সূরা আল কাফিরুন আরবী, বাংলা, ইংরেজি উচ্চারণসহ অর্থ । সূরা আল কাফিরুনের গুরুত্ব ও ফজিলত

আরো পড়ুনঃ নামাজের জন্য সহজ ১০ সূরা বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ

"সূরা আল কাফিরুন" পবিত্র কোরয়ান মজিদের ১০৯ নম্বর সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৬টি। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়, তাই এটি মক্কী সূরা নামে পরিচিত। এই সূরাটি ইসলামের তাওহীদ তথা, একত্ববাদের সু-স্পষ্ট বার্তা বহন করে।

"সূরা আল কাফিরুন", পবিত্র আল কোরয়ানের শক্তিশালী সূরাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যেখানে মুসলমানদেরকে শিরক ও মুশরিকদের ইবাদতের পন্থা থেকে আলাদা থাকতে শিক্ষা দেয়। বিভিন্ন সহিহ হাদিসে এ সূরার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়। 

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, সূরা আল কাফিরুনের, আরবী, বাংলা, ইংরেজী উচ্চারন, বাংলা অর্থসহ এই সূরার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই-

সূরা আল কাফিরুন আরবী- বাংলা- ইংরেজি উচ্চারণসহ অর্থ-Surah Al Kafirun Arabic-Bangla-Surah Al Kafirun Arabic-Bangla-With English Pronunciation

সূরা আল কাফিরুন মক্কায় অবতীর্ণ/ নাজিল হয়েছে এবং এই সূরাটি ইসলামি একত্ববাদের বা তাওহীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা বহন করে। নিচে সূরাটির আরবি, বাংলা, ইংরেজি উচ্চারণ ও অর্থ দেওয়া হলো-

সূরা আল কাফিরুন আরবী উচ্চারণ- Surah Al Kafirun Arabic Pronunciation

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

  1. قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ 
  2. لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ 
  3. وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
  4. وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ
  5. وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
  6. لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ 

সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ- Surah Al Kafirun Bengali pronunciation

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

  1. কুল ইয়া আইয়্যুহাল-কাফিরুন।
  2. লা আ বুদু মা তাবুদুন।
  3. ওয়া লা আনতুম ‘আবিদুনা মা আ’বুদ।
  4. ওয়া লা আনা আবিদুম মা আবাতুম।
  5. ওয়া লা আনতুম ‘আবিদুনা মা আ’বুদ।
  6. লাকুম দিনুকুম ওয়া লিয়া দিন।

সূরা আল কাফিরুন ইংরেজি উচ্চারণ- Surah Al Kafirun English Pronunciation

Bismillāhir-Raḥmānir-Raḥīm

  1. Qul yā ayyuhal-kāfirūn.
  2. Lā a'budu mā ta'budūn.
  3. Wa lā antum ‘ābidūna mā a‘bud.
  4. Wa lā ana ‘ābidum mā ‘abattum.
  5. Wa lā antum ‘ābidūna mā a‘bud.
  6. Lakum dīnukum wa liya dīn.

সূরা আল কাফিরুন বাংলা অনুবাদ- Surah Al Kafirun Bengali Translation

শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

  1.  বলুন, হে কাফিরগণ!
  2.  আমি উপাসনা করি না, তোমরা যার উপাসনা করো।
  3. তোমরাও উপাসনা করো না, আমি যার উপাসনা করি।
  4. আমি উপাসনা করব না, তোমরা যার উপাসনা করেছ।
  5. তোমরাও উপাসনা করবে না, আমি যার উপাসনা করি।
  6. তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আর আমার ধর্ম আমার জন্য।

সূরা আল কাফিরুনের গুরুত্ব- The importance of Surah Al-Kafirun

সূরা আল কাফিরুনের শানে নুযুল বা বংলা অর্থ থেকে থেকে বুঝা যায়, এর গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ এ সূরা মাধ্যমে সব কাফিরদের বুঝিয়েছেন যে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা জানতেন তারা কাফের হয়েই মরবে এবং তাদের মৃত্যুও হবে শিরক অবস্থায়। 

এই সূরার গুরুত্ব বুঝার পর অনেক মুশরিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং আল্লাহর একত্বতবাদকে স্বীকার করে। তাছাড়া, এ সূরার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে অন্য কারো শামিল করাই শিরক। তাই, আমাদের এমন কিছু করা যাবে না, যা শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ দোয়া কুনুত আরবী বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ বিস্তারিত

এই সূরার গভীরে, প্রবেশ করলে সহজে বুঝা যায় যে, কাফিররা যখন নবী করিম (সঃ) কে, শান্তি চুক্তির জন্য অনৈতিকভাবে প্রস্তাব দিল, তা ছিল সম্পূর্ণ তাওহীদের বিপরীত। তাই, এর উওরে রাসূলে পাক (সঃ) বললেন, এটা কখনোই সম্ভব হবে না। 

কারণ, আমি তাওহীদের পথকে পরিত্যাগ করে কখনোই, শিরিকের পথ অবলম্বন করব না, যেমন তোমরা চাচ্ছ। নবী করিম (সঃ) আরও বলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক যদি তোমাদের জন্য হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তোমরাও আল্লাহর হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। 

আর যদি তোমরা তোমাদের দ্বীনকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাক, আর সেটি যদি ছাড়তে রাজি না থাক, তাহলে আমিও আমার নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, এবং তা ছাড়ব কেন? সুতরাং এসব থেকে খুব সহজে দেখা যায় যে, সূরা আল কাফিরুনের গুরুত্ব অপরিসীম।

