শেষ জামানার লক্ষণ ২০২৫ – কেয়ামতের আগে যে নিদর্শনগুলো প্রকাশ পাবে – ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

আরো পড়ুনঃ ইসলামে নারীর অধিকার – কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী ভুল ধারণার স্পষ্ট জবাব

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কেয়ামতের আগে অর্থাৎ শেষ জামানায় কী কী লক্ষণ প্রকাশ পাবে? বড় ও ছোট নিদর্শন, দাজ্জালের আগমন, ইমাম মাহদির আগমনসহ বিস্তারিত জানুন কোরআন ও হাদীসের আলোকে।

শেষ জামানার লক্ষণ – কেয়ামতের পূর্বে যে নিদর্শনগুলো প্রকাশ পাবে – কোরআন ও হাদীসের আলোকে

পৃথিবীর শেষ সময়কে নিয়ে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর কিতাবে এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হাদীসে শেষ জামানার বেশ কিছু নিদর্শনের বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে কেয়ামতের আগে ছোট ও বড় বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পাবে, যা মানুষকে ঈমান ও আত্মশুদ্ধির দিকে আহ্বান করবে। 

বর্তমানে আমরা যেসকল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি, তার অনেকগুলোই শেষ জামানার নিদর্শনের সাথে মিলে যায়। তাই, আজকের আলোচনায় আমরা জানবো সেই নিদর্শনগুলো কী কী।

শেষ জামানার ছোট নিদর্শন সমূহ - Minor Signs of Qiyamah

দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, 

“কেয়ামত তখনই আসবে যখন জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে।” (সহীহ বুখারী)

আজ আমরা স্পষ্টভাবে দেখছি, মানুষ দীন সম্পর্কে উদাসীন। অনেকেই জানে না ফরজ নামাজ কয়টি, রমজান কবে শুরু, এমনকি কোরআনের মৌলিক বিষয়েও অজ্ঞ।

মসজিদ হবে সুন্দর, কিন্তু নামাজি কম

বর্তমানে আমরা অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন, অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ করতে পারছি, যা সত্যি সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, সেই তুলনায় মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের সংখ্যা ক্রমশই কমে যাচ্ছে। 

নামাজের গুরুত্ব জানার পরও অনেকেই বিভিন্ন ব্যস্ততা, উদাসীনতা বা প্রযুক্তির আসক্তির কারণে মসজিদমুখী হচ্ছেন না। এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন সচেতনতা, ইসলামী শিক্ষা ও পরিবার থেকে ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা। আল্লাহর ঘর সাজানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা জীবিত রাখা আরও জরুরি—আর সেটি হয় নামাজের মাধ্যমে।

সন্তান মায়ের উপর কর্তৃত্ব করবে

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 
“কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো, দাসী তার মনিবকে জন্ম দেবে।” (সহীহ মুসলিম)

হাদিসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এ হাদীসের অর্থ–কেয়ামতের আগে এমন সময় আসবে, যখন সন্তান তার মাকে অবজ্ঞা করবে, তার উপর কর্তৃত্ব ফলাবে। অর্থাৎ, সন্তান হবে মায়ের মনিবের মতো। এটি পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হওয়া ও নৈতিক অবক্ষয়ের একটি স্পষ্ট নিদর্শন।

গান-বাজনা ও গায়িকার আধিক্য

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, শেষ জামানায় গান-বাজনা, নৃত্য এবং প্রকাশ্য অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে। আজকের সমাজে টিকটক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সেই ভবিষ্যদ্বাণীকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের প্রসার

বর্তমান সময়ে রাস্তাঘাটে টিভি ও মোবাইলে অশ্লীলতার স্রোত বেড়েই চলেছে। মানুষ এখন এই সকল গুনাহকে গর্বের বিষয় মনে করে, লজ্জার পরিবর্তে তা প্রকাশ্যেই করে যাচ্ছে, যা সমাজের জন্য ভয়ানক বিপদ।

হারাম ব্যবসা ও সুদ ছড়িয়ে পড়বে

আধুনিক অর্থনীতি আজ অনেকটাই সুদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানুষ হালাল-হারামের বোধ হারিয়ে ফেলছে, লাভের আশায় হারাম পথকেও এখন স্বাভাবিক মনে করছে, যা ইসলামী জীবনব্যবস্থার পরিপন্থী।

বিশ্বাসঘাতকতাকে চতুরতা হিসেবে দেখা হবে

আজকের সমাজে বিশ্বাসভঙ্গ, মিথ্যাচার ও চাতুরীকে অনেকেই সফলতার চাবিকাঠি মনে করছে। ন্যায়ের পথে চলাকে দুর্বলতা ভাবা হচ্ছে, আর ধোঁকাবাজি ও প্রতারণাই যেন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

শেষ জামানার বড় নিদর্শন কী - What is the great sign of the end times?

