ব্রণ প্রতিরোধের কার্যকর ১০ উপায় - টিন এজারদের জন্য জনপ্রিয় উপায় ২০২৫
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া রোধে প্রাকৃতিক উপাদানের গুরুত্ব - সহজলোভ্য ঘরোয়া উপাদানে হেয়ার মাস্ক
টিনএজ বয়সের ব্রণ ও অ্যাকনের সমস্যা জটিল কিছু না, খুব সাধারণ সমস্য, কিন্তু তা আত্মবিশ্বাসে বড় ধরণের প্রভাব ফেলে। আর এই সমস্যাগুলো সাধারণত, হরমোনের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, পরিচর্যার অভাবসহ নানা কারণে দেখা দেয়।
তবে, কয়েকটি সহজ ও কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে ব্রণ কমানো সম্ভব। এই গাইডে আমরা আলোচনা করেছি এমন ১০টি উপায়, যা টিনএজারদের জন্য প্রাকৃতিক ও চিকিৎসা-ভিত্তিক সমাধান হিসেবে কাজ করবে। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
টিনএজারদের ব্রণ/ অ্যাকনে হওয়ার কারণ কী?- What causes acne in teenagers?
টিনএজ বয়সে হরমোনের পরিমাণ ওঠানামা করায়, ত্বকে অতিরিক্ত সেবাম বা তেল উৎপন্ন করে। ফলে এটি লোমকূপে আটকে যায় এবং মৃত কোষ ও জীবাণুর সঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি করে ব্রণ। আর ব্রণ সাধারণত মুখ, কপাল, গলা, বুক ও পিঠে বেশি দেখা যায়।
ব্রণ প্রতিরোধের কার্যকর ১০ উপায়- 10 effective ways to prevent acne
ব্রণ/ অ্যাকনে ত্বকের উজ্জলতা এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। আমাদের ত্বকের তৈলগ্রন্থিতে যদি ব্যাটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাহলে এর আকৃতি অনেক বেড়ে যায়, ফলে এর ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে। যা সময় সাথে ধীরে ধীরে ব্রণের আকার ধারণ করে।
তবে, এব্যাপারে সাধারণত টিনেজার মেয়েরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রণ ও ব্রণের দাগ নিয়ে ভোগেন। আর এই সমস্যা বা ব্রণ/ অ্যাকনে থেকে বাঁচার জন্য, প্রাকৃতিক উপদানের সাহায্য কিছু উপায় অবলম্বন করুন।
তাই, বাজারের ক্যামিকেলযুক্ত দামি কসমেটিক্স এর পরিবর্তে, আপনি অবলম্বন করতে পারেন ঘরোয়া পদ্ধতি, যা সহজেই ব্রণ/ অ্যাকনে কমাতে সাহায্য করবে। তাছাড়া, ঘরোয়া, প্রাকৃতিক ও অরগানিক সামগ্রী সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ, এগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না। নিচে দেখি কার্যকর ১০ উপায় সম্পর্কে-
দিনে দু'বার মুখ পরিষ্কার করুন – ব্রণ প্রতিরোধে প্রথম উপায়- Clean your face twice a day – the first step to preventing acne
প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন কাজে ঘরের বাইরে যেতে হয়। ফলে আমাদের ত্বকে জমে যায় ধুলো-বালি। তাই, ত্বকে জমে থাকা বিভিন্ন ধুলা, তেল ও জীবাণু দূর করার জন্য, আমাদের দিনে দুইবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া আবশ্যক হয়ে যায়।
তবে, অতিরিক্ত সাবান বা হার্শ ক্লিনজার আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই, এরজন্য ব্যবহার করুন, সালফেট ও অ্যালকোহলমুক্ত ফোমিং ফেসওয়াশ।
ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন – প্রাকৃতিক যত্নে ব্রণ দূর করুন- Use homemade face packs – get rid of acne with natural care
হলুদ, মধু ও টক দই দিয়ে তৈরি এই ফেস প্যাক ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ, হলুদে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-সেপটিক গুণ, মধুতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আর দইয়ের ঠান্ডা ও এক্সফোলিয়েটিং ক্ষমতা থাকায়, এই সকল উপাদান ত্বকের জন্য একটি নিখুঁত প্যাক।
এই প্যাকটি আপনি প্রতি সপ্তাহে ২ বার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা যেমন কমে, তেমনিভাবে ত্বকে এনে দেয় স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান – ভেতর থেকে ত্বকের যত্ন নিন- Eat healthy foods regularly – take care of your skin from the inside out
