বিশ্বের উন্নত দশ দেশ ২০২৫ – অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও জীবনমানের দিক থেকে সেরা দেশগুলোর তালিকা
আরো পড়ুনঃ জাপানের অধিক চাহিদা সম্পন্ন কাজ ও বেতন তালিকা ২০২৫
জানুন বিশ্বের শীর্ষ ১০ উন্নত দেশ ২০২৫ সালে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও জীবনমানের দিক থেকে কোন দেশ কতটা এগিয়ে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, কানাডা, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত দেশগুলোর তথ্য জানুন এক নজরে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যারা বর্তমান বিশ্বের দশ দেশ সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে সার্চ করেছেন, তারা সঠিক স্থানেই এসেছেন। তাই, এই প্রবন্ধটি মনোযোগের সঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বিশ্বের উন্নত দশ দেশ ২০২৫ - আপডেট তথ্য
বর্তমান তথ্য প্রজুক্তির বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, তবে এরমধ্য কিছু দেশ রয়েছে, যারা অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও নাগরিক জীবনযাত্রার মানে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। আর এই দেশগুলোকে বলা হয় উন্নত দেশ।
উন্নত দেশের মূল পরিচায়ক হলো তাদের অর্থনৈতিক স্থিতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও নাগরিক স্বাধীনতা। আজকের বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নরওয়ে — এরা শুধু শক্তিশালী অর্থনীতির অধিকারী নয়, বরং মানসম্পন্ন জীবনযাত্রার দিক থেকেও অগ্রগণ্য।
চলুন আমরা নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিই বর্তমান বিশ্বের এই উন্নত দশ দেশের বৈশিষ্ট্য, উন্নয়নের কারণ ও তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত।
শ্বের উন্নত দশ দেশ ২০২৫ – বিস্তারিত তালিকা ও বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্র (United States)
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশ। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র আজও অগ্রণী অবস্থানে। দেশটির জিডিপি এখন প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
সেখানে সিলিকন ভ্যালির মতো উদ্ভাবনের কেন্দ্র বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির দিকনির্দেশনা দেয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে হার্ভার্ড, এমআইটি ও স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে শীর্ষে। স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক স্বাধীনতা ও গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের অবদান তুলনাহীন।
পাশাপাশি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেশটিকে আরও উন্নত করেছে।
জাপান (Japan)
জাপান হলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে এসে জাপান আজ বিশ্বের অন্যতম এক উন্নত অর্থনীতির দেশ। তাদের প্রধান শক্তি হলো, উন্নত প্রযুক্তি, রোবোটিকস ও গাড়ি শিল্প।
কারণ, তাদের টয়োটা, হোন্ডা, সনি ও প্যানাসনিকের মতো ব্র্যান্ড বিশ্বজুড়ে জাপানের নাম ছড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া, শিক্ষার মান, কর্মনিষ্ঠা ও সময়ানুবর্তিতা জাপানিদের বিশেষ গুণ। দেশটিতে বেকারত্বের হার খুব কম এবং জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উন্নত।
এছাড়া, জাপান সরকার গবেষণা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে থাকে। শান্তিপূর্ণ সমাজ, নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য জাপানকে বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত উন্নত দেশ করেছে।
জার্মানি (Germany)
জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি ও শিল্পখাতে বিশ্বে অগ্রণী। দেশটি অটোমোবাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, ফক্সওয়াগন, সিমেন্সের মতো কোম্পানিগুলো জার্মানির উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রতীক।
এখানে বর্তমান শিক্ষার মান অত্যন্ত উচ্চ এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি নেই। জার্মানি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ দেশ।
সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত, এবং নাগরিকরা মানসম্মত জীবনযাপন করেন। জার্মানির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ তাকে ইউরোপের নেতৃত্বে রাখছে।
কানাডা (Canada)
কানাডা তার উন্নত জীবনযাত্রা, সামাজিক নিরাপত্তা, ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছ। দেশটির শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশ্বে অন্যতম সেরা। অর্থনীতির মূলভিত্তি হলো প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি, ও তথ্যপ্রযুক্তি। দেশটি অভিবাসীদের জন্যও অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার ও মন্ট্রিয়েলের মতো শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে। কানাডা পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উদার সামাজিক নীতি দেশটিকে একটি প্রকৃত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড নিয়ে গঠিত যুক্তরাজ্য একসময় বিশ্বশক্তির কেন্দ্র ছিল। আজও লন্ডন বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানীগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির অর্থনীতি সেবা খাত, শিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয় যা বিশ্বসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাজ্যের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা (NHS), এবং সামাজিক নিরাপত্তা নীতি নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করেছে। সংস্কৃতি, সাহিত্য ও গবেষণার খেত্রেও দেশটির অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
সুইজারল্যান্ড (Switzerland)
সুইজারল্যান্ড হলো বিশ্বের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। দেশটির ব্যাংকিং খাত, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিশ্বসেরা। জুরিখ ও জেনেভার মতো শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহরের তালিকায় সবসময় শীর্ষে থাকে। সুইস ঘড়ি, চকলেট ও পর্যটন বিশ্বখ্যাত।
দেশটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি ও নাগরিকদের উচ্চ জীবনমানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সুইজারল্যান্ডের গড় আয়ু অনেক বেশি, এবং মানব উন্নয়ন সূচক অত্যন্ত উচ্চ।
ফ্রান্স (France)
ফ্রান্স ইউরোপের একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। দেশটির রাজধানী প্যারিস বিশ্ব ফ্যাশন, শিল্প ও পর্যটনের কেন্দ্র। অর্থনীতির মূলভিত্তি শিল্প, প্রযুক্তি, কৃষি ও পর্যটন। ফ্রান্সে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত, এবং নাগরিক কল্যাণে সরকার ব্যাপক বিনিয়োগ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে ফ্রান্স বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ফরাসি ঐতিহ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা।
অস্ট্রেলিয়া (Australia)
অস্ট্রেলিয়া হলো দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে উন্নত দেশ। শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক অবকাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি দেশটিকে সমৃদ্ধ করেছে। সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন শহরগুলো বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে।
আরো পড়ুনঃ সুইজারল্যান্ডে কি কি ভিসা পাওয়া যায় – সুইজারল্যান্ডের ভিসার ধরন ও দাম ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ রক্ষা নীতি ও নাগরিক অধিকার প্রশংসনীয়। দেশটি শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের জন্যও জনপ্রিয় গন্তব্য। টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক নীতির কারণে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বে একটি স্থিতিশীল ও সুখী দেশের উদাহরণ।
দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)
দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট। স্যামসাং, এলজি, হুন্দাইয়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড এখানকার উদ্ভাবনের প্রতীক। যুদ্ধবিধ্বস্ত কোরিয়া এখন বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ, যার প্রধান শক্তি শিক্ষা ও প্রযুক্তি। সরকার গবেষণা, রোবোটিকস ও ইলেকট্রনিক্স খাতে বিশাল বিনিয়োগ করে।
সিউল বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট সিটি। নাগরিকদের শিক্ষার মান ও জীবনযাত্রার মান উভয়ই অত্যন্ত উচ্চ। দক্ষিণ কোরিয়া সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং ‘কোরিয়ান ওয়েভ’ বা K-pop সংস্কৃতি বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়।
নরওয়ে (Norway)
নরওয়ে ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত উন্নত দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে দেশটি বিপুল অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। তবে শুধু অর্থনীতিই নয়, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারে নরওয়ে বিশ্বের অন্যতম উদাহরণ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রা নিরাপদ ও সুখী। পরিবেশ সুরক্ষা ও নবায়নযোগ্য শক্তিতে নরওয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। মানব উন্নয়ন সূচকে দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে।
উন্নত দেশের উন্নয়নের মূল কারণ
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে আলাদা করে রেখেছে তাদের বহুমাত্রিক উন্নয়ন কাঠামো। জেমন-
** প্রথমত- শক্তিশালী অর্থনীতি হলো প্রতিটি উন্নত দেশের ভিত্তি। স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিল্প ও রপ্তানি খাতের উন্নয়ন, এবং সঠিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে এই দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।
** দ্বিতীয়ত- উন্নত শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থা তাদের টেকসই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে তারা দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে, যারা নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
** তৃতীয়ত- আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এই দেশগুলোর উন্নতির গতি ত্বরান্বিত করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, নবায়নযোগ্য শক্তি, ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে তারা বিশ্বনেতা।
** চতুর্থত- মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা তাদের নাগরিকদের দীর্ঘায়ু ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করেছে। উন্নত হাসপাতাল, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা নাগরিক কল্যাণে অবদান রাখছে।
** সবশেষে- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা উন্নয়নের মেরুদণ্ড। সুশাসন, স্বচ্ছ প্রশাসন ও আইনের শাসন নাগরিক আস্থা বাড়ায়। সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করে তারা সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে।
উপরে উল্লেখিত পাঁচটি স্তম্ভই একত্রে গড়ে তুলেছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাফল্যের প্রকৃত ভিত্তি।
উন্নত দেশের অর্থনৈতিক শক্তি ও জিডিপি তুলনা
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি তাদের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। কারণ, সর্বাধিক জিডিপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে রয়েছে, যার মোট জিডিপি প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পরেই রয়েছে চীন ও জাপান, যেখানে জাপানের জিডিপি প্রায় ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
জার্মানির জিডিপি প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন, আর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের জিডিপি যথাক্রমে ৩.৫ ও ৩.০ ট্রিলিয়ন ডলার। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপি গড়ে ১.৭–২.০ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে। ছোট জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও সুইজারল্যান্ড ও নরওয়ে প্রতি মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে।
এসব পরিসংখ্যানগুলো প্রমাণ করে যে, স্থিতিশীল অর্থনীতি উন্নত দেশের ভিত্তি গড়ে দেয়।
উন্নত দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রগতি
