ইউরোপের কোন কোন দেশে ওয়ার্ক পাওয়া যায়? - আবেদন, যোগ্যতা, অধিক চাহিদাসম্পন্ন কাজ
আরো পুড়ুনঃ স্পেন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫। স্পেনের সেরা দর্শনীয় ৫টি স্থান
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ সালে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। উন্নত জীবনযাত্রা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ারের জন্য ইউরোপ বরাবরই আকর্ষণীয় গন্তব্য।
তাইতো, প্রতিবছর লাখো মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করেন, আর এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে, এই ভিসাটা পাওয়া মোটেও সহজ নয়। কারণ, নির্দিষ্ট যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও কঠোর যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
তাই, সঠিক প্রস্তুতি ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই ইউরোপে কাজের স্বপ্ন বাস্তব করা সম্ভব। আপনি যদি, কাজের ভিসায় ইউরোপের কোন দেশে জেতে চান, তাহলে এই প্রবন্ধটি আপনার জন্য খুবই জরুরি। তাই এটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া উপায়?
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে হলে আবেদনকারীদের অবশ্যই তার নির্বাচিত নির্দিষ্ট দেশের ভিসা নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। আর সাধারণত এই ভিসা দেওয়া হয়, দক্ষ পেশাজীবীদের, বিশেষ করে আইটি, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা খাতে কর্মরতদের।
তবে, ভিসার জন্য আবেদনে আবেদনকারির প্রাসঙ্গিক কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কাজের অভিজ্ঞতা থাকাটাও জরুরি। তাছাড়া, অনেক দেশের ক্ষেত্রেই বৈধ জব অফার লেটার অপরিহার্য এবং প্রায়শই নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ভিসা স্পন্সর করে।
প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা আলাদা শর্ত থাকলেও, সঠিক নথি, প্রমাণিত দক্ষতা, স্বাস্থ্য সনদ এবং ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকলে ইউরোপের যে কোন দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অবস্থা কী?
বর্তমানে ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিটের চাহিদা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে এবং এর পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
** উন্নত জীবনযাত্রা- ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চ বেতন ব্যবস্থা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, আধুনিক অবকাঠামো ও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা বিদেশিদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
** কাজের সুযোগ- ইউরোপের অনেক দেশে দক্ষ কর্মীর ঘাটতির কারণে, বিশেষ করে আইটি, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
** শিক্ষা ও সংস্কৃতি- ইউরোপের প্রায় দেশই শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র হওয়ায় কাজের পাশাপাশি সেখানে শিখতে ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
** ভ্রমণের সুবিধা- ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিট থাকলে শেনজেন অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে খুব সহজে ভ্রমণের সুযোগ মেলে, যা কর্মজীবনের পাশাপাশি জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।
ইউরোপের কোন কোন দেশের ওয়ার্ক ভিসা চালু আছে?
বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশেই বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রদান করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো→ জার্মানি→ ফ্রান্স→ ইতালি→ স্পেন→ পর্তুগাল→ নেদারল্যান্ডস→ সুইডেন→ ডেনমার্ক→ নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড।
প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভিসা নীতিমালা, যোগ্যতা ও প্রক্রিয়া রয়েছে। কোথাও, জব অফার অপরিহার্য, আবার কোথাও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভিসা দেওয়া হয়।
তাই, সকল আবেদনকারীদের উচিত দেশভেদে নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে জেনে নিয়ে তারপর প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করা। কারণ, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে আবেদন করলে ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়।
ইউরোপ ওয়ার্ক ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও যোগ্যতা
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫-এর জন্য আবেদন করতে দেশ ভেদে নির্দিষ্ট যোগ্যতা, শিক্ষাগত সনদ, জব অফার লেটার, অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও বৈধ পাসপোর্ট থাকা জরুরি। এসব নথি ঠিকঠাক না থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে। নিচে দেখে নেওয়া যাক ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং ডকুমেন্ট সম্পর্কে-
ইউরোপের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ সালে পাওয়ার জন্য সাধারণত, যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন হয়, তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
** শিক্ষাগত যোগ্যতা- এটি সাধারণত ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমমানের কোনো ডিগ্রি থাকতে হয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার সনদও গ্রহণযোগ্য হয়।
** কাজের অভিজ্ঞতা- সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
** ভাষাগত দক্ষতা- ইংরেজি অথবা যে দেশে কাজ করতে যাচ্ছেন, সেই দেশের ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে। এমনকি, IELTS অথবা TOEFL-এর মতো ভাষা পরীক্ষার স্কোর প্রয়োজন হতে পারে।
** বয়স- আবেদিনকারীর সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যায়।
** পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট- কোনো প্রকার ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা চলবে না।
ইউরোপের ওয়ার্ক ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ সালের জন্য আবেদনের সময় সাধারণত, যে কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়, তা নিচে আলোচনা করা হলো-
