ফেসিয়াল করার সঠিক নিয়ম - ঘরে বসে ফেসিয়াল করার Step by Step গাইড
আরো পড়ুনঃ পিগমেন্টেশন দূর করার কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
"ফেসিয়াল করার সঠিক নিয়ম" হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাগণ, আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা ঘরে বসে ফেসিয়াল করার Step by Step গাইড লাইন জানার জন্য গুগলে সার্চ করেন। আপনিও কি জনতে চান, ঘরে বসে পার্লারের মতো ফেসিয়াল করার নিয়ম?
তাহলে, আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন, তবে জেনে নিন ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে আপনি খুব সহজে, নিরাপদে ও বাজেট-বান্ধব উপায়ে ফেসিয়াল করতে পারেন। এর জন্য শুধু কয়েকটি সাধারণ উপকরণ ও ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি পেতে পারেন উজ্জ্বল, কোমল ও স্বাস্থ্যবান ত্বক।
ঘরে বসে ফেসিয়াল করার নিয়ম – ক্লিনজিং, স্ক্রাব, স্টিম ও মাস্ক দিয়ে ধাপে ধাপে ২০২৫- How to do a facial at home – step by step with cleansing, scrub, steam and mask 2025
পার্লারে না গিয়ে, ঘরে বসে কিভাবে নিজে ফেসিয়াল করবেন? এটি স্টেপ বাই স্টেপ গাইডের মধ্যে রয়েছে, ক্লিনজিং, স্ক্রাব, স্টিম, মাস্ক, টোনার ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে, নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন, আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন উপায়টি উপযুক্ত।
কেন নিয়মিত ফেসিয়াল করা জরুরি?- Why is it important to get a regular facial?
ফেসিয়াল কেবল মুখ পরিষ্কার করে তা কিন্তু নয়, বরং এটি হলো আপনার ত্বককে সুস্থ্য, সতেজ, ময়েশ্চারাইজ এবং স্বাস্থ্যকর রাখার অন্যতম একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। তাছাড়া, নিয়মিত ফেসিয়াল করলে-
- মৃত কোষ দূর হয়।
- ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমে।
- ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ে।
- বয়সের ছাপ কমে।
- ত্বক হয় কোমল ও উজ্জ্বল হয় ইত্যাদি।
ঘরে বসে ফেসিয়াল করতে যে উপকরণ প্রয়োজন- Materials needed to do a facial at home
ফেসিয়াল করতে কি উপকরণ প্রয়োজন তা, নির্ভর করে আপনার ফেসিয়ালের ধরণের উপর। নিচে কয়েক ধরণের ফেসিয়াল ও এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চলুন দেখি-
- স্ক্রাব- বেসন, চিনি, ও মধু।
- টোনার- গোলাপজল বা শসার রস।
- স্টিম নেয়ার জন্য- গরম পানি ও তোয়ালে।
- ময়েশ্চারাইজার- এলোভেরা জেল বা হালকা ক্রিম।
- মাইল্ড ক্লিনজার- ফেসওয়াশ/দুধ/হানি বেসড ক্লিনজার।
- ফেস মাস্ক- মুলতানি মাটি, দই, মধু, টমেটো, আলু ইত্যাদি।
ঘরে বসে ফেসিয়াল করার গাইড লাইন- Guidelines for doing facials at home
Step 1- ক্লিনজিং – মুখ পরিষ্কারের প্রথম ধাপ- Cleansing – the first step in facial cleansing
ক্লিনজিং কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?- Why is cleansing so important?
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবন শেষে আমাদের ত্বকে জমে যায় ধুলোবালি, মেকআপ, তেল ও দূষণ, যা আমাদের ত্বকের লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয় এবং এতে ব্রণ সৃষ্টি করে। তাই, ত্বকের যত্নের প্রথম ধাপ হিসেবে ত্বককে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করা জরুরি।
ক্লিনজিং কীভাবে করবেন?- How to do cleansing?
