আরো পড়ুনঃ চীনের শিক্ষা ভিসা ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, খরচ ও সম্পূর্ণ গাইড
২০২৫ সালে দুবাই কোম্পানি ভিসা নিয়ে বিস্তারিত গাইড। আবেদনের প্রক্রিয়া, খরচ, যোগ্যতা, কাজের সুযোগ, BMET ও BOESL-এর মাধ্যমে নিরাপদ যাত্রা এবং বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই কেন জনপ্রিয় কর্মস্থল।
হ্যাঁ আমাদের পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যারা কোম্পানি ভিসা নিয়ে দুবাই কাজে যেতে চান, তাদের জন্য আজকের এই প্রবন্ধটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই, একটু সময় নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।
দুবাই কোম্পানি ভিসা ২০২৫ - সম্পূর্ণ গাইড
দুবাই কোম্পানি ভিসা বলতে এমন একটি ডকুমেন্টকে বুঝায়, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈধভাবে চাকরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্ক পারমিট। সহজভাবে বলা যায়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা সেখানে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে পারেন।
সাধারণত এক্ষেত্রে কোম্পানি নিজেই ভিসা, থাকা-খাওয়া ও কাগজপত্রের দায়িত্ব নেয়। দুবাইয়ের উচ্চ আয়, নিরাপদ পরিবেশ ও সহজ ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে, বাংলাদেশিরা এখানে কাজ করতে আগ্রহী।
বিশেষ করে, নির্মাণ, হসপিটালিটি, ড্রাইভিং, সিকিউরিটি ও প্রযুক্তি খাতে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।ভিসা আবেদন, মেডিকেল পরীক্ষা ও অনুমোদনের মাধ্যমে কর্মীরা আইনগতভাবে দুবাইয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।
দুবাই কোম্পানি ভিসা কী?
দুবাই কোম্পানি ভিসা হলো এমন একটি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) অনুমোদিত কোনো কোম্পানি সেখানে বিদেশি কর্মীকে প্রদান করে। এই ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ দুবাইতে বৈধভাবে চাকরি করতে পারেন।
উল্লেখ থাকে যে, কোম্পানি নিজেই কর্মীর ভিসা, থাকার ব্যবস্থা ও অন্যান্য কাগজপত্রের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। তবে, ভিসা পাওয়ার আগে কোম্পানির অফার লেটার, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করতে হয়।
আরপর দুবাই কোম্পানি ভিসা পেলে বিদেশি কর্মী নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চাকরি করতে পারেন এবং প্রয়োজনে নবায়নের সুযোগও থাকে। এটি শ্রমিক ও পেশাজীবীদের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি ভিসা।
বাংলাদেশিদের জন্য কেন দুবাই জনপ্রিয় কর্মস্থল?
বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই জনপ্রিয় কর্মস্থল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সেখানে উচ্চ আয়ের সুযোগ, নিরাপদ পরিবেশ এবং বিভিন্ন ধরনের কাজের সহজলভ্যতা। নির্মাণশিল্প, ড্রাইভিং, হসপিটালিটি, সিকিউরিটি, টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল খাতে প্রতিনিয়ত কর্মী নিয়োগ হয়।
তাছাড়া, দুবাইতে আয় তুলনামূলকভাবে বেশি এবং অনেক কোম্পানি সেখানে ফ্রি থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত সুবিধা দেয়। এছাড়াও, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ, চাকরির চাহিদা বেশি এবং উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ থাকায় বাংলাদেশিরা সেখানে কাজ করতে আগ্রহী হন।
তাছাড়া, দুবাই থেকে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোটিয়া অনেক সহজ হওয়ায় পরিবার-পরিজন আর্থিকভাবে উপকৃত হয়। এসব কারণেই, দুবাই বাংলাদেশের কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য।
দুবাইয়ের জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর নাম
দুবাইতে বিভিন্ন খাতে বহু বিশ্বখ্যাত ও স্থানীয় কোম্পানি রয়েছে, যেখানে প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করেন। সেখানে, বাংলাদেশিদের জন্য চাকরির সুযোগ পাওয়া যায় নির্মাণ, হসপিটালিটি, এভিয়েশন, লজিস্টিকস, ব্যাংকিং এবং টেকনোলজি খাতে। তবে, দুবাইয়ের জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- Emirates Airlines.
