ইসলামে নারীর অধিকার – কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী ভুল ধারণার স্পষ্ট জবাব

আরো পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন – জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বরকতের উৎস

ইসলাম কি নারীদের অধিকার দেয় না? ইসলামে নারীর অধিকার- কোরআন ও হাদীসের আলোকে জানুন ইসলামে নারীর প্রকৃত মর্যাদা, অধিকার এবং পশ্চিমা প্রচারিত ভুল ধারণার জবাব।

হ্যাঁ পাঠাক পাঠিকাগণ, আজকে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, নারীর পর্দা এখন কোথায় দাঁড়িয়েছে, ইসলামে নারীর অধিকার, নারীর হিজাব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। চলুন আমরা নিচে আমরা দেখি-

ইসলামে নারীর অধিকার – কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী ভুল ধারণার জবাব

আজকের এই দুনিয়ায় ইসলামের নামে চলছে, অনেক ভুল তথ্য প্রচারনা। বিশেষ করে, এটি সবচেয়ে নারীর অধিকার নিয়ে। অনেকে মনে করেন ইসলাম নারীকে অবহেলা করে, পিছিয়ে রাখে। অথচ প্রকৃত ইসলাম নারীর মর্যাদা রক্ষা করে, তার অধিকার নিশ্চিত করে। 

এই আর্টিকেলে আমরা কোরআন ও হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা জানবো – ইসলামে নারীর প্রকৃত অধিকার এবং ভুল ধারণাগুলোর আল কুরআন ও হাদিসের আলোকে স্পষ্ট জবাব।

ইসলাম নারীর মর্যাদা কোথায় দাঁড় করিয়েছে?

ইসলাম ধর্ম আগমনের পূর্বে আরব সমাজে নারীদের কোনো প্রকার মর্যাদা ছিল না। কন্যা শিশু জন্ম গ্রহন করলে সেটকে লজ্জাজনক মনে করা হতো, অনেক সময় তাদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। কিন্তু, ইসলাম এসে নারীদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

মহান আল্লাহ বলেন বলেন-

আরবি- مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

বাংলা উচ্চারণ- "মান ‘আমিলা সালিহাম মিন জাকারিন আও উন্সা ওয়া হুয়া মু'মিনুন ফালানুহ্যিয়ান্নাহু হায়া-তান তইয়্যিবাহ; ওয়া লানাজযিয়ান্নাহুম আজরাহুম বিআহসানি মা কানু ইয়ামালূন"

বাংলা অনুবাদ- "তোমাদের মধ্যে যারা পুরুষ বা নারী, আর যে ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করে তার শ্রেষ্ঠ অনুযায়ী তাদের প্রতিদান দেব।"(সূরা আন-নাহল- ৯৭)

ভুল ধারণা ১- ইসলাম নারীদের স্বাধীনতা দেয় না

বাস্তবতা হলো ইসলাম নারীদের যথাযথভাবে সম্মান এবং স্বাধীনতা দিয়েছে – যেমন-
  • নিজ নামে সম্পত্তির মালিকানা। 
  • শিক্ষা অর্জনের অধিকার।
  • নিজ সিদ্ধান্তে বিয়ে।
  • ব্যবসা পরিচালনা।

হাদীস শরীফে এসেছে-

আরবি- طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

বাংলা উচ্চারণ- "তালাবুল ইলমি ফারীজাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন" বা "তালাবুল ইলমি ফারীজাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন ওয়া মুসলিমাহ")

বাংলা অনুবাদ- “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম (নারী ও পুরুষ) এর উপর ফরজ।”(ইবনে মাজাহ)

(কিছু বর্ণনায় এসেছে, "مُسْلِمَةٍ" – অর্থাৎ মুসলিম নারী – যোগ করা হয়, তবে মূল রেওয়ায়েতে "مُسْلِمٍ" শব্দটি সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা নারী ও পুরুষ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।)