- মুখ ধোয়ার আগে নিজের হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- ক্লিনজার দিয়ে পুরো মুখে হালকা ম্যাসাজ করুন ১ থেকে২ মিনিট।
- এবার হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে মধু ও দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
Step 2- স্ক্রাবিং – মৃত কোষ দূর করার ধাপ- Scrubbing – the step to remove dead cells
কেন স্ক্রাব করা জরুরি?- Why is scrubbing important?
আমাদের ত্বকে প্রতিদিন জন্ম নেয় প্রচুর মৃত কোষ, যার ফলে ত্বককে করে তোলে রুক্ষ ও নিস্তেজ। তাই, সঠিকভাবে স্ক্রাবিং করলে এই কোষগুলোকে দূর করে পাশাপাশি ত্বককে করে পুনরুজ্জীবিত।
কিভাবে স্কাব করবেন?- How to scrub?
ঘরোয়া উপায়ে স্ক্রাব বানাতে ১ টেবিল চামচ করে চিনি ও মধুর সঙ্গে কয়ে ফোঁটা লেবুর রস মেশিয়ে নিন। এবার স্ক্রাবটি মুখে আলতো করে ৩ থেকে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন, এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
স্ক্রাব প্রতি সপ্তাহে ২ বার করলেই যথেষ্ট। কারণ, অতিরিক্ত করলে ত্বক হয়ে যেতে পারে শুষ্ক।
Step 3- স্টিম – ত্বকের লোমকূপ খুলে ফেলার ধাপ- Steam – Steps to open skin pores
কেন স্টিম নেয়া দরকার?- Why is it necessary to take steam?
স্টিম নেওয়ার ফলে আমাদের ত্বকে থাকা লোমকূপ খুলে যায়, যার ফলে ব্ল্যাকহেডস ও ধুলাবালিগুলো খুব সহজে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এতে ত্বকে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত।
আরো পড়ুনঃ গরমকালে ত্বক ফ্রেশ রাখার ঘরোয়া টিপস
কিভাবে স্টিম করবেন?- How to steam?
একটি পরিস্কার বাটিতে পরিমাণ মতো গরম পানি নিন। এবার একটি বড় তোয়ালে দিয়ে মাথাকে ঢেকে ৫ থেকে ৭ মিনিটের মত সময় মুখে স্টিম নিন। তবে, আপনি চাইলে, পানিতে ১ ফোঁটা লেবু রস বা টি ট্রি অয়েল যোগ করতে পারেন।
তবে, স্মরণ রাখবেন যাদের অ্যালার্জি বা অতিরিক্ত সেনসিটিভ স্কিন, তাদের স্টিম নেওয়ার সময় সতর্ক থাকা জরুরি।
Step 4- ফেস মাস্ক – ত্বকের যত্নের মূল ধাপ- Face Mask – The Key Step in Skin Care
কেন মাস্ক ব্যবহার করা হয়?- Why are masks used?
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেস মাস্ক করলে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। যেমন, ব্রণ, রুক্ষতা, পিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া কালো দাগ ইত্যাদি। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল, মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
তবে, আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে যে, ত্বকের ধরন অনুযায়ী মাস্ক বাছাই করতে হবে। চলুন আমরা নিচে দেখে নেই কোন ধরণের ত্বকের জন্য কোন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
** তৈলাক্ত ত্বকের জন্য- মুলতানি মাটি ও গোলাপজল, কারণ এই উপাদানগুলো ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্রণের প্রবণতা কমায়।
** শুষ্ক ত্বকের জন্য- টক দই, মধু ও কলা কারণ, প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলো ত্বককে হাইড্রেট করে এবং কোমলতা এনে দেয়।
** সংবেদনশীল ত্বকের জন্য- শসার রস ও জেলাটিন ফ্রি এলোভেরা জেল, কারণ এই উপাদানগুলো ত্বক ঠান্ডা রাখে ও ত্বকের লালচে ভাব দূর করে।
** যেভাবে হ্যবহার করবেন- মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফেসিয়াল করার সময় হিমশীতল তুলা দিয়ে বানানো বল দিয়ে, আপনার চোখ ঢেকে রাখতে পারেন বিশ্রামের জন্য।
Step 5- টোনিং – লোমকূপ বন্ধ করার ধাপ- Toning – Steps to Close Hair Pores
টোনার ব্যবহার করা জরুরি কেন?- Why is it important to use toner?