- পাসপোর্ট- কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে।
- ছবি- সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- কাজের অভিজ্ঞতার সনদ- পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার সনদ এবং নিয়োগপত্র।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ- সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ এবং সত্যায়িত কপি।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র- ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা অন্য কোনো আর্থিক দলিল।
- স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance)- ইউরোপে থাকাকালীন আপনার স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণপত্র।
- ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র- IELTS, TOEFL অথবা অন্য কোনো ভাষা পরীক্ষার সনদ।
- ভিসার আবেদনপত্র- সঠিকভাবে পূরণ করা এবং স্বাক্ষর করা ভিসার আবেদনপত্র।
- চাকরির প্রস্তাবপত্র (Job Offer Letter)- ইউরোপের কোনো কোম্পানি থেকে পাওয়া চাকরির প্রস্তাবপত্র।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট- আপনার দেশের স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
ইউরোপ ওয়ার্ক ভিসায় যেতে কোন কোন ডকুমেন্ট লাগে?
ইউরোপে যাওয়ার জন্য আবেদনকারির ভিসার ধরন ও দেশ অনুযায়ী অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে কিছু নথি প্রায় দেশ ও ভিসার সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন পড়ে। যেমন –
- নির্ধারিত মেয়াদের বৈধ পাসপোর্ট।
- পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করা ভিসার আবেদনপত্র।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও কাজের অভিজ্ঞতার সনদ।
- আবেদনকারি ভ্রমণ বা অবস্থানের খরচ বহনের সক্ষমতা প্রমাণের জন্য আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র দরকার হয়।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বীমা।
- ভ্রমণের নিশ্চয়তার জন্য প্লেনের টিকেট এবং অবস্থানের জন্য হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণপত্রও আবেদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া সহজ?
ইউরোপের পর্যায় প্রতিটি দেশেই কাজের ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায় কিন্তু, সব দেশের ভিসা পাওয়া সমান সহজ নয়। তবে, কিছু দেশ তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশি ভিসা প্রার্থীদের জন্য সহজ সুযোগ তৈরি করছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-
** পর্তুগাল- এখানে নির্মাণ, পর্যটন ও আইটি খাতে প্রচুর জনবলের প্রয়োজন, ফলে ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
** স্পেন- কিছু সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে, বিশেষত যদি স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষতা থাকে তবে আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।
** জার্মানি- দক্ষ কর্মীদের জন্য ব্লু কার্ডসহ বিভিন্ন ভিসা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, তবে জার্মান ভাষাজ্ঞান থাকা প্রায় বাধ্যতামূলক।
** ইতালি- কৃষি, পর্যটন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রচুর কর্মী প্রয়োজন হয়।
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সালে আবেদন প্রক্রিয়া
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫-এর আবেদনের জন্য সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন, প্রথমে জব অফার সংগ্রহ করা, এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত, অনলাইনে বা দূতাবাসে আবেদন, ভিসা ফি পরিশোধ এবং শেষে সাক্ষাৎকার ও ভিসা অনুমোদন। তবে, ধাপগুলো নিম্নরূপ-
ধাপ ১ঃ চাকরির সন্ধান- প্রথমত, আপনাকে ইউরোপের যে কোনো কোম্পানিতে চাকরি খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে, আপনি বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল, যেমন – LinkedIn, Indeed, অথবা Glassdoor-এর সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে আপনার সিভি জমা দিতে পারেন।
ধাপ ২ঃ আবেদনপত্র পূরণ- চাকরি পাওয়ার পর প্রার্থীকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রতিটি দেশের ভিসার আবেদনপত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই, যে দেশে আবেদন করতে চান, সেই দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৩ঃ কাগজপত্র সংগ্রহ- আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। তাই, উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন, যাতে আবেদনের সময় যেন কোনো সমস্যা না হয়।
ধাপ ৪ঃ ভিসা ফি পরিশোধ- ভিসার আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট একটি ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি পরিশোধের পর রশিদ অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হয়। ভিসার ফি দেশ এবং ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে।
ধাপ ৫ঃ ইন্টারভিউ- অনেক ক্ষেত্রে, ভিসা কর্তৃপক্ষ ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকতে পারে। আর ইন্টারভিউতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং ভাষাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে।
ধাপ ৬ঃ ভিসা সংগ্রহ- সফলভাবে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অনুমোদনের পর ভিসা ইস্যু করা হয়। ভিসা পাওয়ার পর আপনি ইউরোপে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।
কম খরচে ইউরোপের কোন কোন দেশ যাওয়া যায়?
