সূরা আল-মূলকের গুরুত্ব ও ফজিলত । সূরা আল- মূলক আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি- আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত
সূরা আল-মূলক মহা পবিত্র আল কুরআনুল কারিমের ৬৭তম সূরা। এটি পবিত্র ভূমি মক্কায় অবর্তীণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৩০টি এবং রুকু সংখ্যা ২টি। সূরা আল-মূলক পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত পরিসীম।
সূরা আল-মূলকের গুরুত্ব ও ফজিলত
সূরাটি যারা তেলাওয়াত করবে, তাদের ক্ষমা না করা পর্যন্ত এই সূরা সুপারিশ করত থাকবে। এ বিষয়ে রাসূলে পাক (স.) বলেন, মুক্তির পথ দেখানোর জন্য কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন সূরা ও আয়াত সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেছেন। যাতে করে মানুষ গোনাহ থেকে মুক্তি পায়।
সূরা আল- মূলক সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে - হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তুমি নিজে সূরা মূলক পড় এবং পরিবারের সবাইকে এমনকি প্রতিবেশীকে এটি শিক্ষা দাও। কারণ, এটি মুক্তিদানকারী ও ঝগড়াকারী।
কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে ঝগড়া করে উহার পাঠকারীকে সে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবে এবং কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমার একান্ত কামনা যে, এই সূরাটি আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে গেঁথে থাকুক।’ (ইবনে কাসির)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুরআন মাজিদে ৩০টি (ত্রিশ) আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ পর্যন্ত, তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। আর সূরাটি হলো تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ অর্থাৎ সূরা মূলক।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার মন চায় প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে যেন সূরা মূলক মুখস্ত থাকে।’ (বাইহাকি)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, ‘তোমরা সূরা মূলক শিখে নাও এবং নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও। এটা কবরের আজাব হতে তোমাদের রক্ষা করবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে এই সূরা পাঠকারীর পক্ষে কথা বলে তাকে মুক্ত করবে।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সূরা মূলক তেলাওয়াতের আমল করবে, সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)
সূরা আল- মূলক আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
সূরা আল- মূলক আরবী আয়াত
(১) تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(২) الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
(৩) الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ مَّا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَـٰنِ مِن تَفَاوُتٍ ۖ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍ
(৪) ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ
(৫) وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
(৬) وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
(৭) إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ
(৮) تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ ۖ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ
(৯) قَالُوا بَلَىٰ قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ
(১০) وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ
(১১) فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ
(১২) إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
(১৩) وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ ۖ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
(১৪) أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
(১৫) هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ ۖ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
(১৬) أَأَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ
(১৭) أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
(১৮) وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ
(১৯) أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ ۚ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَـٰنُ ۚ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ
(২০) أَمَّنْ هَـٰذَا الَّذِي هُوَ جُندٌ لَّكُمْ يَنصُرُكُم مِّن دُونِ الرَّحْمَـٰنِ ۚ إِنِ الْكَافِرُونَ إِلَّا فِي غُرُورٍ
(২১) أَمَّنْ هَـٰذَا الَّذِي يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ ۚ بَل لَّجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ
(২২) أَفَمَن يَمْشِي مُكِبًّا عَلَىٰ وَجْهِهِ أَهْدَىٰ أَمَّن يَمْشِي سَوِيًّا عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
