শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে। সাবান মাসে শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। নফল রোজা, নফল নামায, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ, জিকির,তাসবিহ-তাহলিল দোয়া কালাম, সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে সার্থক করা হয়েছে।

শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত আমল করতেন। মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের জন্য কিছু মাসকে পুরস্কার ও মহিমান্বিত করেছেন তার মধ্যে সাবান মাস অন্যতম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস কে তার নিজের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি শাবান মাসে রোজা পালনের অনেক গুরুত্ব ফজিলত বর্ণনা করেছেন। চলুন নিম্নে আমাদের আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জেনে নেই শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে।

 সূচিপত্রঃ শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

  • ভুমিকা
  • শাবান মাসের ফজিলত
  • শাবান মাসের গুরুত্ব
  • শাবান মাসের আমল
  • শাবান মাসের দোয়া
  • শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলত
  • কোরআন ও হাদিসের আলোকে শাবান মাসের ফজিলত
  • শাবান মাসের মহত্ত্ব বিশেষ আমল সমূহ
  • শেষ কথা

ভূমিকাঃ

চন্দ্র বর্ষের অষ্টম মাস হল সাবান মাস। এ মাসের গুরুত্ব ফজিলত অনেক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মনোয়ারা হিজরি দেড় বছর পর প্রবর্তন কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস এর পরিবর্তে মক্কা শরীফের মসজিদুল হারাম তথা খানায়ে কাবা তথা বাইতুল্লাহ শরীফ কিবলা হিসেবে ঘোষিত হয়। 

সেজন্য শাবান মাস একদিকে যেমন মুসলিম ও ইসলামী ঐক্যের মাস অন্যদিকে কাবা কেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। শাবান মাসের পূর্ণ নাম হল আশ শাবানুল মোয়াজ্জম যার অর্থ হচ্ছে মহান সাবান মাস। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা রাসুল সাঃ শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত নফল রোজা পালন করতেন।

শাবান মাসের ফজিলতঃ

শাবান মাস হচ্ছে বরকতময় মাস। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এ মাসের সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত নফল রোজা নফল রাম নামাজ ইত্যাদি আদায় করতেন। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি দর্শন করা শাবান মাসে আরো বেশি রাতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন করা এবং রমজান মাসের সর্বাধিক ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে সেই বীজ থেকে ফসল তোলা হয়। 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রতি দরুদ পাঠের নির্দ শেনাশকলিত অসাধারণ আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয় বলে আখ্যায়িত করেন। হে বিশ্বাসী মুমিনগণ তোমরা তার প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো। সূরা ৩৩ আহযাব আয়াত ৫৬

শাবান মাসের গুরুত্বঃ

একাধিক ফজিলত এর কারনে শাবান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি তেমনই সারা বছরের আমলনামা পেশ করার পেশ হওয়ার মাস হিসেবেও শাবান মাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা কর্তব্য আর এই গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করার উপায় হলো সর্ব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া।

শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

সবান মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রেখতে নির্দেশ দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেননা এ এ মাসের গুরুত্ব হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।এ নিয়ে হাদিসে নানারকম কথোপ কথন রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কথার মর্ম হলো শাবান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় কাজে গুরুত্বের দাবিদার তাছাড়া সামনের রমজান মাস আসছে ফজিলতপূর্ণ মাস হিসেবে রমজানকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। 

শাবান মাসের আগে রজব মাস আছে রজব মাস পবিত্র চার মাসের একটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করা হয়। এবং মাঝখানে শাবান মাসকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসের তবে তার করা হয়েছে এ মাসে বান্দার গোটা বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় তাই সাবান আল্লাহ দরবারে আমলনামা পেশ হওয়ার মাস, এ মাসেও যথাযথ কদর করা চাই এ কারণেই আমি এ মাসে এত রোজা রাখি। 

এ কথা মনে পড়ে সাল্লাম বলেছেন। আল্লামা ইবনে ওসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু বলেন আমি একবার বললাম-" আমি আপনাকে কোন মাসেই এত রোজা রাখতে দেখিনি শাবান মাসে আপনি যত রোজা রাখেন"।

শাবান মাসের আমলঃ

আসল স্যারেরা ভালইবাস সালাম রজব ও সাবান মাসব্যাপী বেশি বেশি এ  দোয়া পড়তে বলেছেন - 

" আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া সাবান ,ওয়া বাল্লিগ না রমাদান"

অর্থাৎ- হে আল্লাহ, রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন। রামাদান আমাদের নসিব করুন।( ওসনাদে আহমদ ১ঃ২৫৯, শুআবুল ঈমান বাইহাকী,৩ঃ ৩৭৫ )

সাবান মাস হচ্ছে ইবাদতের মাস, নফল রোজা নফল নামাজ কোরআন তিলাওয়াত দুরুদ শরীফ জিকির আজগার তাসবি তাহাবীর দোয়া কালাম ছাতকা খায়রাত ওমরা হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাস কে সার্থক ও সাফল্যময় করা হয়েছে।

শাবান মাসে দোয়াঃ

শাবান মাস এমনই ফজিলতপূর্ণ মাস যে মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত ও বরকতের মাধ্যমে বান্দাদের মনের সব আশা পূরণ করেন। এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন কারণ এ মাসে রোজার গুরুত্ব অনেক বেশি। সাবানের এক তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত রোজা পালনের বিশেষ ফজিলতের কথা বিভিন্ন হাদিসে তুলে ধরা হয়েছে। 