ভুল ধারণা- নারীরা শুধু গৃহবন্দী থাকার জন্য সৃষ্টি

কিন্তু বাস্তবতা হলো ইসলাম গৃহকে নারীর নিরাপদ আবাস হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, তবে এটাকে বাধ্যবাধকতা হিসেবে চাপিয়ে দেয়নি। নারী চাইলে ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদিতে অবদান রাখতে পারে।

উদাহরণ- 

হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন বিদ্যাবতী ও সমাজের উপকারে নিয়োজিত।

ভুল ধারণা ৩- নারীরা পুরুষের নিচে অবস্থান করে

বাস্তবতা বলে, ইসলামে নারী ও পুরুষকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে দেখায়, কেউ কারো প্রতিযোগী নয়।

মহান আল্লাহ পাক বলেন-

আরবিلِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوا ۖ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ ۚ

বাংলা উচ্চারণ- "লির্-রিজালি নাসীবুম মিম্মা্ ইক্তাসাবু, ওয়া লিন্নিসা-ই নাসীবুম মিম্মাকতাসাব্না"।

বাংলা অনুবাদ- “পুরুষদের যা অর্জন, তা তাদের জন্য, আর নারীদের যা অর্জন, তা তাদের জন্য।” (সূরা আন-নিসা: ৩২)

ব্যাখ্যা (সংক্ষেপে)- পবিত্র এই আয়াতটি ইসলামে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত কর্ম ও তার প্রতিফল সম্পর্কিত ন্যায়বিচারকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত হবে—লিঙ্গভেদে নয়, বরং কর্মভেদে।

ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ

ইসলাম ধর্মে নারীদের বিভিন্ন অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার তুলে ধরা হলো-

আরো পড়ুনঃ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কোরয়ানের দোয়া – নিশ্চিত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি আসবে

শিক্ষা ও জ্ঞানের অধিকার

"ইসলামে নারীদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ ফরজ। কারণ, শিক্ষা ছাড়া ধর্মীয় জ্ঞান, ইবাদত ও ইসলামিক জীবনচর্চা সম্ভব নয়।" (হাদীস: “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ” – ইবনে মাজাহ ২২৪)

সম্পত্তির অধিকার

"ইসলামে নারী উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি পায় এবং নিজের উপার্জনের পূর্ণ অধিকারও তার রয়েছে। কেউ তা হরণ করতে পারে না।" (সূরা নিসা- ৪ঃ৭, ৪ঃ ৩২)

বিবাহ ও তালাকের অধিকার

"ইসলামে নারীর সম্মতি ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়। স্বামী তালাক না দিলেও, নারী ‘খুলা’ গ্রহণের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।" )সূরা বাকারা- ২ঃ২২৯, সহীহ বুখারী ৫২৭৩)

মাতৃত্ব ও সম্মান

ইসলামে "মা" হিসেবে নারীর সম্মান অত্যন্ত উচ্চ করা হহেছে-

হাদীস শরীফে এসেছে

তোমার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?”
রাসূল (সা.) বললেন: “তোমার মা।

  • এরপর? “তোমার মা।
  • এরপর? “তোমার মা।
  • এরপর? “তোমার বাবা।
(বুখারি মুসলিম)

নারীদের হিজাব বা পর্দা – অবমাননা নয়, সম্মান

অনেকে ভুলভাবে মনে করে পর্দা নারীদের দমন করে। আসলে পর্দা তাদের মর্যাদা রক্ষা, চরিত্র সংরক্ষণ এবং সমাজের অনৈতিকতা ও নির্যাতন থেকে দূরে রাখার জন্য ইসলামের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সুরক্ষা ব্যবস্থা।

মহান আল্লাহ পাক বলেন-

আরবি- يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

বাংলা উচ্চারণ- "ইয়া আইয়ুহান্-নাবিয়্যু কুল্লি আজওয়াজিক, ওয়া বানাতিক, ওয়া নিসা’ইল মু'মিনীন—ইউদনীন আলাইহিন্না মিন জালাবীবিহিন্না; যালিকা আদনা আইউ‘রাফনা ফালা ইউ'যাইন; ওয়াকাানাল্লাহু গাফূরান রহীমা।"