কম খরচে ইউরোপ ভ্রমণ করার জন্য বেশ কিছু দেশ রয়েছে, যেগুলো ভ্রমণকারীদের কাছে অনেক বাজেট ফ্রেন্ডলি গন্তব্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন-
- পর্তুগাল– মনোরম সমুদ্র সৈকত, ঐতিহাসিক শহর এবং সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার কারণে পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয়।
- হাঙ্গেরি– রাজধানী বুদাপেস্ট তার দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং কম খরচের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
- চেক প্রজাতন্ত্র– প্রাগের দুর্গ, ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও রোমান্টিক পরিবেশ উপভোগ করা যায় তুলনামূলকভাবে কম বাজেটে।
- পোল্যান্ড– ওয়ারশ ও ক্রাকোর মতো শহরগুলোতে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিকতার সংমিশ্রণ দেখা যায়, আর খরচও বেশ কম।
- স্লোভাকিয়া– প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি দুর্গ এবং ঐতিহ্যবাহী শহরগুলো ঘোরার জন্য এটি একটি দারুণ ও সাশ্রয়ী গন্তব্য। এসব দেশ ইউরোপ ভ্রমণকে বাজেটবান্ধব করার জন্য ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশ সহজ শর্তে ভিসা দেয়?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কিছু দেশ রয়েছে, জেগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক সহজে ভিসা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে পর্তুগাল হলো অন্যতম, যেখানে ভিসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কড়াকড়ি নেই বলেই অনেকেই মনে করে থাকেন।
স্পেনও ভ্রমণকারীদের জন্য ট্যুরিস্ট ও স্টুডেন্ট ভিসা প্রদানে তুলনামূলক সহজ নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে। একইভাবে ইতালি ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত শিথিল রাখে, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও মৌসুমি কর্মীদের জন্য। তবে, মনে রাখা জরুরি যে ভিসার নিয়ম সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে।
তাই, ভুসা আবেদন করার আগে সর্বশেষ নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জেনে নেওয়াই হলো সবচেয়ে সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের যেসকল দেশে কাজের ভিসা পাওয়া যায়
কিভাবে শেঙ্গেন ভিসা সহজে পাওয়া যায়?
২ বছরের শেঙ্গেন ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন। বিশেষ করে, যারা প্রথমবারের জন্য আবেদন করছেন তাদের ক্ষেত্রে। তবে, বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে, যা আপনার ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ সালে পাবার সম্ভাবনা অনেকটা বাড়াতে পারে। যেমন-
** নিয়মিত ভ্রমণ করুন- যদি আপনার আগের শেঙ্গেন ভিসা থাকে এবং আপনি নিয়মিতভাবে ইউরোপ ভ্রমণ করে থাকেন, তাহলে ২ বছরের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
** দীর্ঘমেয়াদী ভিসার আবেদন- কিছু দেশ দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রদান করে, যা ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণের কারণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
** ভালো ভ্রমণ ইতিহস- আপনার যদি অন্যান্য দেশের ভিসা থাকে এবং আপনি সেসব দেশে নিয়মিত ভ্রমণ করে থাকেন, তাহলে আপনার আবেদন শক্তিশালী হবে।
** আর্থিক স্থিতিশীলতা- আবেদনকারিকে প্রমাণ করতে হবে যে, তাঁর যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য আছে এবং সে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেশে ফিরে আসবেন।
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর টিপস অনুসরণ করলে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি অনেকটা সহজ ও সফল হতে পারে। যেমন-
- আগে থেকে প্রস্তুতি নিন- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য জেনে নিন।
- ভাষা শিখুন- যে দেশে কাজ করতে চান, সেই দেশের ভাষার জ্ঞান থাকলে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
- যোগাযোগ তৈরি করুন- ইউরোপের কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে LinkedIn বা অন্যান্য পেশাগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত থাকুন।
- সঠিক তথ্য দিন- আবেদনপত্রে কোনো ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেবেন না, এটি ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন- অভিজ্ঞ ভিসা ও ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ নিলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
- ধৈর্য ধরুন- প্রক্রিয়াটি ক্ষেত্রেই সময়সাপেক্ষ, তাই ধৈর্য ধরে নিয়মিত অগ্রগতি অনুসরণ করুন।
২০২৫ সালে ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ কত?