উন্নত দেশগুলোর অগ্রগতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ। আর এই দেশগুলোতে সরকারি বাজেটের এওটি বড় অংশ ব্যয় হয় মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণায়। যেমন-
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, কানাডা ও যুক্তরাজ্য, এসব দেশে হার্ভার্ড, এমআইটি, অক্সফোর্ড ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তবমুখী উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উন্নয়নে অংশ নেয়।
সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও পরিবেশ উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার মান, গবেষণার স্বাধীনতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের মাধ্যমে এসব দেশ বৈশ্বিক নেতৃত্ব ধরে রেখেছে।
উন্নত দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান
উন্নত দেশগুলোর অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান। নাগরিকদের গড় আয়ু উচ্চ, এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ব্যাপক বিনিয়োগ করে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, জরুরি সেবা ও মানসম্মত চিকিৎসা সহজলভ্য।
পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ও নিরাপদ পরিবেশের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডা ও জার্মানিতে নাগরিকরা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা শুধু দৈহিক সুস্থতা নয়, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণেও অবদান রাখে।
এই কারণে জীবনযাত্রার মান, উৎপাদনশীলতা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা উন্নত দেশগুলোর সফলতার মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত।
উন্নত দেশের প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন
উন্নত দেশগুলোর সাফল্যের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো স্মার্ট সিটি, ডিজিটাল অবকাঠামো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিপ্লব ঘটিয়েছে।
তারা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট, রোবোটিকস ও ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক জীবনকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলছে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই শহর গড়তে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাছাড়া, উন্নত রাস্তা, রেল, মেট্রো, এবং স্যাটেলাইট সংযোগ তাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা শক্তিশালী করছে। এই প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নই ভবিষ্যতের অর্থনীতি, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রকে আরও স্মার্ট ও আধুনিক করে তুলছে।
উন্নত দেশের পরিবেশবান্ধব নীতি ও স্থায়িত্ব
উন্নত দেশগুলো এখন উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, কানাডা ও সুইডেন নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ও কার্বন নির্গমন কমাতে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তারা সৌর ও বায়ু শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস করছে। পরিবেশবান্ধব পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বন সংরক্ষণে আধুনিক নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। নাগরিকদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এসব উদ্যোগের ফলে উন্নত দেশগুলো শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, বরং পরিবেশগত দিক থেকেও টেকসই উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠেছে।
উন্নত দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও মানব উন্নয়ন সূচক
উন্নত দেশগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নারীর ক্ষমতায়ন ও উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক (HDI)। এসব দেশে নারী-পুরুষ সমানভাবে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নেতৃত্বের সুযোগ পান। নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, এসব দেশে নারীরা সরকারি, প্রশাসনিক ও বেসরকারি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন।
মাতৃত্বকালীন ছুটি, সমান মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আয় ও আয়ুষ্কালের মানের ভিত্তিতে এই দেশগুলোর মানব উন্নয়ন সূচক বিশ্বে শীর্ষে। নারীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পারায় এসব দেশ সত্যিকার অর্থে টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করেছে।
উন্নত দেশের ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ
যদিও উন্নত দেশগুলো বিশ্ব নেতৃত্বে অগ্রগামী, তবুও ভবিষ্যতে তাদের সামনে রয়েছে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন-
- প্রথমত, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও অটোমেশন শ্রমবাজারে বড় রূপান্তর আনবে, যা অনেক প্রথাগত চাকরি বিলুপ্ত করতে পারে।
- দ্বিতীয়ত, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে, বিশেষ করে জাপান ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে।
- তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অভিবাসন সংকট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহারও ভবিষ্যতের নতুন চ্যালেঞ্জ।
আর এসব সমস্যা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোকে আরও উদ্ভাবনী নীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যাতে টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায়।
শেষকথা- বিশ্বের শীর্ষ ১০ উন্নত দেশ ২০২৫
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিক, প্রযুক্তিগত ও মানবিক উন্নয়নের দিক থেকেও অগ্রণী। তাদের উন্নতির মূল রহস্য হলো শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তি, ও ন্যায্য শাসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো যদি এই মডেল অনুসরণ করে। তবে, ভবিষ্যতে তারাও বৈশ্বিক অগ্রগতির কাতারে পৌঁছাতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ সুইজারল্যান্ড অধিক চাহিদা সম্পন্ন কাজ – সুইজারল্যান্ড কোন কাজের বেতন কত?
উন্নত দেশগুলোর গল্প আমাদের শেখায় যে, স্থিতিশীল পরিকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ ও সুশাসনই টেকসই উন্নয়নের আসল চাবিকাঠি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url