বাংলা অনুবাদ- “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এটা অধিক উপযুক্ত যাতে তারা পরিচিত হয় এবং তাদেরকে কষ্ট না দেওয়া হয়। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”  (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫৯)

ব্যাখ্যা- এই আয়াতটি ইসলামে নারীদের পর্দা ও মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে, যা মূলত সুরক্ষা ও সম্মানজনক সামাজিক অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য।

ইসলাম কি নারীদের কন্ঠস্বর রোধ করে?

ইসলামে নারীদের বক্তব্য দেওয়ারও অধিকার আছে। আয়েশা (রা.) ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস বর্ণনাকারী ও ইসলামি বিদ্বান। অনেক পুরুষ সাহাবি তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন। তিনি শিক্ষাদান, ফতোয়া প্রদান ও ধর্মীয় বিতর্কে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।

ইসলাম কি কন্যা শিশুকে অবমূল্যায়ন করে?

ইসলাম কন্যা শিশুকে লালন-পালনের মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদা দেয় এবং তাদেরকে জান্নাতের সু-সংবাদও প্রদান করে, যা সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

হাদীস শরীফে এসেছে-

আরবি- مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ أَنَا وَهُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَهَاتَيْنِ، وَضَمَّ أَصَابِعَهُ

বাংলা উচ্চারণ- "মান ‘আলা জারিয়াতাইনি হত্তা তাবলুগা, জা'আ আনা ওয়া হুয়া ইয়াওমাল কিয়ামাহি কাহাতাইন।"

বাংলা অনুবাদ- “যে ব্যক্তি দুটি কন্যা শিশুর লালন-পালন করবে যতক্ষণ না তারা সাবালিকা হয়, কিয়ামতের দিন সে আমার সঙ্গে এভাবে থাকবে (তিনি তাঁর দুই আঙুল একত্র করে দেখান)।”  (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৩১):

অন্য হাদিসে এসেছে- 

যে ব্যক্তি কন্যা সন্তানদের লালন-পালন করবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যা- এই হাদীসটি প্রমাণ করে, ইসলামে কন্যা সন্তান পালন শুধু দায়িত্ব নয়, বরং জান্নাত লাভের এক মহান সুযোগ। চাইলে আরও হাদীস রেফারেন্স বা ইনফোগ্রাফিক সাহায্যেও এটি উপস্থাপন করে দিতে পারি।

শেষকথা- কোরয়ান ও হাদিসের আলোকে নারীর অধিকার

ইসলাম নারীকে অবহেলা নয়, বরং সন্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেছে। আধুনিক সমাজে ইসলামের নামে প্রচারিত ভুল ধারণাগুলোর অনেকটাই অজ্ঞতা বা প্রোপাগান্ডা থেকে উদ্ভূত। তাই, আমাদের উচিত, কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারীর অধিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং তা, সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া।

ইসলামে নারীদেরকে অবহেলিত নয়, বরং সম্মানিত করেছে। ভুল ধারণা দূর করে ইসলামের প্রকৃত বার্তা জানানোই আমাদের দায়িত্ব। আসুন, আমরা ইসলামের সঠিক জ্ঞান নিয়ে নিজেরা বুঝি ও সমাজে ছড়িয়ে দিই। আমীন।

আরো পড়ুনঃ নামাজ না পড়ার শাস্তি কি?। কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ

"আমাদের এই ব্লগে আপনি পাবেন কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইসলামি জীবনদর্শন, নারীর অধিকার, ভুল ধারণার জবাব ও দ্বীনি শিক্ষার সঠিক বার্তা। ইসলামের সৌন্দর্য ও সত্য প্রচারে এটি একটি নির্ভরযোগ্য জ্ঞানভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম।"

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url