সন্তানকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করার কার্যকর পদ্ধতি - শিশুকে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করার ৭টি উপায়
আরো পড়ুনঃ কিভাবে পড়া মুখস্থ না করে মনে রাখবেন – পড়া মুখস্থ না করে মনে রাখার ৭টি উপায়
শিশুদের মানসিক গঠন, অভ্যাস এমনকি শেখার প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে ছোট বেলা থেকেই। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করে তার বাবা- মা বিশেষ করে তার মা।
সন্তানকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করা বলতে শুধু "পড়ো", "মন দাও" তা বলা নয়, বরং তার শেখার উপযুক্ত পরিবেশ, মনস্তত্ত্ব ও অভ্যাসকে বুঝে, সহানুভূতির সহিত দিকনির্দেশনা দেওয়া। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, এমনি ৭টি কার্যকর কৌশল। যে, কৌশলের মাধ্যমে আপনি সন্তানের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জাগাতে পারেন।
সন্তান পড়াশোনায় অনাগ্রহী হয় না কেন?- Why is obedience not disinterested?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, শিশুরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখায় না। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণত নচের কয়েকটি কারণ, যা সচারাচর হয়ে থাকে, তা হলো-
- অনুপ্রেরণার অভাব।
- একঘেয়ে পড়ার ধরন।
- মা- বাবার অতিরিক্ত চাপ।
- মোবাইল/ টিভির প্রতি আসক্তি।
- শেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য না জানা।
উপরের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে, আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে, আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা এবং সে অনুযায়ী বুঝে-শুনে শিশুকে মোটিভেট করতে হবে। তাছাড়া, নিচের আলোচনা থেকে জেনে নেই শিশুকে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করার ৭টি উপায় সম্পর্কে-
পড়াশোনাকে মজার খেলায় পরিণত করা- Turning learning into a fun game
সকল শিশুদের স্বাভাবিক একটি গুণ হলো, তারা খেলা- ধুলা ভালোবাসেন। তাই আপনি যদি পড়ার বিষয়গুলোকে অন্য উপায়ে খেলাধুলার মতো করে আনন্দময় করে তুলতে পারেন, তাহলে তারা খুব সহজে তা গ্রহণ করবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়-
- অক্ষর শিখার জন্য ‘ফ্ল্যাশ কার্ড’ ব্যবহার করুন।
- গল্প পড়ার সময় অ্যানিমেটেড বই/ ভিডিও যুক্ত করুন।
- গণিত শেখাতে চকলেট বা খেলনার মাধ্যমে গাণিতিক হিসাব দিন।
- মজার ছলে শেখা জিনিসগুলো শিশুদের মনে বেশি বেশি সময় ধরে থাকে।
পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন- Create a specific routine for studying.
শিশুরা যদি নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে শিখে, তাহলে সেটি তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে, সেটি একসময় স্থায়ী বা স্বাভাবিক সভাবে পরিনত হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়-
- বিকেল ৫টা থেকে ৬টা হোমওয়ার্ক টাইম।
- সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭ঃ৩০টা রিভিশন টাইম।
- সিন্ধ্যা ০৭ঃ ৩১ ঠেকে ০৮ঃ০০ বিরতি।
- রাত ০৮ঃ থেকে ১০ঃ০০ পড়াশোনা।
ছোট অর্জনেও বড় প্রশংসা দিন- Give big praise even for small achievements.
প্রশংসা হলো শিশুদের খেত্রে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন, কারণ তারা প্রশংসা পেতে খুব পছন্দ করেন। তাই, আপনি যদি আপনার শিশুর প্রতিটি ছোট ছোট অর্জনেও, তাকে বাহবা দিতে পারেন, তাহলে তারা আরও ভালো করার চেষ্টা করবে। যেমন-
- তুমি দারুণ লিখেছো!
- “তুমি সত্যি সত্যিই খুব মনোযোগী!”
- “তোমার আজকের পড়া একদম সঠিক ছিল!”
সন্তানকে সময় দিন ও পাশে বসে পড়ুন- Give your child time and sit next to him/her.
সন্তানকে কেবল নির্দেশ দিলেই চলবে না, আপনাকে সন্তা্নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিতে হবে এবং তার খুব পাশে বসে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, পিতা- মাতা তার পাশে বসলে, সে নিজেকে অনেক নিরাপদ ও গুরুত্ববান মনে করেন। এই সময়ে আপনি যা করতে পারেন-
- প্রশ্ন করে শেখা যাচাই করা।
- সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।
- মজার গল্প বা কবিতা পড়ে শোনানো।
এই অভ্যাসগুলোর কারণে শিশু আপনাকে মনে করবে, আপনি তার “সহযোগী”। আপনি “কঠোর অভিভাবক” নন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শেখার সহজ উপায় ২০২৫- বর্তমানে কোন স্কিল সবচেয়ে দরকারি?
