বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কোরয়ানের ৫টি দোয়া – নিশ্চিত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি আসবে
আরো পড়ুনঃ নামাজ না পড়ার শাস্তি কি?। কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ
মানব জীবনে কখন, কিভাবে, কোথা থেকে বিপদ আসে এটি কেউ বলতে পারে না। তাই, দুঃসময়, কষ্ট, ভয় ও অনিশ্চয়তা এগুলো মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। তবে, একজন মুমিন বান্দা সব সময় জানেন, আল্লাহই হলো একমাত্র ভরসাস্থল।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহর দেওয়া কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যেগুলো পড়লে বিপদের সময় অন্তরের শান্তি, আত্মিক শক্তি এবং নিশ্চিত সুরক্ষা এনে দেয়। আজকের লেখায় আমরা জানবো এমনি ৫টি কোরয়ানের দোয়া, যা যেকোনো বিপদে আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রাখবে।
বিপদে পড়লে এই ৫টি কোরয়ানের দোয়া পড়ুন – নিশ্চিত সুরক্ষা পাবেন
চলার পথে বিপদ ও দুঃসময়ে দোয়ার প্রয়োজনীয়তা কেন?
জীবনের যে কোনো বিপদ ও দুঃসময়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য পাওয়ার জন্য, কোরয়ানের এই ৫টি দোয়া পড়ুন। কেননা, কোরআন মজিদে বর্ণিত আছে, এই দোয়াগুলো আপনাকে যেমন মানসিক শান্তি, আত্মিক শক্তি দেবে, তেমনিভাবে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
কিন্তু, কখন, কিভাবে ও কেন এই দোয়াগুলো পড়বেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো, বিপদে পড়লে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য দোয়া করলে, কিভাবে নিশ্চিত সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই, কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি দোয়া।
বিপদ-আপদে নবী (সা.) এর শেখানো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে
- আরবী আয়াত- وَاسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلٰوةِ
- বাংলা উচ্চারণ- "ওয়াস্তাঈনূ বিছ্-ছাবরি ওয়াছ্-ছালাহ্"।
- ইংরেজি উচ্চারণ- "Wasta'eenu bissabri wassalaah".
- বাংলা অর্থ- "আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত- ৪৫)।
এই আয়াতটির মাধ্যমে আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো ধৈর্য বা সবর এবং নামাজ বা সালাত।
নবী করিম (সা.) অভ্যাস - বিপদের সময় নামাজে দাঁড়ানো
** সাহাবি হুজাইফা (রা.) বলেন, "নবী পাক (সা.) যখনি কোনো কঠিন সমস্যায় পড়তেন, তখনি তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।" (সুনান আবু দাউদ: ১৩১৯)
জীবন ও বিপদ – একটি বাস্তবতা
মানবজীবন মানেই নানান পরীক্ষা, বিপদ, আনন্দ-বেদনা এবং চ্যালেঞ্জ। কেউ অর্থনৈতিক কষ্টে, কেউবা রোগে, কেউ মানসিক চাপ কিংবা পারিবারিক অশান্তিতে বিপর্যস্ত হন। পবিত্র কোরয়ানে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمۡ بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত- ১৫৫)
এই আয়াতের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণকারীদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে, যা বিশেষ করে দুঃসময়ে পড়া এবং বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরয়ানে বিপদে দোয়ার গুরুত্ব
আল্লাহর ওয়াদা- দোয়া করলে তিনি সাড়া দেবেন
وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْۚ “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা গাফির, আয়াত নং ৬০)
নবী ও রাসূলদের দোয়া আমাদের জন্য শিক্ষা
নবী-রাসূলগণ বিপদের সময় তারা যেসব দোয়া করতেন, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক কোরয়ানে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আর এসব দোয়া আমাদের জন্য পথনির্দেশনা ও ভরসা। যা। জীবনের যে কোনো সংকটে আমাদের রক্ষা ও শান্তি দিতে পারে।
