using coffee to dye hair brown
এক কাপ গাঢ় কফি তৈরি করুন (তবে, ইনস্ট্যান্ট কফির চেয়ে, গ্রাউন্ড কফি অনেক ভালো)। কপি ঠান্ডা হয়ে গেলে এর সঙ্গে ১/২ টেবিল চামচ কন্ডিশনার অথবা হেয়ার মাস্ক মেশান। এবার মিশ্রণটি চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ১ ঘণ্টা মত রাখার পর, হালকা ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
চুল প্রাকৃতিক লালচে হাইলাইট আনতে – বিটরুট- To bring natural reddish highlights to hair – Beetroot
"বিটরুট প্রাকৃতিকভাবে চুলকে লালচে হাইলাইট ভাব যোগ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের চুলের কালার হালকা বাদামি বা লালচে, তাদের জন্য বিটরুট খুবই কার্যকর একটি প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলে নরম এবং উজ্জ্বল লালচে আভা এনে দেয়।"
চুল লালচে কালার করতে বিটরুট ব্যবহার- Using beetroot to dye hair red
একটি বিট প্রথমে সেদ্ধ করে তার রস বের করুন এবং এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর হালকা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি যেমন চুলে লালচে ভাব এনে দেয়, তেমনি প্রাকৃতিক সফটনেসও বজায় রাখে।
চুল কালো গাঢ় বাদামি রঙের জন্য – চা পাতা- For dark brown hair color – tea leaves
প্রাকৃতিকভাবে চুলেকে কালো ও গাঢ় বাদামি শেড আনতে সাহায্য করে চা পাতার লিকার। সাদা চুল ঢাকতে প্রাকৃতিক এই উপাদানটি দারুণ কার্যকর ও নিরাপদ একটি উপায়। কারণ, এতে চুলের কোন ক্ষতি এমনকি অ্যালারজিরও কোন সমস্যা হয় না।
চুল কালো গাঢ় বাদামি করতে চা পাতা ব্যবহার- Using tea leaves to turn hair black to dark brown
আরো পড়ুনঃ পিগমেন্টেশন দূর করার কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
প্রথমে ২ কাপ পানিতে ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ চা পাতা ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিব এবং এটি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০/৪০ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি ব্যবহারে কেবল চুলের রঙ কালো গাঢ় বাদামি করে না, বরং চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
সেগুনপাতা / কারি পাতার রস – কালো চুলের জন্য কার্যকর- Teak leaf / curry leaf juice – effective for black hair
কারি পাতা বা সেগুনপাতা প্রাকৃতিকভাবে চুলের কালো রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, যাদের চুল ধূসর বা ধুসের হতে শুরু করেছে, তাদের জন্য সেগুনপাতা/ কারি পাতার রস খুবই উপকারী একটি ঘরোয়া উপাদান।
সেগুনপাতা/ কারি পাতার রসের ব্যবহার- Uses of teak leaf/curry leaf juice
কারি পাতা বা সেগুনপাতা প্রথমে সেদ্ধ করে পেস্ট বানান এবং এরসঙ্গে পরিমাণপমত নারকেল তেল মিশিয়ে গরম করুন। এরপর ঠাণ্ডা হলে মিশ্রণটি মাথার স্ক্যাল্প ও চুলে ম্যাসাজ করে ১ ঘণ্টা রাখার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে যেমন কালো করতে সাহায্য করে তেমনইভাবে চুল দ্রুত পাকা প্রতিরোধ করে।
চুল কালারের ক্ষেত্রে সতর্কতা- Precautions when coloring hair
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালার করা যেমন সহজ তেমনি এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে, এই ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন-
- প্রথমবার ব্যবহারে হালকা রঙ আসতে পারে, নিয়মিত ব্যবহারে রঙ গাঢ় হবে।
- যেকোনো প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহারের আগে স্কিন প্যাচ টেস্ট করে নিন।
- রঙ স্থায়ী রাখতে সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
চুল পাকার কারণ কি কি?- What are the causes of graying hair?
চুল পাকার অনেক কারণ রয়েছে, এবং এটি বয়স, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। তবে, নিচে চুল পাকার প্রধান কয়েকটি কারণ দেওয়া হলো-
** বয়স বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে থাকা মেলানিন নামক রঞ্জকের উৎপাদন অনেক কমে যায়, ফলে চুল ধূসর বা সাদা হয়ে যেতে থাকে। এটি স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি অংশ।
** বংশগত প্রভাব- যদি আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের অল্প বয়সে চুল পাকতে শুরু করে, তাহলে আপনার ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা থাকে। কারণ, জেনেটিক ফ্যাক্টর চুল পাকার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
** অতিরিক্ত মানসিক চাপ- দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা চুল পাকার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কারণ, স্ট্রেস শরীরের হরমোনের ভারসাম্যকে নষ্ট করে এবং চুলের কোষে ক্ষতি করে।
** অপুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতি- বিশেষ করে নিচের ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে চুল পেকে যেতে পারে। যেমন-
- ভিটামিন বি১২।
- ভিটামিন ডি, ই ও বি৫।
- আয়রন ও কপার। এবং
- জিঙ্ক।
** হরমোনজনিত সমস্যা- থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারণে (হাইপো থাইরয়েডিজম বা হাইপার থাইরয়েডিজম) চুল পাকাতে পারে।
** ধূমপান- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধূমপান করলে চুল দ্রুত পেকে যায়। কারণ এতে চুলের কোষ অক্সি-ডেটিভ স্ট্রেসে পড়ে এবং রং হারায়।
** অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার- বাজারের কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার ডাই, হেয়ার স্প্রে, রিবন্ডিং, ব্লিচিং ইত্যাদি চুলের প্রকৃত রঙের কোষকে নষ্ট করে দেয়। এতে সময়ের আগেই চুল পাকা শুরু করে।
** অটোইমিউন ডিজঅর্ডার- কিছু অটোইমিউন রোগ রয়েছে যেমন, ভিটিলিগো, অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা ইত্যাদির ফলে চুল তার রঙ হারাতে পারে।
** সূর্যের অতিরিক্ত প্রভাব- দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলোয় থাকার কারণে ইউভি রে চুলের প্রাকৃতিক রঙের কোষ (মেলানোসাইট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে চুল পেকে যায়।
** ঘুমের অভাব ও অনিয়মিত জীবনধারা- অপর্যাপ্ত ঘুম, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, কাজের অতিরিক্ত চাপ ইত্যাদি কারণেও চুল সময়ের আগেই পেকে যেতে পারে।
ঘরোয়া উপাদানে চুল কালারের উপায়- শেষকথাঃ Ways to color hair with household ingredients - Final thoughts:
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে চুলে কালার করা মানে কেবল রঙ করা নয়, বরং চুলের স্বাস্থ্যও বজায় রাখা। হেনা, কফি, বিটরুট,চা, কারি পাতার মতো উপাদানগুলো দিয়ে আপনি খুব সহজেই ঘরে বসে ঝুঁকিমুক্তভাবে চুলে রঙ আনতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ গরমকালে ত্বক ফ্রেশ রাখার ঘরোয়া টিপস
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে ও উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ুন এবং ফলো দিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
কেমিকেল থেকে দূরে থাকুন, প্রকৃতির ছোঁয়ায় চুল রাখুন সুন্দর ও প্রাণবন্ত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url