চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কী খাবেন আর কী খাবেন না – গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য পরিপূর্ণ গাইড
মরুভূমি অঞ্চলে বিশেষ করে মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে চিয়া নামে এক ধরনের গাছ জন্মায়। আর পুদিনা পরিবারভুক্ত ছোট এই গাছের বীজ হলো চিয়া সিড।
সাদা, কালো ও বাদামি এই তিন রঙের চিয়া সিডগুলো আকারে অনেক ছোট, যা দেখতে অনেকটা তিলের মতো। তবে, পানিতে ভেজালে চিয়া সিড ফুলে উঠে এবং আকার স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিড বা চিয়া বীজ মানুষের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। অ্যাজটেক এবং মায়ান সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড প্রথমে খাবার প্রচলন ছিল বলে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। এটি মানুষের ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি রূপচর্চা করতে ব্যবহার করা হতো।
চিয়ার অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে বলে বিশ্বাস করত অ্যাজটেক ও মায়ান আদিবাসীরা। সে কারণে তাঁরা সাধারণ অসুখেও চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে। এমনকি তাঁরা চিয়া সিডকে সুপার ফুট হিসাবে বিবেচনা করত। আজকে আমরা জানবো চিয়া সিড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-
চিয়া সিডের পুষ্টি উপাদান
চিয়া সিডকে সুপারফুড নামে ডাকতে ভালোবাসেন পুষ্টিবিদরা। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।
তাছাড়া, চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ পাওয়া জায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটি সপ্তাহের সাত দিনই খাওয়া যায়।
চিয়া বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা
USDA অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড থেকে পাওয়া যায় ৪৮৬ ক্যালরি। এছাড়া, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪০৭ মিলগ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আঁশ পাওয়া যায় ৩৪ গ্রাম। এর পাশাপাশি ফসফরাস, কপার, সেলেনিয়ামের মতন ট্রেস মিনারেলেরও এক চমৎকার উৎস এই বীজ।
তাছাড়াও, এতে পাওয়া যায় ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ ভিটামিন ও মিনারেল। আমরা উপরে জেনেছি চিয়া সিডের বা বীজের পুষ্টিগুণের ব্যাপারে, এবার নিচে দেখে নেওয়া যাক এর স্বাস্থ্য উপকারিতার দিকে।
** বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর- চিয়া বীজে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসসহ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
** উন্নত করে হার্টের স্বাস্থ্য- চিয়া বীজে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, তা কমাতে সাহায্য করতে পারে কোলেস্টেরল মাত্রা, নিম্ন রক্তচাপ এবং সামগ্রিক হৃদরোগকে সমর্থন করে।
** ওজন নিয়ন্ত্রণ করে- চিয়া বীজের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী খাবারের তৃপ্তি বাড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ১৫টি প্রাকৃতিক খাবার
** হজম শক্তি বৃদ্ধি করে- চিয়া বীজে থাকা দ্রবণীয় ফাইবারটি সমর্থন করে স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র, কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে এবং নিয়মিত অন্ত্র আন্দোলন প্রচার করে।
** ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে- চিয়া বীজ শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে ভুমিকা রাখে, যা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধী ব্যক্তিদের জন্য উপকারী করে তোলে।
** হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে- চিয়া বীজ হলো ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা অবদান রাখে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর হাড় বজায় রাখতে।
** শক্তি বৃদ্ধিকে টিকসই করে- চিয়া বীজে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং পুষ্টির ধীরে ধীরে মুক্তির কারণে একটি টেকসই শক্তি বৃদ্ধি প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
** অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য- চিয়া বীজে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, যা শরীরের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
** প্রদাহ বিরোধী প্রভাব- চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পাওয়া যায়, প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে প্রচুর উপকারী।
** ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে- চিয়া বীজের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে সুস্থ ত্বক, হাইড্রেশন প্রচার এবং বার্ধক্য লক্ষণ হ্রাস করতে।
** রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে- চিয়া বীজের বিদ্যমান ফাইবার মূলত, অদ্রবনীয় খাদ্য আঁশ এবং মিউসিলেজ প্রকৃতির। এই ফাইবার রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তোলে, ফলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
** পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধি করে- চিয়া বীজের মাঝে থাকা প্রোটিন উপাদান, পেশীকে মেরামত এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, এগুলি ক্রীড়াবিদ এবং সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী করে তোলে।
** গ্লুটেন-মুক্ত বিকল্প- চিয়া বীজ প্রাকৃতিকভাবে থাকে গ্লুটেন-মুক্ত, এটি গ্লুটেন সংবেদনশীলতা বা সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি নিরাপদ এবং পুষ্টিকর বিকল্প তৈরি করে।
উপরের স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে, আপনার ডায়েটে চিয়া বীজ অন্তর্ভুক্ত করা, আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করার জন্য হতে পারে একটি সহজ এবং কার্যকর উপায়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
তাছাড়া, বেশিরভাগ পুস্টি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড এবং ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
- চিয়া সিড বেশি খেলে অনেকের পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ, চিয়া বীজের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই, অল্প পরিমাণে চিয়া খাওয়া উচিত। তাছাড়া, স্বাস্থ্য সমস্যা মনে হলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
- কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মাধ্যেম পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, চিয়া সিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই, এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
- চিয়া সিড যেহেতু দেহের শর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। তাই, অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ অধিক পরিমানে কমে যাওয়ান সম্ভাবনা থাকে।
- যাদের অজন কম, তাঁরা অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
শেষকথা- শরীর সুস্থ্য রাখতে চিয়া সিডের ভূমিকা
নিঃসন্দেহে উপকারী একট খাদ্য উপাদান চিয়া সিড। কারণ, এর পুষ্টি মান ও গুণাগুণ সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে, অবশ্যই ঢালাওভাবে গ্রহণ না করে, একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন এবং চিয়া সিড কোথা থেকে কিনছেন তাও খেয়াল করে কিনুন। কেননা, ভেজাল মিশ্রণের ফলে এই উপকারী খাবারটিও হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আরো পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার ১০টি ঘরোয়া উপায় – হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা থেকে বাঁচার উপায়
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা জেনে গেছেন, চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যা, আমরা ইতিপূর্বেই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। এরূপ আরো নতুন কোন তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url