(২৩) قُلْ هُوَ الَّذِي أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۖ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
(২৪) قُلْ هُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
(২৫) وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
(২৬) قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِندَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
(২৭) فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيئَتْ وُجُوهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَقِيلَ هَـٰذَا الَّذِي كُنتُم بِهِ تَدَّعُونَ
(২৮) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللَّهُ وَمَن مَّعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَن يُجِيرُ الْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
(২৯) قُلْ هُوَ الرَّحْمَـٰنُ آمَنَّا بِهِ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
(৩০) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاءٍ مَّعِينٍ
সূরা আল- মূলক বাংলা উচ্চারণ
১. তাবা-রা-কাল্লাজি বিয়া-দিহিল মূলকু ওয়া-হুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদির।
২. আল্লাজি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়া-তা লি-ইয়াব-লু-ওয়াকুম আই-য়ুকুম আহছানু‘ আমালা- ওয়া হুওয়াল ‘আজিজুল গাফুর।
৩. আল্লাজি খালাকা ছাব‘আ ছামা-ওয়া-তিন তিবা-কা মা- তারা- ফি খালকির রাহমা-নি মিন তাফা-উত ফারজি‘ইল বাসারা হাল তারা- মিন ফুতুর।
৪. ছুম্মার জি’ইলবাসা-রা কাররা-তাইনি ইয়ান-কালিব ইলাই-কাল বাসারু খা-ছিআওঁ ওয়া হুয়া হাসির।
৫. ওয়া লাকাদ জাইয়ান্নাছ সামাআদ্দুনইয়া- বিমাসা-বিহা ওয়াযা’আলনা- হা- রুজুমাল লিশ-শায়াতিনি ওয়া আ’তাদনা- লাহুম ‘আযা- বাছছা’ঈর।
৬. ওয়া লিল্লা-জিনা কাফারু-বিরাব্বিহিম ‘আযা- বু-যাহান্নাম, ওয়া-বি’ছাল মাসির।
৭. ইজা-উলকু-ফিহা- ছামি’উ লাহা- শাহি-কাওঁ ওয়াহিয়া তাফুর।
৮. তাকা- দু-তামাই-য়াজু-মিনাল গাইজ, কুল্লামা-উলকিয়া ফিহা- ফাওজুন ছাআলাহুম খাজানাতুহা-আলাম ইয়া’তিকুম নাজির।
৯. কা-লু-বালা- কাদ যাআনা- নাজিরুন ফাকাজ-যাবনা- ওয়া কুলনা- মানাজযালাল্লা- হু মিন শাইয়িন ইন আনতুম ইল্লা- ফি দালা- লিন কাবির।
১০. ওয়া-কা-লু-লাও কুন্না- নাছমা’উ আও না’কিলুমা- কুন্না-ফি-আসহা-বিছছা’ঈর।
১১. ফা’তারাফু-বিজাম-বিহিম ফাছুহ-ক্বললিআসহা-বিছ ছা’ঈর।
১২. ইন্নাল্লাজিনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আজরুন কাবির।
১৩. ওয়া আছিররু-কাওলাকুম আবিজ-হারুবিহি ইন্নাহু’আলিমুম বিজা- তিসসুদুর।
১৪. আলা- ইয়া’লামু-মান খালাক, ওয়া হুওয়াল্লাতিফুল খাবির।
১৫. হুওয়াল্লাজি যা’আলা লাকুমুল আরদা যালুলান ফামশু-ফি মানা-কিবিহা- ওয়া কুলু-মির রিজকিহি ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
১৬. আ-আমিনতুম মান ফিছছামাই আইঁ ইয়াখ-ছিফা বিকুমুল আরদা ফাইযা- হিয়া তামুর।
১৭. আম আমিন-তুম মান ফিছছামাই আইঁ ইউরছিলা ‘আলাইকুম হা-সিবান ফাছা-তা’লামুনা কাইফা নাজির।
১৮. ওয়া লাকাদ কাজ-যাবাল্লাজিনা মিন কাবলিহিম ফাকাইফা কা-না নাকির।
১৯. আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত্তাইরি ফাওকাহুম সাফফা-তিওঁ ওয়াইয়াকবিদন । মাইউমছিকুহুন্না ইল্লার-রাহমা-নু ইন্নাহুবিকুল্লি শাইয়িম বাসির।
২০. আম্মান হা-যাল্লাজি হুওয়া জুনদুল্লাকুম ইয়ানসুরুকুম মিন দু নির-রাহমা-নি ইনিল কাফিরুনা ইল্লা- ফি গুরুর।
২১. আম্মান হা-যাল্লাজি ইয়ার-জুকুকুম ইন আমছাকা রিজকাহু বাল্লাজজুফি ‘উতুওবিওয়া নুফুর।
২২. আ-ফা-মাইঁ ইয়ামশি মুকিব্বান ‘আলা- ওয়াজহিহি আহদা আম্মাইঁ ইয়ামশি ছাবি ইয়ান ‘আলা-সিরা-তিমমুছতাকিম।
২৩. কুল হুওয়াল্লাজি-আনশাআকুম ওয়া যা‘আলা লাকুমুছ-ছাম‘আ ওয়াল আবসা-রা ওয়াল আফইদা কালিলাম মা-তাশকুরুন।
২৪. কুল হুওয়াল্লা-জি যারাআকুম ফিল আরদি-ওয়া ইলাইহি তুহশারুন।
২৫. ওয়া-ইয়া-কুলুনা মাতা-হা-যাল ওয়া’দু-ইন কুনতুম সা-দিকিন।
২৬. কুল ইন্নামাল ‘ইলমু’-ইনদাল্লা- হি ওয়া-ইন্নামা-আনা নাজিরুম মুবিন।
২৭. ফালাম্মা-রা-আওহু ঝুলফাতান সিআত ঊজু-হুল্লাজিনা কাফারু-ওয়া কিলা হা-যাল্লাজি কুনতুম বিহি তাদ্দা’ঊন।
২৮. কুল আরা-আইতুম ইন আহলাকা-নিয়াল্লা-হু ওয়া মাম্মা‘ইয়া আও রাহিমানা- ফামাইঁ ইউজিরুল কা-ফিরিনা মিন ‘আযা-বিন আলিম।
২৯. কুল হুওয়ার-রাহমা-নু-আ-মান্না-বিহি ওয়া’আলাইহি তাওয়াক্কালনা-, ফাছাতা’লামুনা মান হুওয়া ফি দালা-লিম মুবিন।
৩০. কুল আরা-আইতুম ইন আসবাহা মাউকুম গাওরান ফামাইঁ ইয়া’তিকুম বিমাইম মা’ঈন। (মাখরাজসহ উচ্চারণ শিখে নেওয়া জরুরি)।
সূরা আল- মূলক বাংলা অর্থ
১. বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত। আর তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।
২. যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরিক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালি, অতিশয় ক্ষমাশীল।
৩. যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?