বিপদে পড়লে ৫টি কোরআনিক দোয়া ও বাংলা অর্থ
ইউনুস (আঃ)-এর দোয়া - সূরা আম্বিয়া- ৮৭
এই দোওয়াটি হলো বিপদে আত্মসমর্পণ ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া।
সূরা তাওবা- ১২৯
আরো পড়ুনঃ মাসিক অবস্থায় ইসলাম মতে নারীর করণীয় ও বর্জনীয়
এই দোওয়াটি হলো সাহস ও তাওয়াক্কুলের জন্য উপকারী দোয়া।
সূরা বাকারা- ২৫০
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ বাংলা অর্থ- “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করুন, আমাদের পা সুদৃঢ় করুন এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।”
এই দোওয়াটি হলো চ্যালেঞ্জ, যুদ্ধ বা মানসিক দ্বন্দ্বে সহায়ক।
সূরা তাহা- ২৫–২৮
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي ﴿٢٥﴾ وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي ﴿٢٦﴾ وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي ﴿٢٧﴾ يَفْقَهُوا قَوْلِي﴿٢٨﴾ বাংলা অর্থ- “হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত করুন, আমার কাজ সহজ করে দিন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন, যেন তারা আমার কথা বুঝতে পারে।”
এই দোওয়াটি হলো উদ্বেগ, পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনে উপযোগী।
সূরা আলে ইমরান- ১৭৩
কখন এবং কিভাবে দোয়াগুলো পড়বেন
দোয়া করার সময় বিনয়ী হওয়া, আল্লাহর প্রশংসা করা, দরুদ পাঠ করা এবং মনে একাগ্রতা রাখা উচিত। সাধারণত সে সময় দোয়া কবুল হয়, সেই সময় এবং দোওয়া করার সময় নিচে দেওয়া হলো-
দোয়া কবুল হওয়ার সময়
- তাহাজ্জুদের সময়।
- সালাতের পর।
- ইফতারের আগে।
- বৃষ্টির সময়।
- আজানের সময়।
- মসজিদে প্রবেশ ও বের হবার সময়।
কিভাবে দোওয়া করবেন?
- ধীরে ধীরে ও অর্থ বুঝে।
- একাগ্রতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে।
- বিশুদ্ধ নিয়তে, অন্তর দিয়ে দোয়া করা।
- প্রতিদিন ৩–৫ বার পাঠ করলে বেশি উপকার।
বাস্তব জীবনে কোরয়ানের দোয়ার প্রভাব
তাছাড়া, পবিত্র আল কোরয়ানের এই দোয়াগুলো আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে সাহস ও সান্ত্বনা দেয়। আল কোরয়ানের দোয়ার বাস্তব প্রভাবগুলো নিচে আলোচনা করা হলো। যেমন-
- ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর হয়।
- মনের শান্তি ও সাহস বৃদ্ধি পায়।
- সমস্যার আশ্চর্য সমাধান মেলে।
- ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি আসে।
- আল্লাহর উপর ঈমান আরও দৃঢ় হয়।
অতিরিক্ত আমল ও জিকির যা বিপদে সহায়ক
নিয়মিত এসব আমল করুন
- আয়াতুল কুরসি – ফজরের পর ও রাতে।
- সূরা ফালাক ও সূরা নাস – সকাল ও বিকেলে ৩ বার।
- ইসতেগফার (استغفر الله) – বেশি বেশি বলুন।
- দুরুদ শরীফ – দোয়ার আগে ও পরে পাঠ।
- সদকা (দান) – সামর্থ্য অনুযায়ী দান করুন।
উপসংহার- বিপদে ধৈর্য ও দোয়া-ই সবচেয়ে বড় ভরসা
বিপদের সময় আমাদের সকলের উচিত হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা, নামাজ পড়া এবং উপরের আলোচনা করা দোয়াগুলো পাঠ করা। আল্লাহর সাহায্য অবধারিত আসবেই। إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ বাংলা অর্থ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)
আরো পড়ুনঃ আশুরার গুরুত্ব ও মহররম মাসের তাৎপর্য – ইতিহাস, আমল ও শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
শেষ কথা
আপনি নিজে এই দোয়াগুলো মুখস্থ ও আমল করুন করুন এবং পরিবার-পরিজনদের করতে বলুন। যদি, এই লেখা আপনার উপকার করে, তাহলে অনুগ্রহ করে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন। কেননা আপনার একটি শেয়ার অন্য কারো জীবনে, বিপদে আলোর দিশা হতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url