- Etihad Airways.
- DP World.
- Dubai Petroleum.
- Emaar Properties.
- Nakheel.
- Al-Futtaim Group.
- Jumeirah Group.
- Dubai Duty Free.
- Majid Al Futtaim.
- Emirates NBD.
- Dubai Electricity and Water Authority (DEWA)।
- Dubai Health Authority (DHA), RTA Dubai এবং
- Dubai Airports.
উপরে উল্লেখিত কোম্পানি শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছে। যেখানে দক্ষ শ্রমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত পেশাজীবীদের জন্য, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির সুযোগ রয়েছে, যা বাংলাদেশিদের জন্য দুবাইকে আরও আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র করে তুলেছে।
দুবাই কোম্পানি ভিসার খরচ কত ২০২৫
দুবাই কোম্পানির ভিসার খরচ নির্ভর করে আবেদন কারির ভিসা প্রসেসিং এর উপর। তবে, ২০২৫ সালে দুবাই কোম্পানি/ ওয়ার্ক ভিসার আনুমানিক খরচ নিম্নরূপ হয়ে থাকে-
আনুমানিক খরচ-
- Work permit (কাজের অনুমোদন)- AED ২৫০ থেকে AED ৩,৪৫০, কোম্পানির ক্যাটাগরি ও স্কিল লেভেল অনুযায়ী।
- ২ বছরের কাজের ভিসা (প্রসেসিং, মেডিকেল, ভিসা স্টাম্প, এমিরেটস আইডি ইত্যাদি মিলিয়ে)- AED ৩,০০০ থেকে AED ৭,০০০-এর মধ্যে।
- আরও কিছু অতিরিক্ত খরচ থাকতে পারে — মেডিকেল পরীক্ষা, বায়োমেট্রিক ফিঃ, অনুবাদ, এবং ইমারেটস আইডি ফি ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই খরচ নিয়োগকর্তা (employer) বহন করবেন- আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
- খরচ কাজের ধরন, কোম্পানির প্রকার (মেইনল্যান্ড বা ফ্রি-জোন), কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের উপর নির্ভর করে
দুবাই কোম্পানি ভিসার সরকারি ফি কত
দুবাই কোম্পানি ভিসার সরকারি ফি নির্ধারণ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয় (MOHRE) এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ২০২৫ সালে কাজের অনুমতি বা Work Permit Fee কোম্পানির ধরন ও কর্মীর দক্ষতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়।
সাধারণত আনুমানিক সরকারি ফি হলো– AED ২৫০ থেকে প্রায় AED ৩,৪৫০ পর্যন্ত। এর মধ্যে আরো ভিসা অনুমোদন, লেবার কার্ড, এন্ট্রি পারমিট, মেডিকেল টেস্ট এবং এমিরেটস আইডি প্রসেসের জন্য আলাদা খরচ যুক্ত হয়ে থাকে।
তবে, আইনি নিয়ম অনুযায়ী এই ফি এবং সংশ্লিষ্ট খরচ কোম্পানিকেই বহন করতে হয়, কর্মীকে নয়। তাই, বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই কোম্পানি ভিসা তুলনামূলক অনেক নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।
দুবাই কোম্পানি ভিসায় কোন কোন কাজ পাওয়া যায়
দুবাই কোম্পানি ভিসায় সাধারণত বিভিন্ন সেক্টরেই কাজ পাওয়া যায়। বিশেষ করে, সেখানে নির্মাণশিল্প, হোটেল- রেস্টুরেন্ট, ড্রাইভিং, সিকিউরিটি গার্ড, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, ডেলিভারি সার্ভিস, ক্লিনার, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, মেকানিক, ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার, এবং হেল্পার পদে প্রচুর লোক নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়াও, দক্ষ কর্মীদের জন্য রয়েছে আইটি, অ্যাকাউন্টিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল ও ম্যানেজমেন্ট সেক্টরের মত আরো কাজের সুযোগ। তবে, অদক্ষ কর্মীরা সাধারণত শ্রমভিত্তিক কাজে যুক্ত হন, আর দক্ষ জনশক্তি পান উচ্চ বেতনের চাকরি।