সূরা আল কাফিরুনের ফজিলত- The virtues of Surah Al-Kafirun

আল কাফিরুন সূরাটি একনিষ্ঠভাবে আমাদের ইসলামি বিশ্বাসের প্রতি অটল থাকার আহ্বান জানায় এবং মুশরিকদের ধর্মীয় রীতির সঙ্গে সমঝোতার সকল পথ বন্ধ করে দেয়। সূরাটি মুসলমানদেরকে তাওহীদের প্রতি দৃঢ়তা এবং আলাদাভাবে পরিচয় বজায় রাখার একটি দিক নির্দেশনা।

সুরা কাফিরুন পবিত্র আল কোরয়ানের অন্যতম ছোট্ট একটি সুরা, যার আয়াত সংখ্যা মাত্র ৬টি এবং রুকু সংখ্যা ১টি। তাছাড়া, এই সূরাটি পড়তে এক মিনিট লাগে না। কিন্তু, এটি একটি অত্যান্ত ফজিলত পূর্ণ সূরা। নিচে এই সূরার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সূরা কাফিরুন কোরয়ানের এক-চতুর্থাংশের সমান- Surah Kafirun is equal to one-fourth of the Quran.

হাদিস- রসূলে পাক হজরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, সূরা আল কাফিরুন বা "সূরা ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ পবিত্র আল কুরয়ানের এক-চতুর্থাংশের সমান" (মুসনাদে আহমাদ- হাদিস ২১৪০৫)।

ব্যাখ্যা- এই সূরায় তাওহীদ বা মহান এক আল্লাহর ইবাদতের গুরুত্ব এতটাই বেশি দেওয়া হয়েছে যে, এই একটি সূরা পবিত্র আল কোরয়ানের বড় অংশের বার্তাকে ধারণ করে।

সূরা কাফিরুন রাতে ঘুমানোর আগে পড়ার উপকারিতা-Benefits of reciting Surah Kafirun before going to bed at night

হাদিস- রাসূলে পাক (সঃ), হযরত আবু হুরায়রা (রা:) কে বলেন, "তুমি যখন শোওয়ার জন্য বিছানায় যাবে, তখন সূরা আল কাফিরুন বা সূরা 'কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন' পড়ো। এই সূরাটি শিরক থেকে মুক্তি দেয়" (সুনান আবু দাউদ- হাদিস ৫০৫৫ ও তিরমিজি- হাদিস ৩৪০০)।

ব্যাখ্যা- পবিত্র এই সূরাটি পাঠ করে ঘুমালে, ঈমানের প্রতি গভীর অটলতা প্রকাশ পায় এবং মনের মধ্যে প্রশান্তি আসে।

ফজরের সুন্নত নামাজে সূরা আল কাফিরুন পড়া সুন্নত- It is Sunnah to recite Surah Al Kafirun in the Sunnah prayer of Fajr.

হাদিস- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, "নবী করিম (সঃ) প্রতি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা 'আল কাফিরুন' এবং দ্বিতীয় বা শেষ রাকাতে সূরা 'ইখলাস' পড়তেন" (সহিহ মুসলিম- হাদিস ৭২৬)।

ব্যাখ্যা- প্রতিদিনের শুরুতেই যদি তাওহীদের বার্তা উচ্চারণ করা হয়, তাহলে ঈমানের দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচায় বহন করে।

কা’বা শরীফ তাওয়াফ শেষে নামাজে সূরা আল কাফিরুন- Surah Al Kafirun in the prayer after the Tawaf of the Kaaba Sharif

হাদিস- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, "রাসূলে করিম (সঃ) কা'বাঘরের তাওয়াফ শেষ করার পর, দুই রাকাত নামাজে সূরা 'আল কাফিরুন' এবং সূরা 'ইখলাস' পড় করতেন" (সহিহ মুসলিম হাদিস ১২১৮)।

ব্যাখ্যা- কাবাঘর তাওয়াফ করার পর এই দুটি সূরা পাঠ করা নবী পাক (সঃ)-এর সুন্নত। যা, তাওহীদ ও ইখলাসের প্রতি একনিষ্ঠতা প্রকাশ করে।

তাওহীদ শিক্ষা ও আকীদা বিশুদ্ধকরণ- Teaching Tawheed and Purifying the Creed

  • কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
  • মুশরিকদের ইবাদতের সঙ্গে আমাদের কোনো আপোষ হবে না।
  • প্রত্যেকের জন্য তার নিজ নিজ ধর্ম, মুসলমানদের জন্য শুধু আল্লাহর একত্ববাদ।

সূরা আল কাফিরুনের শিক্ষা- শেষকথাঃ The Lesson of Surah Al-Kafirun - The End

সূরা আল কাফিরুন সকল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। যা, মুসলমানদের ঈমানের প্রতি অটলতা, শিরকমুক্ত জীবন, ও আত্মার পবিত্রতার ঘোষণাকে বহন করে। প্রতিদিন এই সূরাটি পাঠ করা, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে, নামাজে কিংবা তাওয়াফ শেষে— একনিষ্ঠ মুসলিম জীবনের অনুশীলনের অংশ হওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উপায়

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারে আসে, তাহলে অবশ্যই এটি আপনার পরিচিত এবং পরিবাদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url