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫-এর খরচ দেশ ও ভিসার ধরণ ভেদে ভিন্ন হয়। তবে, সাধারণত আবেদন ফি, স্বাস্থ্য বীমা, প্লেনের টিকেট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এটি কয়েক লক্ষ টাকার মতো হতে পারে। নিচে একটি আনুমানিক বা সম্ভাব্য খরচের ধারণা (বাংলাদেশী টাকায়) দেওয়া হলো-
- ভিসার আবেদন ফি- ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
- স্বাস্থ্য বীমা- ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।
- প্লেনের টিকেট- ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।
- অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি খরচ- ০৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
- থাকা-খাওয়া (প্রথম মাসের খরচ)- ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।
- মোট খরচ- ১ লক্ষ ১৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার মত।
ইউরোপে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি?
ইউরোপের সেঙ্গেনভূক্ত দেশ হওয়ার করণে, প্রায় সকল দেশেই বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশি কর্মীর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তবে, এটি দেশে ভেদে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ভিন্ন খাত অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যেমন-
- তথ্যপ্রযুক্তি (IT) খাতে সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বেশি।
- স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare) খাতে নার্স, ডাক্তার, ফার্মাসিস্টসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের প্রয়োজন হয়।
- প্রকৌশল (Engineering) খাতে সিভিল, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে।
- পর্যটন (Tourism) খাতে হোটেল কর্মী, ট্যুর গাইড ও কুকদের চাহিদা থাকে।
এছাড়াও, কৃষি (Agriculture) খাতে কৃষি শ্রমিক ও ফার্ম ম্যানেজারের মতো পেশাতেও বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর এসব খাতে দক্ষতা থাকলে ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়।
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রতারণা থেকে সাবধান
বর্তমানে ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে নানান ধরনের প্রতারণা ঘটে থাকে। কারণ, কিছু অসাধু ব্যক্তিরা ভুয়া চাকরির প্রস্তাব বা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাই, সতর্ক থাকাটা অপরিহার্য। তবে নিচের কৌশলগুলো অবলম্বন করলে, প্রতারণার হাত থেকে অনেকটা বাঁচা যায়।
কিভাবে প্রতারণা থেকে বাঁচবেন?
** অপরিচিত কাউকে টাকা দেবেন না- ভিসার জন্য আবেদন করার আগে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেবেন না।
** চাকরির প্রস্তাব যাচাই করুন- কোনো চাকরির প্রস্তাব পেলে ভালোভাবে যাচাই করুন। কোম্পানির ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য তথ্য ভালোভাবে দেখুন।
** অতিরিক্ত লোভনীয় প্রস্তাব থেকে সাবধান- যদি কোনো প্রস্তাব খুব বেশি লোভনীয় মনে হয়, তাহলে সেটি ভালোভাবে যাচাই করুন।
** দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করুন- ভিসার বিষয়ে কোনো সন্দেহ হলে সরাসরি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করুন।
শেষকথা- ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার সহজ উপয়
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বর্তমান ২০২৫ সালে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি করেছে। কারণ, উন্নত জীবনযাত্রা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ারের কারণে ইউরোপ আজও স্বপ্নের গন্তব্য।
তবে, এই ভিসা পেতে হলে সঠিক যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ধৈর্যের সাথে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি। প্রতারণা থেকে বাঁচতে নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যবহার করা ও দূতাবাসের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা সর্বাধিক নিরাপদ উপায়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায় ২০২৫
সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিলে ইউরোপে কাজ করার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে। লেখাটি যদি ভালো লাগে ও উপকারি মনে হয়, তাহলে বন্ধু ও পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এমন আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url