কোম্পানি ভিসায় নিয়োগ পাওয়ার পর আবেদনকারিকে চাকরিটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানেই করতে হয় এবং ভিসার মেয়াদ সাধারণত দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দুবাই কোম্পানি ভিসার কাজের বেতন কত
দুবাই কোম্পানি ভিসায় কাজ করলে বেতন অনেক ভেরিয়েবল যেমন- কাজের ধরণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কোম্পানির সাইজ, ও ক্যারিয়ার পজিশনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে থাকে। তবে, সাধারণ কিছু রেফারেন্স দেওয়া যায় যাতে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
দুবাই কোম্পানি ভিসার আনুমানিক বেতন |
নম্বর | কাজের ধরণ | মাসিক বেতন (AED) | বাংলাদেশি টাকা |
১ | অদক্ষ শ্রমিক (Laborer) | ১,২০০-২,৫০০ AED | ৩৮,৪০০ – ৮০,০০০ টাকা |
২ | হাউসকিপার / ক্লিনার | ১,২০০-১,৬০০ AED | ৩৮,৪০০ – ৫১,২০০ টাকা |
৩ | সিকিউরিটি গার্ড | ১,৫০০-২,০০০ AED | ৪৮,০০০ – ৬৪,০০০ টাকা |
৪ | হালকা-ড্রাইভার / ডেলিভারি | প্রায় ২,০০০ AED | ৬৪,০০০ টাকা |
৫ | দক্ষ শ্রমিক / কারিগর | ২,৫০০-৪,০০০ AED | ৮০,০০০ – ১,২৮,০০০ টাকা |
এখনকার হার অনুযায়ী (১ AED = ৩২ টাকা, ২০২৫ অনুযায়ী) বেতনগুলো বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করা হয়েছে। তবে, মনে রাখবেন, বাসস্থান, খাবার ও অন্যান্য সুবিধা কিছু কোম্পানি দেয়, আবার কিছু কোম্পানি দেয় না। তাই, আসল হাতে পাওয়া বেতন নির্ভর করে কোম্পানির সুবিধার উপর।
আরো পড়ুনঃ জার্মানি কী কী ভিসা পাওয়া যায়? - জার্মানি কৃষি কাজের ভিসা ২০২৫
দুবাই কোম্পানি ভিসার যোগ্যতা ও শর্তাবলি
বাই কোম্পানি ভিসার জন্য সাধারণত যেসব যোগ্যতা ও শর্তাবলি থাকার প্রয়োজন, সেগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- (এইগুলোর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে কোম্পানি, ভিসার ধরন ও সময়মতো আইন অনুযায়ী)।
দুবাই কোম্পানি ভিসার যোগ্যতা
** বয়স- সাধারণত আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
** লিগ্যাল রেকর্ড- অপরাধমুক্ত রেকর্ড/ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগতে পারে।
** পাসপোর্ট- পাসপোর্ট থাকতে হবে বৈধ, এবং কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ বাকি থাকতে হবে।
** স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট- মেডিক্যাল টেস্ট যেমন রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে হতে পারে।
** শিক্ষাগত/ পেশাগত যোগ্যতা- কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, অভিজ্ঞতার প্রমাণ বা কাজের যোগ্যতার রেফারেন্স বা রেসুমে দরকার হতে পারে, বিশেষ করে দক্ষ বা পেশাজীবী কাজের জন্য।
** ব্যবসার/ চাকরির প্রমাণ- যদি কাজের ভিসা হয়, কোম্পানির স্পন্সর, নিয়োগপত্র, কাজের চুক্তি লাগতে পারে। ব্যবসা/উদ্যোক্তা হলে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স বা বিনিয়োগের প্রমাণ লাগবে।
** আর্থিক সক্ষমতা- ভিসা কাটতে পারে যেখানে দেখাতে হবে যে আপনি নিজের/basic খরচ সামলাতে পারবেন যেমন- ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়-ব্যয় প্রমাণ, কখনও কখনও বিনিয়োগ/ কোম্পানি-পুঁজির প্রমাণ দিতে হয়।
দুবাই কোম্পানি ভিসার শর্তাবলি-
** ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী থাকতে হবে এবং কোম্পানি বা স্পন্সর হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো সরকারী/আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ম থাকতে পারে ভিসা কার্যকর করতে হলে।
** যদি পরিবারকেও স্পন্সর করতে চান (যেমন স্ত্রী, সন্তান), তবে বাড়তি শর্ত থাকতে পারে, উদাহরণ স্বরূপ, মাসিক আয়, বাসস্থান প্রমাণ, মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স ইত্যাদি।
** ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করতে হবে, এবং নবায়নের জন্য পূর্বের কাজ /বিনিয়োগ/ লাইসেন্স ইত্যাদি সক্রিয় থাকতে হবে।
** কিছু ক্ষেত্রে, স্পন্সর বা কোম্পানিকে নিয়মিতভাবে কাজ বা রোজগারের তথ্য দিতে হতে পারে, এবং নির্দিষ্ট নীতি মানতে হবে।
** ভিসা আইন ও নিয়ম প্রায়ই পরিবর্তন হয় – তাই আবেদন করার সময় একদম সঠিক ও বর্তমান নিয়ম দেখে নেওয়া জরুরি।
দুবাই কোম্পানি ভিসা আবেদনের জন্য ডকুমেন্ট
দুবাই কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারিকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। সাধারণত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্টগুলো হলো-
- ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করা।
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)।
- মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট (রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ইত্যাদি)।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বা অপরাধমুক্ত সনদপত্র।
- কাজের চুক্তিপত্র/অফার লেটার, যা নিয়োগকর্তা প্রদান করবে।
- এমিরেটস আইডি আবেদন ফরম (দুবাই পৌঁছানোর পর করতে হয়)।
- স্পন্সর কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স ও ইনভিটেশন কপি (স্পন্সর ভিসার ক্ষেত্রে)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ও প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)।
তবে, অনেক ক্ষেত্রে কাগজপত্রের বা ডকুমেন্টের কিছুটা পার্থক্য হতে পারে ভিসার ধরণ (লেবার, স্কিলড, প্রফেশনাল বা কোম্পানি-স্পনসরড) অনুযায়ী।
দুবাই ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া (ধাপে ধাপে)
দুবাই কোম্পানি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন- প্রথমে দুবাইয়ের কোনো কোম্পানি থেকে অফার লেটার বা নিয়োগপত্র নিতে হয়। এরপর নিয়োগকর্তা আপনার হয়ে ভিসা অনুমোদনের আবেদন করে।
অনুমোদন হলে আবেদনকারিকে বা আপনাকে মেডিক্যাল টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। তবে, সবকিছু ঠিক থাকলে, এন্ট্রি পারমিট ভিসা ইস্যু হয়, যার মাধ্যমে দুবাই প্রবেশ করা যায়।
দুবাই পৌঁছানোর পর কোম্পানির মাধ্যমে মেডিক্যাল ফিটনেস টেস্ট, এমিরেটস আইডি রেজিস্ট্রেশন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে রেকর্ড আপডেট করতে হয়। সবশেষে আপনার রেসিডেন্স ভিসা স্ট্যাম্পিং করা হয় এবং আপনি আইনগতভাবে কাজ শুরু করতে পারেন।
দুবাই ভিসা পেত BMET রিকুরিং এজেন্সির ভূমিকা
দুবাই ভিসা পেতে BMET অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজেন্সিগুলো বৈধভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানোর লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং শ্রমিকদের জন্য সঠিক চাকরির অফার সংগ্রহ করে। তারা ভিসা প্রসেসিং, কাগজপত্র যাচাই, মেডিক্যাল টেস্ট ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়।
এছাড়া বিমান টিকিট, ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স এবং BMET-এর স্মার্টকার্ড সরবরাহেও সহায়তা করে। অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে গেলে কর্মীরা প্রতারণা ও অতিরিক্ত খরচ থেকে নিরাপদ থাকেন এবং সরকারের নির্ধারিত নিয়মে সঠিকভাবে দুবাইয়ে যেতে পারেন।
