দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা (২০২৫ সালে) বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, যা মূলত আবেদনকারির কাজের ধরণ ও যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। তবে, সেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো E-9 Employment Permit System (EPS) ভিসা, যা বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের শ্রমিকদের জন্য দেওয়া হয়।
এছাড়া, E-7 Special Occupation Visa যা বিশেষ দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য এবং E-1 থেকে E-6 সিরিজের ভিসা শিক্ষকতা, গবেষণা, শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও পেশাগত কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর যারা ব্যবসা বা বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে D-8 (Investment Visa)।
আবার স্বল্পমেয়াদী বিশেষ কোন কাজের জন্য দেওয়া হয় C-4 Short-term Employment Visa। তবে, প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা শর্ত, ডকুমেন্টেশন ও খরচ নির্ধারিত থাকে। তাই, আবেদন করার আগে কোন ভিসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা জরুরি।
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজারের তথ্য ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজার ২০২৫ সালে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তনের মুখোমুখি। কারণ, দেশের বেকারত্বের হার প্রায় ২.৭–৩%, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডে কম। তবে, দ্রুত বয়স্ক জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি এবং জন্মহার হ্রাসের কারণে, কাজের উপযোগী জনসংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
এর ফলে ২০৩৩ সালের মধ্যে প্রায় ৮.২ লাখ কর্মীর ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, এটি উৎপাদন, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে কর্মীর চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণা-ভিত্তিক সেক্টরেও চাকরির সুযোগ বাড়ছে।
যদিও, কর্মসংস্থান হার ভালো, কিন্তু শ্রম উৎপাদনশীলতা OECD দেশগুলোর তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিক গ্রহণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
তবে, আমরা সামগ্রিকভাবে বলতে পারি যে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজারে দক্ষ জনবল ও বিদেশি কর্মীদের জন্য সুযোগ অনেক বেশি থাকবে।
দক্ষিণ কোরিয়া অধিক চাহিদাসম্পন্ন কাজ কি?
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজারে ২০২৫ সালে বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রকে অধিক চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যেমন- দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বয়স্ক হয়ে পড়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে।
হাসপাতাল, নার্সিং, বৃদ্ধ সেবা কেন্দ্র এবং কেয়ারগিভার পেশায় বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এর পাশাপাশি উৎপাদন শিল্প বিসেসভাবে ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা, টেক্সটাইল এবং নির্মাণ খাতে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। নির্মাণ শ্রমিক, ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং টেকনিশিয়ান পেশাগুলোতে বিদেশিদের সুযোগ বেশি।
এছাড়াও, আধুনিক যুগের চাহিদা অনুযায়ী আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক চাকরিতেও কোরিয়ান কোম্পানিগুলো দক্ষ কর্মী খুঁজছে। শিক্ষকতা ও ভাষা প্রশিক্ষণ (বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষকতা) কোরিয়ায় বিদেশিদের জন্য জনপ্রিয় পেশা। কৃষি মৌসুমে মৌসুমি শ্রমিকেরও চাহিদা থাকে।
সব মিলিয়ে বলা যায় স্বাস্থ্যসেবা, উৎপাদন, নির্মাণ, আইটি এবং শিক্ষা খাতে দক্ষ ও আধা-দক্ষ বিদেশি কর্মীরা দক্ষিণ কোরিয়ায় সহজেই কাজের সুযোগ পেতে পারেন। তাই, এই খাতগুলোতেই ২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ কানাডা কোম্পানি ভিসা খরচ ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, চাহিদা সম্পন্ন কাজ ও বেতন
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার উপায়
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য, প্রথমে ভিসার ধরন নির্ধারণ করতে হবে, যেমন- E-9 (EPS প্রোগ্রাম), E-7 (স্পেশালিটি ওয়ার্কার) বা অন্যান্য ভিসা। তবে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো EPS ভিসা, যা বাংলাদেশ ও কোরিয়ার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় সরকারি প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়।
তবে, এ ভিসার জন্য প্রার্থীদেরকে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা (EPS-TOPIK) উত্তীর্ণ হতে হয় এবং বয়স, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়। আর এসকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরির তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া যায়।
আবার E-7 বা বিশেষ দক্ষতা ভিত্তিক কোন ভিসার জন্য কোরিয়ার কোনো বৈধ কোম্পানি থেকে চাকরির অফার লেটার থাকতে হবে। এরপর সেই কোম্পানি সেই দেশের শ্রম মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন অফিসে আবেদন করে কর্মীকে ভিসার অনুমোদন করায়।
ভিসা অনুমোদন পাওয়া গেলে বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসে ভিসা আবেদন করতে হয়। তবে, সব ক্ষেত্রেই মেডিকেল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
আবেদনকারী সরকারি সকল নিয়ম মেনে এজেন্সির মাধ্যমে কিংবা সরাসরি দূতাবাসে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসার খরচ কত লাগে
দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের ভিসার আনুমানিক খরচ (২০২৫) নিম্নরূপ হতে পারে, তবে আবেদনকারীকে স্পষ্ট করতে হবে যে, ভিসার প্রকৃত খরচ ভিসার ধরন, আবেদন দেশ (বাংলাদেশ সহ), এজেন্সির ফি এবং অতিরিক্ত খরচের ওপর নির্ভর করে। নিচে আনুমানিক খরচ দেখুন-
- ভিসা আবেদন ফি: US$ 50-90 (প্রায় বা তার কাছাকাছি)।
- EPS-TOPIK ভাষা পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রাথমিক পরীক্ষার ফি: প্রায় KRW 20,000 থেকে 30,000 (কোরিয়ান ওয়ন)।
- বিদেশি শ্রমিকদের জন্য নিয়োগ/ আবাসন/ স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য খরচ থাকছে, যা কয়েক লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে আবেদন করলে বিমান খরচ, অনুবাদ, নথিপত্র সুস্পষ্টকরণ ইত্যাদি যুক্ত হবে।
তবে, মোটামুটি বাজেট বাংলাদেশ থেকে একটি সাধারণ কাজের ভিসার ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে খরচ হতে পারে ৳৫০,০০০ থেকে ৳১২০,০০০-এর মধ্যে। যদি ভিসা ধরনের আগে-পরে কোনো বিশেষ ফি না থাকে।
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের বেতন কত?
দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২৫ সালে কাজের বেতন মূলত অন্য দেশের কত কাজের ধরন ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। তবে, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় প্রায় ১০,০৩০ ওন, যা পূর্ণকালীন চাকরিতে মাসে গড়ে ২.১ মিলিয়ন ওন (যা বাংলাদেশি টালায় প্রায় ১.৮ লাখ টাকা) হয়।
তবে, অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি শ্রমিকেরা ওভারটাইম বা অতিরিক্ত কাজ করে প্রতিমাসে ২ মিলিয়ান থেকে ৩ মিলিয়ন ওন আয় করেন। এটি বিশেষ করে, নির্মাণশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক এবং কৃষি খাতে কর্মরতদের জন্য এ বেতন সাধারণ।
আর দক্ষ পেশাজীবী, যেমন- আইটি বিশেষজ্ঞ, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এর চেয়েও অনেক বেশি আয় করতে পারেন। তবে, কোরিয়ায় জীবনযাত্রার খরচ তুলনা-মূলক বেশি হলেও, সেখানে ভালো বেতনের কারণে সঞ্চয়ের সুযোগ থাকে।
ফলে, বাংলাদেশিসহ বিদেশি কর্মীদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া এখন অন্যতম এক জনপ্রিয় গন্তব্য। সব মিলিয়ে, ২০২৫ সালে কোরিয়ার শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মীরা প্রতিমাসে গড়ে ২ মিলিয়ান থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন ওন আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ কোরিয়ার কাজের ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকরা সেখানে বৈধভাবে কাজ করতে পারেন, যা, তাদের উচ্চ বেতন, নিয়মিত চাকরি, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা প্রদান করে। ভিসা ধারকরা সরকার অনুমোদিত আবাসন, শ্রম আইন অনুযায়ী ছুটি ও কাজের নিরাপত্তা পান।
এছাড়াও, দক্ষ শ্রমিকরা সেখানে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী বসবাস বা প্রবাসে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে, সুজোগের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন ভাষার বাধা, কোরিয়ান কাজের সংস্কৃতি এবং কর্মদক্ষতার উচ্চ মানদণ্ড মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে।
EPS বা E-7 ভিসার জন্য সরকারি পরীক্ষা ও যোগ্যতার শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক। কখনও কখনও আবাসন ও খাবারের খরচ বেশি হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ভিসার মেয়াদ সীমিত হওয়ায় স্থায়ী চাকরি বা দীর্ঘমেয়াদে থাকা কঠিন হতে পারে। তাই, সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
শেষকথা- কোরিয়া কাজের ভিসার আপডেট তথ্য ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের ভিসা ২০২৫ সালে বিদেশি কর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ তৈরি করছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণ, উৎপাদন, আইটি এবং শিক্ষাখাতে বিদেশিদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিসা প্রক্রিয়া ও খরচের বিষয়ে সঠিক তথ্য জানলে আবেদন অনেক সহজ হয়।
যদিও, সেখানে ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার খরচ চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে বৈধ ভিসা এবং সরকার অনুমোদিত কাজের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। ফলে, দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকরা এই বাজারে স্থায়ী কর্মসংস্থান ও ভালো বেতন পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ জার্মানি ব্লু কার্ড ভিসা খরচ ২০২৫ – আবেদন, শর্ত ও পূর্ণাঙ্গ গাইড
সুতরাং, প্রস্তুতি ও সঠিক তথ্যের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আরটিকেলটি ভালো লাগলে ও উপকারি বলে মনে হলে, অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আরো নতুন নতুন এমন তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url