কেয়ামতের দিন মানুষের হিসাব নেওয়ার পদ্ধতি – জান্নাত ও জাহান্নামের বাস্তব চিত্র
আরো পড়ুনঃ শেষ জামানার লক্ষণ ২০২৫ – কেয়ামতের আগে যে নিদর্শনগুলো প্রকাশ পাবে
কোরয়ান ও হাদিসের আলোকে কেয়ামত, জান্নার ও জাহান্নামের বাস্তব চিত্র
কেয়ামত হবে এটি এক মহাসত্য কথা, যা বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের অন্যতম অংশ। সেইদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, পাহাড় গুঁড়িয়ে যাবে, এবং মানুষ আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তাদের নিজ নিজ আমলের বা কাজের হিসাব দেওয়ার জন্য।
এই দিনটি হবে ভয়াবহ, কিন্তু এ ভয় মানুষের আত্মশুদ্ধি ও তওবার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। চলুন আমরা জেনে নেই কোরআন ও হাদীসের আলোকে কেয়ামতের দিন হিসাব গ্রহণের পদ্ধতি এবং জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র সম্পর্কে।
কেয়ামতের দিন শুরু হবে কীভাবে?
- সূর ফুঁকবে ইস্রাফীল (আ:) – প্রথমবারে সমস্ত জীবের মৃত্যু, দ্বিতীয়বারে সবাই পুনরুত্থিত হবে।
- ময়দানে হাশর – সমগ্র মানবজাতিকে একত্র করে হাজির করা হবে। সূর্য মাথার ওপর, ঘাম মানুষকে ঢেকে ফেলবে।
- সূরা আ'বাসা ও সূরা তাকভীর- এ এই দৃশ্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
কেয়ামতে হিসাবের প্রক্রিয়া – কীভাবে আমল গণনা হবে?
আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু মানুষের হিসাব সহজ হবে, আবার কারও কারও হিসাব কঠিন হতে পারে। হিসাব গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ-
আমলনামা দেওয়া হবে –
- ভালোদের ডান হাতে।
- পাপীদের বাঁ হাতে বা পেছন থেকে।
মীযান বা পাল্লা স্থাপন করা হবে –
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমল ও নিয়তের ওজন করবেন।
- “যার নেকির পাল্লা ভারী হবে, সে সফল হবে।” (সূরা আল-ক্বারিয়া: ৬–৭)
দোজখের ওপর চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম ও তরবারির চেয়েও ধারালো একটি সেতু। ঈমান ও আমলের ওপর নির্ভর করে কেউ সোজা পার হবে, কেউ পরে যাবে।
জান্নাতের বাস্তব চিত্র – কী প্রতিদান অপেক্ষা করছে?
সেখানে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় এবং সকল প্রকার দুঃখ-বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জান্নাতের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখুন-
আরো পড়ুনঃ ইসলামে নারীর অধিকার – কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী ভুল ধারণার স্পষ্ট জবাব
- চিরস্থায়ী শান্তি ও আনন্দ।
- বাগান, নদী, ফলমূল, দুধ-মধুর ধারা।
- হুর, জান্নাতি পোশাক, সুগন্ধি ও আরামদায়ক আবাস।
- আল্লাহর দিদার – জান্নাতিদের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
জাহান্নামের বাস্তব চিত্র – কী ভয়াবহ শাস্তি?
জাহান্নাম হলো পাপীদের জন্য নির্ধারিত সেই স্থান, যেখানে বিচিত্র রকমের আজাব-গজব রয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে একে ‘নার’ অর্থাৎ আগুন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘নার’ শব্দের বহুবচন হলো আনউরুন, নিরানুন, আনইয়ারুন।
এটি এমন এক কারাগার, যার ভয়াবহতা ও কষ্ট মানুষের কল্পনারও বাইরে। যেমন
- জ্বলন্ত আগুন, ফুটন্ত পানি, কাঁটার গাছ (যাক্কুম)।
- লোহার হাতুড়ি, আগুনের পোশাক, চেহারা গলিয়ে ফেলা তেল।
- জাহান্নামের খাদ এত গভীর যে এক পাথর ৭০ বছর পড়ে তলিয়ে যায়।
কেন এই ভয় দরকার?
ভয়ের উদ্দেশ্য কখনোই মানুষকে হতাশ করার জন্য নয়, বরং তা আত্মশুদ্ধি, তওবা ও সৎপথে ফিরে আসার এক মহান আহ্বান। হাশরের ভয়, জাহান্নামের ভয় মুমিনের অন্তরে ভয় জাগায়, চোখে আনে অশ্রু, আর আমলে সৃষ্টি করে উদ্দীপনা।
এই ভয় মানুষকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে আনে, নেক আমলের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। আল্লাহর আজাবের ভয় অন্তরকে নম্র করে এবং তাওবায় উদ্বুদ্ধ করে। তাই, এ ভয় ধ্বংস নয়, বরং রক্ষা ও সফলতার পথ নির্দেশ করে।
কিয়ামতের জন্য কীভাবে প্রস্তুত হবো?
কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অর্থ হলো পার্থিব জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী পরিচালিত করা এবং পরকালের জন্য নেক আমল করা। কিয়ামতের জন্য প্রস্তুত হতে যা যা করতে পারেন-
- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করা- কিয়ামত যে হবেই, এই বিশ্বাস মনে-প্রাণে পোষণ করা এবং আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা।
- নেক আমল করা- বেশি বেশি ভালো কাজ করা, যেমন- নামাজ, রোজা, দান-সদকা, পিতা-মাতার সেবা, এবং মানুষের উপকার করা।
- খারাপ কাজ পরিহার করা- মিথ্যা বলা, গীবত করা, অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেয়া, এবং অন্যকে ঠকানো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা।
- কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করা- কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করা এবং আল্লাহর দেখানো পথে চলার চেষ্টা করা।
- আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা- সবসময় আল্লাহর কাছে কৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে আর ভুল না করার জন্য দোয়া করা।
- মৃত্যুকে স্মরণ করা- মৃত্যু যে আসবেই, এই কথা সবসময় মনে রাখা এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে সাজানো।
- পরকালের প্রস্তুতি নেয়া- দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই পরকালের জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া এবং সেখানে মুক্তির জন্য চেষ্টা করা।
শেষ কথা- কোরআন ও হাদীসের আলোকে কেয়ামতের বর্ণনা
কেয়ামতের দিন কারো পালানোর পথ থাকবে না। সেই ভয়াবহ দিনে যেন আমরা জান্নাতবাসী হতে পারি, সেজন্যই আজ থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আজ যদি আমরা নিজেকে সংশোধন না করি, তাহলে কাল হয়তো দেরি হয়ে যাবে। আসুন, হাশরের ভয়কে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ফিরে আসি।
আরো পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন – জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বরকতের উৎস
"আমাদের এই ব্লগে আমরা নিয়মিত ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করি—কোরআন ও হাদীসের আলোকে জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা, ইবাদত, আকীদা, নৈতিকতা ও সমসাময়িক প্রশ্নের ইসলামী জবাব তুলে ধরি।" তাই, আরো জনতে নিয়মিত চোখ রাখুন tiretx এ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url