BOESL এর মাধ্যমে দুবাই কোম্পানি ভিসা - নিরাপদ উপায়
BOESL (বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড) সরকারের একমাত্র বৈধ প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে দুবাই কোম্পানি ভিসায় যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। BOESL সরাসরি দুবাইয়ের নিয়োগকর্তার সাথে চুক্তি করে শ্রমিক পাঠায়, ফলে দালাল বা প্রতারণার ঝুঁকি থাকে না।
এখানে ভিসা প্রসেসিং, মেডিক্যাল, প্রশিক্ষণ এবং টিকিট সব কিছু সরকারি তত্ত্বাবধানে হয়। খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং স্বচ্ছ থাকে। তাই, দুবাইয়ে নিরাপদে ও আইনসম্মতভাবে কাজের জন্য BOESL-এর মাধ্যমে ভিসা নেওয়া সঠিক ও বিশ্বস্ত উপায়।
দুবাই কোম্পানির ভিসা প্রসেসিং হতে কত দিন লাগে
দুবাই কোম্পানি ভিসার প্রসেসিং সময় সাধারণত ৩০ থেকে প্রায় ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এরজন্য প্রথমে নিয়োগকর্তা ভিসা অনুমোদন নেয়, এরপর মেডিক্যাল টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও BMET প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে খুব দ্রুত ভিসা পাওয়া যায়, তবে কোম্পানির ধরন ও আইনি যাচাইয়ের কারণে সময় কিছুটা বাড়তেও পারে।
দুবাই ভিসা পেতে দালালের প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
দালালের প্রতারণা থেকে বাঁচার কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে, যেমন- প্রথমেই নিশ্চিত করুন এজেন্সিটি BMET অনুমোদিত কিনা, লাইসেন্স নম্বর পরীক্ষা করুন। অফিসে গিয়ে কাগজপত্র, ঠিকানাও তল্লাশি করুন। কোনো অস্বাভাবিক আগাম টাকা দাবী হলে হঠাৎ দেয়া থেকে বিরত থাকুন, সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া উচিত নয়।
নিয়োগ-পত্র, ট্রেড লাইসেন্স ও নিয়োগকর্তার কনট্যাক্ট পরীক্ষায় দেখে নিন। সব কাগজপত্রের লিখিত কপি রাখুন এবং প্রয়োজনে BOESL বা শ্রম মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিন। সন্দেহ হলে স্থানীয় আইনগত বা BMET-এ অভিযোগ করুন।
শেষকথা- দুবাই কোম্পানির ভিসার আপডেট তথ্য ২০২৫
দুবাই কোম্পানি ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য খুবই সুনির্দিষ্ট এবং নিরাপদ কর্মসংস্থানকে নিশ্চিত করে থাকে। তাছাড়া, BMET অনুমোদিত এজেন্সি এবং BOESL-এর মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে প্রতারণা ও অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়।
ভিসার খরচ, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া ও কোম্পানির স্পন্সরশিপ জানা থাকলে সহজে দুবাইতে কাজ শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আয়, উন্নত জীবনযাত্রা এবং পরিবারের জন্য রেমিট্যান্সের সুবিধার কারণে দুবাই বাংলাদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য।
আরো পড়ুনঃ কুয়েত কোম্পানি ভিসার খরচ ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, শর্ত ও পূর্ণাঙ্গ গাইড
সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির মাধ্যমে কর্মীরা নিরাপদে ও বৈধভাবে দুবাইয়ে কাজ করতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালোলাগলে ও উপকারি বলে মনে হলে, এটি আপনার পরিচিতদের শেয়ার করুন। তারাও যেন এটির মাধ্যমে উপকৃত হন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url