৪. অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
৫. আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আজাব।
৬. আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে যাহান্নামের আজাব। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল!
৭. যখন তাদের তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে।
৮. ক্রোধে তা ছিন্ন ভিন্ন হওয়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরিরা তাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারি আসেনি’?
৯. তারা বলবে, ‘হ্যা, আমাদের নিকট সতর্ককারি এসেছিল। তখন আমরা (তাদের) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাজিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ’।
১০. আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের মধ্যে থাকতাম না’।
১১. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব, ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের জন্য।
১২. নিশ্চয়ই যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।
১৩. আর তোমরা তোমাদের কথা গোপন করো অথবা তা প্রকাশ করো, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
আরো পড়ুনঃ ইসলামের ছয়টি কলেমা — আরবি, উচ্চারণ, অর্থ ও গুরুত্ব
১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি যানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।
১৫. তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।
১৬. যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেওয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আকস্মিকভাবে তা থর থর করে কাঁপতে থাকবে।
১৭. যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের ওপর পাথর নিক্ষেপকারি ঝোড়ো হাওয়া পাঠানো থেকে তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ, তখন তোমরা যানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী?
১৮. আর অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল। ফলে কেমন ছিল আমার প্রত্যাখ্যান (এর শাস্তি)?
১৯. তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদের স্থির রাখে না। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
২০. পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোনো সৈন্য আছে, যারা তোমাদের সাহায্য করবে? কাফিররা শুধু তো ধোঁকায় নিপতিত।
২১. অথবা এমন কে আছে, যে তোমাদের রিজিক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অহমিকা ও অনীহায় নিমজ্জিত হয়ে আছে।
২২. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখের ওপর ভর দিয়ে চলে সে কি অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত না কি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে?
২৩. বলো, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমুহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই শোকর করো’।
২৪. বলো, ‘তিনিই তোমাদের জমিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে’।
২৫. আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
২৬. বলো, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
২৭. অতঃপর তারা যখন তা আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং বলা হবে, ‘এটাই হলো তা, যা তোমরা দাবি করছিলে’।
২৮. বলো, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি’? যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গে যারা আছে, তাদের ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফিরদের যন্ত্রণাদায়ক থেকে কে রক্ষা করবে’?
২৯. বলো, ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ইমান এনেছি এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই যানতে পারবে কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’?
৩০. বলো, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কী, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদের বহমান পানি এনে দিবে’?
সূরা আল- মূলক পাঠের সময়
কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। কারণ, পাক-পবিত্র থাকা অবস্থায় যে কোন সময় কোরআন তেলাওয়াত করা যায়। তবে, আল্লাহ তা'য়ালা বিশেষ কিছু মূহুর্তের কথা উল্লেখ করেছেন, যে সময়গুলোতে আমল করা বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
তেমনিভাবে সূরা আল- মূলক রাতের বেলা পড়া উত্তম। তবে, অন্য যে কোনো সময়ও পড়া যাবে। সূরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অনন্য তাৎপর্য। সুরাটি নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়।
** হাদিসে শরীফে এসেছে - রাসুলুল্লাহ (সা.) সূরা মূলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)
** হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’
** সূরা মূলক ৪১ বার (একচল্লিশ) তেলাওয়াত করলে সব বিপদ-আপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধ হয়। এ সূরা নিয়মিত পাঠে কবরের আজাব থেকেও বাঁচা যায়।
এক নজরে সূরা আল- মূলক আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
শেষকথা- কবরের আজাব থেকে রক্ষা পেতে সূরা আল- মূলক
সূরা আল- মূলক পাঠের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতের মধ্যে অন্যতম হলো কবরের আজাব থেকে রক্ষা। তাই, আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে সূরা মুলকের আমল নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন এবং হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুনঃ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার – সর্বোত্তম ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া, ফজিলত, আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ
আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিবার ও পরিচিতদের শেয়ার করুন, তারাও যেন উপকৃত হনে। আরো এমন ইসলামিক আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের সঙ্গে থাকুন, সবাইকে ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url