ফেসিয়াল করার সময় স্টিম নেয়ার কারণে ত্বকের লোমকূপগুলো খুলে যায়। আর টোনার এই লোমকূপগুলোকে সংকুচিত করে, যা ব্রণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।
কিভাবে ঘরোয়া টোনার তৈরি করবেন?- How to make homemade toner?
- গোলাপজল।
- শসার রস।
- গ্রিন টি
উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে তা মুখে ব্যবহার করুন এবং একটি তুলার বল দিয়ে মুখে মুছুন।
আপনি চাইলে এটি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভালো কাজ করে।
Step 6- ময়েশ্চারাইজিং – ত্বককে কোমল রাখার ধাপ- Moisturizing – Steps to keep skin soft
ময়েশ্চারাইজার কেন ব্যবহার করবেন?- Why use moisturizer?
ফেসিয়াল করলে ত্বক অনেক সময় কিছুটা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই, একটি হালকা, নন-কমেডো জেনিক ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক দীর্ঘসময় ধরে হাইড্রেটেড থাকবে।
কীভাবে করবেন?- How to do?
এলোভেরা জেল বা অন্য যে কোনো হালকা ক্রিম নিয়ে মুখে আলতোভাবে ম্যাসাজের মাধ্যমে ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে গলার দিকেও লাগাতে পারেন, এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
আপনি যদি রাতের বেলায় ফেসিয়াল করেন, তাহলে পরবর্তী ৬/৮ ঘণ্টা সূর্য রশ্মি এড়াতে পারবেন, যা ফেসিয়ালের খেত্রে অনেক ভালো।
কতদিন পর পর ফেসিয়াল করা উচিত?- How often should you get a facial?
কতদিন পর পর ফেসিয়াল করবেন, তা নির্ভর করে আপনার ত্বকের ধরণের উপর। নিচে ত্বকের ধরণ অনুযায়ী কতদিন পর পর ফেসিয়াল করা উচিৎ তা দেখুন।
- স্বাভাবিক ত্বক- মাসে ১ বার।
- তৈলাক্ত ত্বক- প্রতিমাসে ৩ বার।
- শুষ্ক/সংবেদনশীল ত্বক: প্রতিমাসে ২বার।
ফেসিয়াল করার ক্ষেত্রে সতর্কতা- Precautions when doing facials
ফেসিয়াল করলে যদিও, ত্বকের অনেক উপকার হয়। তবে, এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েটি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন-
- অতিরিক্ত ঘষাঘষি বা গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
- ত্বকে ফুসকুড়ি বা ইনফেকশন থাকলে ফেসিয়াল না করাই ভালো।
- ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট (Patch Test) করা ভালো।
উপসংহার- ঘরে বসে নিয়মিত ফেসিয়াল করুন, ত্বক রাখুন প্রাণবন্ত- Do regular facials at home to keep your skin vibrant.
আজকাল নানান ব্যস্ততার মাঝে পার্লারে যাওয়া সবসময় সম্ভব হয়ে উঠেনে। তাই, ঘরোয়া উপায়ে সহজলোভ্য প্রাকৃতিক উপাদানে ফেসিয়াল করে, আপনি নিজে নিজেই হয়ে উঠুন নিজের স্কিন কেয়ার এক্সপার্ট।
এরজন্য আপনাকে শুধুমাত্র কয়েকটি নিয়ম নুসরণ করে ক্লিনজিং, স্ক্রাব, স্টিম, মাস্ক, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেই আপনি আপনার ত্বককে করতে পারেন হাস্যজ্জ্বল, ফ্রেশ ও স্বাস্থ্যবান।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় কাচা হলুদের ১০টি উপকারী ফেস প্যাক।
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিত ও পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করুন, তারাও যেন উপকৃত হন। এ ধরণের আরো তথ্য জানার জন্য আমাদের পেজকে ফলো করুন এবং সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url