মহান রাব্বুল আলামিন শাবান মাসের প্রত্যেক বান্দাদের ক্ষমা করে দেন কিন্তু মুশরিক ও মশা বিন কে ক্ষমা করেন না। মুসাহিন বলা হয় এমন মানুষকে যারা সুন্নাহের বিরোধিতা করেন আর সাহাবা রাদিয়াল্লাহুকে অভিশপ্ত করেন। শাবান মাসে বেশি বেশি করে এই বরকতময় দোয়া পাঠ করতেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ-

"আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজিবা ওয়া সাবান,ওয়া বাল্লিগনা রমাদান"

অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি আমাদের রজব ও সাবান মাসে বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন। মুসনাদে আহমদ প্রথম খন্ড ২৫৯

শাবান মাসে রোজা রাখার ফজিলতঃ

আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ শাবান মাসে অধিক হারে নফল ইবাদত বন্দেগী করতেন। রমজানুল মোবারক এর মর্যাদা রক্ষা এবং হক আদায়ের অনুশীলনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করতেন এর সম্পর্কে হযরত আনাস রাঃ বলেছেন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম তিনি বললেন রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনের জন্য সাবানের রোজা উত্তম ( তিরমিজি )।

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন ১৫ শাবানের রাত ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যখন আসে সে রাতে তোমরা তা ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং পরের দিন রোজা রাখো ।( ইবনে মাজাহ ) কারণ সাবান হচ্ছে এমন এক মাস যে মাসে কেউ যদি আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা চাই তবে সে তার বিশেষ রহমত ও বরকত ময় সাবান মাসে তার ইবাদত বন্দেগী করে। 

শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালনের পাশাপাশি ইস্তেকফার ও দুরুদ শরীফ পাঠের কথা উল্লেখ করে বলেন হিজরী বছরের তিনটি মাস যথা রজব সাবান ও রমজান এ তিনটি মাসেই অধিক ইস্তেগফার ও দুরুদ শরীফ পাঠের সুপারিশ করা হয়েছে। অবশ্য শাবান মাসের ওপর বেশি তারিখ দেওয়া হয়েছে।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে শাবান মাসের ফজিলতঃ

শাবান মাসের ফজিলত অন্যান্য মাসের থেকে মর্যাদাপূর্ণ। কারণ শাবান মাস মুসলিম স্বতন্ত্র ও ইসলামী ঐক্যের মাস অন্যদিকে তেমনি কাবা কেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভাতৃত্ববোধ উজ্জীবিত হওয়ার মাস। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনি কি জানেন শাবান মাসের পূর্ণ নাম কি, শাবান মাসের পূর্ণ নাম হল আশাবানুল মুয়াজজম যার অর্থ মহান সাবান মাস। 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত নফল রোজা পালন ও নফল নামাজ ইত্যাদি আদায় করতেন রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমিকর্শন করা শাবান মাসে আরো বেশিরভাগ দের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন করা এবং রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত বন্দের মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলা। 

চন্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস হল সাবান সাবান মাস বিশ্বের ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনা মনোয়ারার হিজরতের দেড় বছর পর প্রবর্তন কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস এর পরিবর্তে মক্কা শরীফকে মসজিদুল হারাম তথা খানায়ে কাবা তথা বাইতুল্লাহ হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারিত করা হয় এই শাবান মাসেই।                                  

শাবান মাসের মহত্ত্ব বিশেষ আমল সমূহঃ

চোদ্দো সাবান দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাত বলা হয় এ রাতে এবাদত করা ও দিনে রোজা রাখা সুন্নত। সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার সুন্নত। চন্দ্র মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা রয়েছে মাসের ১ ১০ ২০ ও ৩০ তারিখ রয়েছে নফল রোজা এছাড়াও কোন সময় ও দিন তারিখ নির্ধারণ ছাড়াও যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যাই।

আপনি নফল ইবাদত করছেন ভালো কথা সেই সাথে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার ফরজ ইবাদতগুলো ছুটে না যায় এবং কোন হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত না হয় আপনার দ্বারা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সাবান মাসে বৃষ্টি রোজা রাখতেন এবং রজব মাসে ১০ টি রোজা রাখতেন। রমজানের পূর্ণমাস ফরজ রোজা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসে নফল রোজা নামাজ আদায় করতেন।

শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

চন্দ্র মাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া কারণ ইসলামী বিধি-বিধান চাঁদের তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। চাঁদের ২৯৩০ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত। রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরী একটি সুন্নত আমল সকল মুসলমানদের জন্য। হাদিস শরীফে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন তোমরা রমজানের জন্য সাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।

শেষ কথাঃ শাবান মাসের ফজিলত ও আমল

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, শাবান মাস ব্যতীত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বছরের অন্য কোন মাসে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখেননি। কারণ শাবান মাসের ফজিলত অনেক বেশি এ মাসে ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন রমজানের রোজা রাখতেন আর সেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সাবান ৩০ তম দিন পূর্ণ করে রমজানের রোজা রাখতেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। মনোভাব হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রায় বছরের প্রতি মাসেই কম বেশি রোজা রাখতেন কিন্তু তিনি সাবান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা এতক্ষণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আমাদের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url