পড়ার পরিবেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা- Make the reading environment beautiful and attractive
শিশুর পড়ার জায়গা বা স্থান সাজাতে হবে খুব শান্ত, আলো-বাতাসযুক্ত ও রঙিনভাবে। তাছাড়া, তার প্রিয় বই, পেনসিল স্ট্যান্ড, দেয়ালে শিক্ষামূলক পোস্টার ও আরামদায়ক চেয়ার শিশুর মনোযোগ বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। যেমন-
- ছোট একটি রঙ্গিন টেবিল ও চেয়ার।
- রঙিন চার্ট ও অক্ষর ঝুলানো।
- পড়ার আলাদা কর্নার।
আপনি যদি দেখেন যে শিশুটি কোনো নির্দিষ্ট খেলনার পাশে বসে বেশি মনোযোগ দেয়, তাহলে সেটিকে পড়ার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করুন।
শেখার উদ্দেশ্যকে সহজভাবে বোঝান- Explain the learning objectives simply.
শিশুকে বোঝাতে হবে, শেখার আসল উদ্দেশ্য কি। কারণ, শিশুরা যখন বুঝতে পারে যে, সে যা শিখছে, তা বড় হয়ে বা ভবিষ্যতে তার কাজে লাগবে। তখন, সে তার শেখার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। তাই তাকে বোঝানোর চেস্টা করুন-
- “গণিত জানলে টাকা গোনার সময় ভুল হবে না”।
- “ইংরেজি জানলে বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে”।
- “তুমি যদি ভালো করে বাংলা পড়ো, তাহলে গল্প লেখা শিখবে”।
প্রযুক্তি ব্যবহারকে সীমাবদ্ধতা করুন- Limit technology use
মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট শিশুদের মনোযোগ অতি সহজে আকর্ষণ করে। যদিও, আধুনিক এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষায় অনেক সাহায্য করে, তবে এর পাশাপাশি এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুকে তার নিয়নিত পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়। তাই, আপনি যা করতে পারেন-
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি।
- শিক্ষামূলক বিভিন্ন ভিডিও বা অ্যাপসের ব্যবহার।
- পড়ার সময় মোবাইল পুরোপুরি বন্ধ রাখা।
উৎসাহিত করার কার্যকর টিপস- Effective tips for encouragement
- শেখা মানেই ‘নম্বর’ নয়, ‘জ্ঞান অর্জন’ – এই বার্তা দিন।
- অন্য শিশুদের সঙ্গে শেখার প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা তৈরি করুন।
- শিশুর আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন (গল্প, ছবি আঁকা, গাণিতিক পাজল)।
- সন্তান ব্যর্থ হলে কখনোই তাকে তিরস্কার করবেন না, বরং শেখার সুযোগ হিসেবে দেখান।
বাবা-মার আচরণই শিশুর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা- Parents' behavior is the child's biggest inspiration
শিশুরা যা দেখে, তাই শিখে, এই সত্যটি সবসময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আপনার সকল প্রকার আচরণ, কথা বলার ধরন, বই পড়ার অভ্যাস, এমনকি সমস্যার সময় আপনি কিধরণের প্রতিক্রিয়া জানান, এসবই শিশুর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
তাই, আপনি যদি নিজে প্রতিদিন নিয়মিত বই পড়েন, নতুন কিছু শেখার বিষয়ে আগ্রহ দেখান, তাহলে দেখবেন আপনার সন্তানও তা অনুসরণ করতে শুরু করবে। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে-
- কখনো রাগ বা চাপ প্রয়োগ না করে ধৈর্য সহকারে বোঝান।
- প্রতিদিন কিছু সময় সন্তানের সঙ্গে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ছোট ছোট শেখার গল্প বলুন, যেমন "আমি ছোটবেলায় কীভাবে শিখতাম"।
শিশুকে পড়ায় উৎসাহিত করার উপায়- শেষকথাঃ Ways to encourage children to read - Final words:
সন্তানকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করার জন্য আপনাকেই হতে হবে আপনার সন্তানের প্রথম ‘মোটিভেটর’। তাছাড়া, উপরের ৭টি কৌশল নিয়মিত যদি প্রয়োগ করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন ধীরে ধীরে সে পড়ার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।
তাছাড়া, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, ভালোবাসা, সময় দেওয়া, সহানুভূতি দেখানো ও ইতিবাচক পরিবেশ শিশুর মনে পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ ও আগ্রহ বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে।
আরো পড়ুনঃ এডিটিং সফটওয়্যারের জনপ্রিয় ও সেরা টুলস
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিত এবং পরিবারের সদস্যদের শেয়ার করেন। আরো এমন নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url