ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ১৫টি প্রাকৃতিক খাবার

আরো পড়ুনঃ হরমোন কি? হরমোনের সমস্যা কেন হয়?। ঘরোয়া উপায়ে হরমোন সমস্যা সমাধান

"ডায়াবেটিস" একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যা বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী মানুষকে প্রভাবিত করছে। তাছাড়া, এটি একটি অন্যতম কমন রোগে পরিণত হয়েছে। যার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা, শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ।

তবে, সঠিক খাবার নির্বাচন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন কিছু প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার রয়েছে, যা আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া ১৫ খাবার- 15 homemade foods to control diabetes

বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে, এটি ধীরে ধীরে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। এই দীর্ঘমেয়াদী রোগটি কেবল বয়স্কদের নয়, বরং শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের মাঝেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

একবার কারো ডায়াবেটিস ধরা পড়লে, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো- সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা। তবে, প্রকৃতিতে এমন অনেক ধরণের খাবার রয়েছে, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

আজকের এই আরটিকেলে আমরা এমনি ১৫টি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা সম্পর্কে তুলে ধরছি, যে খাবারগুলো নিয়মিতভাবে খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে, যা ওষুধ ছাড়াই। চলুন তাহলে আমরা দেখি-

করলা – রক্তে শর্করা কমাতে সহায়ক সবজি- Bitter gourd – a vegetable that helps reduce blood sugar

করলা হলো ডায়াবেটিসের জন্য একটি অতুলনীয় প্রাকৃতিক ওষুধ। কারণ, এতে রয়েছে চ্যারান্টিন নামক এক ধরণের বিশেষ উপাদান, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন করলার রস খাওয়া বা তরকারি হিসেবে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী হতে পারে।

মেথি – প্রাকৃতিক গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী- Fenugreek – Natural Glucose Regulator

মেথির দানা থাকে ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই, এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে, সেটি সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া ভালো ফল দিতে পারে।

জাম – ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক- Jam – helps in increasing the effectiveness of insulin

জাম বা কালোজাম হলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যান্ত উপকারী ফল। কারণ, এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে, জাম ছাড়াও জামের বীজও পাউডার করে খাওয়া যেতে পারে।

দারুচিনি – ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে উপকারী- Cinnamon – Beneficial in increasing insulin sensitivity

দারুচিনি ইনসুলিনের মাত্রার সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য প্রচুর করে। তাছাড়া, এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে ধীরে বাড়তে দেয়। তাই, প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে চা বা শরবত হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

আদা – ইনফ্লামেশন ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক- Ginger – Helps in controlling inflammation and glucose

আদা প্রাকৃতিকভাবেই ইনফ্লামেশনের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে চিনির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি খাওয়ার জন্য চায়ের সঙ্গে বা রান্নায় মসল্লা হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

মেথি – প্রাকৃতিক গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী- Fenugreek – Natural Glucose Regulator

আমলকি ভিটামিন সি-এ  সমৃদ্ধ ধাকে এবং এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন উপয়াদান। এটি অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাই, প্রতিদিন আমলকি রস খাওয়া বা শুকনো আমলকি গুঁড়ো খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।

বেরি জাতীয় ফল – কম গ্লাইসেমিক সূচক যুক্ত ফল- Berries – fruits with a low glycemic index

বেরি জাতীয় ফল ফলগুলোতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং কম পরিমাণে গ্লাইসেমিক সূচক, যা রক্তের শর্করার মাত্রাকে খুব দ্রুত বাড়তে দেয় না। তাই, এই ফলগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারি।

আরো পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস- লক্ষণ, সংক্রমণ ও প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায়

ওটস – সকালের জন্য রক্ত-চিনি বন্ধুবান্ধব খাবার- Oats – Blood-sugar-friendly food for breakfast

ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-গ্লুকান নামক এক জাতীয় ফাইবার, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাতঃরাশে খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারী।

ব্রকোলি – সালফোরাফেন সমৃদ্ধ সবজি- Broccoli – a vegetable rich in sulforaphane

ব্রকোলি এক ধরণের শীতকালীন সবজি, যাতে রয়েছে সালফোরাফেন নামক যৌগ উপাদান। এই সবজিটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় সুরক্ষায় বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন কার্যকারিতাকে উন্নত করে।

অ্যাভোকাডো – স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারের উৎস- Avocado – a source of healthy fats and fiber

অ্যাভোকাডোতে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফাইবার, যা রক্তে চিনির মাত্রাকে ধীরে গতিতে বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি আমাদের দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে, অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।

বেদানা – প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল- Currants – a fruit rich in natural antioxidants

বেদানা বা ডালিম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিভিন্ন ভিটামিন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে যেমন সহায়তা করে, তেমনিভাবে ফ্রি র্যাডিক্যালকে কমিয়ে দেয়, যা অগ্ন্যাশয়ের কোষকে রক্ষা করে। তাই, নিয়মিতভাবে অল্প পরিমাণ বেদানা খাওয়া যেতে পারে।

চিয়া সিড – রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বীজ- Chia seeds – seeds that help control blood sugar

চিয়া সিড হলো ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যা হজমকে ধীর করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তাই, এটি দুধ বা দইয়ের সঙ্গে ভিজিয়ে খাওয়া যায়, বিশেষ করে সকালে।

রসুন – ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়ক উপাদান- Garlic – an ingredient that helps in insulin secretion

রসুনে অ্যালিসিন নামক বিশেষ একটি উপাদান রয়েছে, যা ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া বা রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া উপকারী হতে পারে।

শসা – কম ক্যালোরি ও হাইড্রেটিং খাবার- Cucumber – Low-calorie and hydrating food

শসা পানি যেমন পানিতে ভরপুর থাকে তেমনিভাবে ফাইবারেও ভরপুর, যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি ক্ষুধা কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক, যা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় অরি গুরুত্বপূর্ণ।

লেবু – গ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া কমায়- Lemon – reduces glycemic response

লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন "সি" ও সাইট্রিক অ্যাসিড, যা খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমাতে সাহায্য করে। এটি খাবারের পর গ্লুকোজের শোষণকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

শেষকথা- জীবনধারার অংশ হিসেবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ- Conclusion - Diabetes management as part of lifestyle

প্রাকৃতিক খাবার নিয়মিত খাওয়ার পাশাপাশি যদি, জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়, যেমন– নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। 

নতুন সংযোজিত এই উপাদানগুলো যেমন চিয়া সিড, বেদানা বা রসুন খাদ্যতালিকায় যোগ করলেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তবে যেকোনো নতুন খাবার শুরু করার আগে অবশ্যই আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার ১০টি ঘরোয়া উপায় – হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা থেকে বাঁচার উপায়

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। কারণ, তারাও যেন এর মাধ্যমে উপক্রিত হতে পারেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url