ইমাম মাহদির আগমন

ইমাম মাহদি (আ.) হাশেমি বংশোদ্ভূত হবেন এবং তিনি অন্যায়-অবিচারের যুগে পৃথিবীতে ইনসাফ ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলিমরা তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে ও সত্যের বিজয় ঘটবে।

আরো পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন – জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বরকতের উৎস

দাজ্জালের আবির্ভাব

দাজ্জাল হলো ইতিহাসের বা শেষ জামানার সবচেয়ে ভয়ানক ফিতনা। সে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করবে, অলৌকিক শক্তি দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকায় ফেলবে। অনেকেই প্রতারিত হবে, এমনকি কিছু মুসলমানও তার অনুসরণে পড়ে যাবে।

ঈসা (আ.) এর অবতরণ

আল্লাহ দাজ্জালকে ধ্বংস করার জন্য ঈসা (আ.)-কে আকাশ থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন। তিনি মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর পৃথিবীতে ইনসাফ ও শান্তির যুগ প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষ দ্বীনের পথে ফিরে আসবে।

ইয়াজুজ-মাজুজের মুক্তি

কেয়ামতের নিকটবর্তী সময় আসলে ইয়াজুজ-মাজুজ নামের এক ভয়ঙ্কর জাতির আগমন হবে। তারা, পৃথিবীতে চরম বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংস চালাবে। মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ.)-এর দোয়া কবুল করে তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবেন।

সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে

রাসূল পাক (সাঃ) বলেছেন,

“যেদিন সূর্য পশ্চিম থেকে উঠবে, সেদিন তাওবা গ্রহণ হবে না।” (সহীহ মুসলিম)

এই নিদর্শন প্রকাশ পেলেই জানবেন—সময় ফুরিয়ে এসেছে।

ধোঁয়া (দুখান) পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করবে

কেয়ামতের পূর্বে মহান আল্লাহ পাক আকাশ থেকে বিশেষ এক ধোঁয়া পাঠাবেন, যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে দেবে। এই ধোঁয়ার কারণে বহু মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল ও কষ্টভোগী হবে, কিন্তু ঈমানদাররা এতে রক্ষা পাবে।

তিনটি বড় ভূমি ধ্বস

হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে তিনটি স্থানে বড় ভূমিধ্বস বা ধ্বস ঘটবে—একটি পূর্ব দিকে, একটি পশ্চিম দিকে এবং আরেকটি আরব উপদ্বীপে। এসব ধ্বস হবে আল্লাহর গজবের প্রতীক।

কাবা শরীফ ধ্বংস করা হবে

কেয়ামতের সময়ে একজন হাবশী ব্যক্তি কাবা শরীফ ধ্বংস করবে, যার ফলে হজ বাধাগ্রস্ত বা বন্ধ হয়ে যাবে। এটি কেয়ামতের এক বড় ও চূড়ান্ত নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম।

বর্তমান সময় ও শেষ জামানার মিল - Similarities between the present time and the end times

দীন থেকে দূরে সরে যাওয়া

আজকের সমাজে মুসলিম নামধারী বা মুসলিম হলেও অনেকেই নামাজ পড়ে না, কোরআন পড়ে না, হাদীস জানে না। এটি একটি বড় নিদর্শন।

প্রযুক্তির মাধ্যমে ফিতনা ছড়িয়ে পড়া

ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া একদিকে যেমন ভালো, কিন্তু এসবের মাধ্যমে ব্যভিচার, গিবত, মিথ্যা, ফতোয়া বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ যেন দাজ্জালের পরিবেশ প্রস্তুত হচ্ছে।

কেয়ামতের প্রস্তুতি – একজন মুমিনের করণীয় - Preparing for the Day of Judgment – What a Believer Should Do -

নামাজ ও ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া

নামাজ মুসলমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। যারা সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে, তারা আল্লাহর রক্ষা ও সফলতা পাবে।

তাওবা ও ইস্তেগফার করা

প্রতিদিন আমাদের নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত, কারণ এটি হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে।

সৎ পথে অবিচল থাকা

সর্বদা সৎ, সত্য, ইনসাফ ও ধৈর্যের সঙ্গে জীবনযাপন করাই একজন মুসলমানের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, যা তার চরিত্র ও নৈতিকতা প্রদর্শন করে এবং সমাজে শান্তি ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করে।

ফিতনার সময় ধৈর্য ধরা

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, 

“ফিতনার সময় ঘরে বসে থাকা উত্তম।” (আবু দাউদ)

শেষকথা – শেষ জামানা নিয়ে আমাদের করণীয় কী? 

শেষ জামানার নিদর্শনগুলো দেখে আমাদের কেবল অজ্ঞান থাকা luxury নয়। আমাদের সকলের উচিত সময়ের বাস্তবতা অনুধাবন করে জীবন গঠন করা। ইসলামের আলোকে চলা, নিজের ঈমান রক্ষা, পরিবারকে ধর্মের দিকে ফেরানো—এসবই আমাদের মূল কর্তব্য।

আরো পড়ুনঃ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কোরয়ানের ৫টি দোয়া – নিশ্চিত নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি আসবে

কেয়ামতের নিদর্শন আমাদের ভয় নয়, বরং ঈমান জাগ্রত করার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।

আমাদের এই ব্লগে ইসলামের গুরুত্বপূর্ন বিষয়সমূহ সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে শেষ জামানার লক্ষণ ও কেয়ামতের নিদর্শন নিয়ে তথ্যবহুল ও গভীর বিশ্লেষণ রয়েছে, যা পাঠকদের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে এবং ঈমানকে দৃঢ় করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url