আমাদের খাদ্যাভ্যাস ব্রণের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই, অতিরিক্ত চিনি, চকোলেট, ডুবো তেলে ভাজা খাবার এবং দুধজাত খাবার আমাদের ব্রণের প্রকোপ বাড়াতে পারে। তাই এসব খাবাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
এইসকলের পরিবর্তে খাদ্যের তালিকায় জুক্ত করুন শসা, পেঁপে, বাদাম, লেবু, মৌসুমি ফল ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় মাছ যেমন, স্যামন বা সার্ডিন। কারণ, এ ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার ত্বককে পরিষ্কার রাখে ভেতর থেকে এবং ব্রণের সম্ভাবনা অনেকটা কমায়।
সচেতন হোন চুলের যত্নে – অয়েলি চুল মানেই ব্রণের সমস্যা- Be aware of hair care - oily hair means acne problems
তেল-তেলে বা ময়লাযুক্ত চুল যখন বারবার আপনার মুখের ত্বককে সংস্পর্শ করে, তখন ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা ব্রণের সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করে । বিশেষ করে এই সমস্যাটি কপাল ও গালের অংশে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়।
তাই, সচেতন হোন চুলের যত্নে, যেমন নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা, চুলকে মুখ থেকে দূরে রাখা এবং ঘুমানোর সময় চুল বেঁধে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর এভাবে চুলের তেল ও ধুলাবালি থেকে ত্বককে সুরক্ষা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ প্রচন্ড গরমে ত্বক ভালো রাখতে ঘরোয়া ফেস প্যাক
মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন – ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশে বাধা দিন- Avoid touching your face – prevent bacteria from entering
বিশেষ করে নখের নিচে জমে থাকা ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া ত্বকে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, সেলফ কন্ট্রোল বাড়ান, নিজেকে সচেতন রাখুন এবং অপ্রয়োজনে বা যখন- তখন মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে ব্রণের সমস্যা আপনার অনেকটাই কমে যাবে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন – ত্বক হাইড্রেটেড রাখুন- Drink enough water every day – keep your skin hydrated
পানি কেবল আমাদের পিপাসা মেটায় তা নয়, বরং পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর/ দূষিত টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতাকে ঠিক রাখে। তাই, নিয়মিত পানি পান করলে ব্রণের প্রদাহ কমার পাশাপাশি ত্বক হয় উজ্জ্বল ও সুস্থ।
এইজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষ করে, পানি পান করবেন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস করে।
টি ট্রি অয়েল – ব্রণের জন্য প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক- Tea Tree Oil – Natural Antibacterial for Acne
টি ট্রি অয়েল হলো, শক্তিশালী একটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এসেনশিয়াল অয়েল, যা ব্রণের জীবাণুকে ধ্বংস করতে কার্যকর ভুমিকা রাখে। তাছাড়া, এটি ত্বকের লালচে ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। তবে, কখনোই টি ট্রি অয়েল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার ঠিক নয়।
এরসঙ্গে সামান্য পানি বা ক্যারিয়ার অয়েল, যেমন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে মিশিয়ে তুলার সাহায্যে আক্রান্ত বা ব্রণের জায়গায় লাগান। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের পরিমাণ কমে এবং ত্বক হয় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর।
ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করুন – ব্যাকটেরিয়া বিস্তার রোধ করুন- Clean up immediately if you sweat – prevent the spread of bacteria
ঘাম জমে থাকলে ত্বকে জীবাণু তার বংশবৃদ্ধি করে, যা ব্রণ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই, খেলাধুলা, ব্যায়াম করলে বা গরমের সময় ত্বক বেশি বেশি ঘামে, তখন ঘাম নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণ দেখা দেয়।
তাই, সব সময় ঘামের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এরজন্য সঙ্গে রাখুন ওয়েট টিস্যু, মিনারেল স্প্রে কিংবা হালকা কোনো ফেস ক্লিনজারন। যাতে ঘাম জমার সঙ্গে সঙ্গেই, সহজে তা পরিষ্কার করে ফেলা যায়।
প্রতিদিনের স্কিনকেয়ার রুটিন – নিয়মিত ত্বকের যত্নে ব্রণ কমবে- Daily Skincare Routine – Regular skin care will reduce acne
স্বাস্থ্যকর একটি স্কিনকেয়ার রুটিন প্রতিদিন মেনে চলুন, যাতে ব্রণ প্রতিরোধ অনেক সহজ হয়। এরজন্য তিনটি ধাপ যেমন, পরিষ্কার থাকা, ময়েশ্চারাইজ ও সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়মিত অনুসরণ করলেই ত্বক সুস্থ ও ব্রণমুক্ত রাখা সম্ভব। যেমন-
**সকাল- হালকা ফেসওয়াশ, অ্যালকোহল-ফ্রি টোনার এবং জেল-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার।
** রাত- ক্লিনজিং, স্ক্রাব (সপ্তাহে ২ বার), ব্রণ প্রতিরোধী ফেসপ্যাক এবং অয়েল-ফ্রি নাইট ক্রিম।
নিশ্চিত হোন যে, এটি নন-কমেডোজেনিক পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
অতিরিক্ত ব্রণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন – দাগ ও ব্যথা থেকে মুক্তির পথ- Consult a doctor if you have excessive acne - the way to get rid of scars and pain
যদি ব্রণ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, ব্যথা করে বা ত্বকে দাগ ফেলে, তবে আর দেরি না করে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়, সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার হতে পারে- Drugs that can be used in treatment
- অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic) – সংক্রমণ ও প্রদাহ কমাতে।
- হরমোন থেরাপি – বিশেষ করে মেয়েদের হরমোনজনিত ব্রণ নিয়ন্ত্রণে।
- রেটিনয়েড জেল (Retinoid Gel) – লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে কার্যকর।
- বেনজয়েল পারঅক্সাইড (Benzoyl Peroxide) – ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সহায়ক
সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে, ত্বকের দাগ ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
ব্রণ প্রতিরোধে কার্যকর টিপস – গড়ে তুলুন ব্রণ প্রতিরোধে অভ্যাস- Effective tips to prevent acne – develop habits to prevent acne
- নো-মেকআপ ডে পালন করুন।
- প্রতিরাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান।
- স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন করুন বা পছন্দের কিছু পড়ুন।
- বালিশের কাভার ও তোয়ালে প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন করুন।
উপসংহার- নিয়মিত যত্নই ব্রণমুক্ত ত্বকের চাবিকাঠি- Conclusion - Regular care is the key to acne-free skin
টিনএজারদের জন্য ব্রণ যেমন একটি সাধারণ সমস্যা, তেমনি এর প্রতিকারও সম্ভব। নিয়মিত পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে, আপনি ফিরে পেতে পারেন ঝকঝকে ও উজ্জ্বল ত্বক। উপরের ১০টি উপায় আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন, পরিবর্তন নিজেই অনুভব করবেন।
আরো পড়ুনঃ ত্বক ভালো রাখতে ফলের খোসার ১০ ফেস প্যাক
পাঠকদের প্রতি অনুরোধ- Request to readers
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে ও উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url