ইতালি ভিসা ২০২৫ - প্রকার, খরচ ও আবেদনের বিস্তারিত তথ্য

আরো পড়ুনঃ 🇪🇺 ২০২৫ সালে ইউরোপিয়ান ব্লু কার্ড ভিসা গাইড – বাংলাদেশিদের জন্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য

ইতালি ভিসার প্রকার ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। বাংলাদেশ থেকে ইতালি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও ভিসা ফি সম্পর্কে জানতে এই গাইডটি পড়ুন।

পাঠক পাঠিকাগণ আপনারা যারা, ইতালি যেতে চান এবং ইতালির বিভিন্ন ভিসা সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।

ইতালি ভিসা ২০২৫ - সকল ভিসার আপডেট তথ্য

ইতালি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ দেশ গুলোর অন্যতম এটি, যেখানে পর্যটন, শিক্ষা, ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের জন্য সারা বিশ্বের নাগরিকের ন্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। 

কেননা, বাংলাদেশিরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, যেমন ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক, ফ্যামিলি বা বিজনেস ভিসা। আর প্রতিটি ভিসার জন্য নির্দিষ্ট ফি, বৈধতার সময় এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকে। 

তাই, সঠিক তথ্য জানা ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত করে। এই নিবন্ধে আমরা ২০২৫ সালের জন্য প্রতিটি ভিসার ধরন, খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যাতে আবেদনকারীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

ইতালিতে কী কী ভিসা পাওয়া যায়?

২০২৫ সালে ইতালিতে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশিদের জন্য চালু রয়েছে বেশ কয়েকটি ভিসা ব্যবস্থা। বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কাছে প্রধান সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিসার নামের তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

  • শর্ট-টার্ম শেঞ্জেন ভিসা (Schengen Type C)।
  • স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa / D-Type)।
  • ওয়ার্ক ভিসা (Work Visa / Employment Residence Permit)।
  • ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা (Family Reunification Visa)।
  • মেডিক্যাল ভিসা (Medical Visa)।
  • রিলিজিয়াস ভিসা (Religious Visa)।
  • ট্রানজিট ভিসা (Airport Transit Visa / Type A)।
  • নিজস্ব ব্যবসা/ইনভেস্টর ভিসা (Self-Employment / Investor Visa)।

ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা - শর্ত, খরচ ও আবেদন প্রক্রিয়া

ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ সালে বিদেশি নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যারা দেশটিতে চাকরি করতে ও দীর্ঘমেয়াদি বসবাস করতে চায়। এই ভিসা সাধারণত রেসিডেন্স পারমিটের মাধ্যমে ইস্যু করা হয় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ ও থাকার অনুমতি প্রদান করে।

ইতালি ভিসা আবেদনকারীর বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং ইতালিয়ান নিয়োগকর্তা থেকে চাকরির অফার লেটার থাকা আবশ্যক। এছাড়াও, প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, আর স্বাস্থ্যবীমা

ভিসার খরচ প্রায় ১৩,৯২০ টাকা (প্রায় ১১৬ ইউরো) এবং ভিসা সেন্টার ফি প্রায় ৪,৫৬০ টাকা। প্রসেসিং সময় সাধারণত ২১ থেকে ৩০ কার্যদিবস। আর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করার মাধ্যমে। 

এরপর আবেদনকারীকে ভিসা সেন্টারে তা জমা দিতে হয়, যেখানে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ভিসা অনুমোদন হলে, বিদেশি নাগরিকেরা ইতালিতে প্রবেশ করে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারে, যা তার কাজ এবং বসবাসের বৈধতা নিশ্চিত করে। 

উপরে উল্লেখিত সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতালিতে নিরাপদ ও বৈধভাবে চাকরি করা সম্ভব হয়।

ইতালি ফ্যামিলি বা ডিপেন্ডেন্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম

ইতালি ফ্যামিলি বা ডিপেন্ডেন্ট ভিসা ২০২৫ সালে বিভিন্ন বিদেশি নাগরিকদের জন্য, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এই ভিসাটি মূলত D-টাইপ ন্যাশনাল ভিসা হিসাবে ইস্যু করা হয়ে থাকে এবং যা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের অনুমতি প্রদান করে। 

তবে, আবেদনকারীর স্বামী/ স্ত্রী, সন্তান বা অভিভাবক ইতালিতে বসবাস করতে হবে। তাছাড়া, আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা রাখেন এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান ও বাসস্থান রয়েছে।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, সম্পর্কের প্রমাণ (বিয়ের সনদ, জন্ম সনদ), আর্থিক প্রমাণ, হোটেল বা বাসস্থান বুকিং, স্বাস্থ্যবীমা, এবং ভিসা আবেদন ফি। আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রথমে ভিসা ফর্ম পূরণ এবং সমস্ত ডকুমেন্ট ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হয়। 

এছাড়াও, প্রয়োজন হতে পারে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা এবং সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এরপর ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর, আবেদনকারী ইতালিতে প্রবেশ করে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারে, যা বৈধ বসবাস নিশ্চিত করে।

ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা কতদিনের জন্য ও খরচ কত?

ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা (Schengen Type C) ২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সাধারণত ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য ইস্যু করা হয়। এটি পর্যটন, বন্ধু কিংবা পরিবারের সঙ্গে দেখা, কনফারেন্স বা সংক্ষিপ্ত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। 

ভিসার বৈধতা থাকা অবস্থায় সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যে একাধিকবার বা একবার প্রবেশাধিকার হিসেবে থাকে, যা শেঞ্জেন অঞ্চলের অন্য দেশেও ভ্রমণের সুযোগও দেয়।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পূর্ণ ভিসা আবেদন ফর্ম, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, হোটেল বা আবাসনের বুকিং, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স এবং প্রয়োজনে ফ্লাইট টিকিটের প্রমাণ

এই ভিসার ফি প্রায় ৯,২০০ টাকা (যা, প্রায় ৭৬ ইউরো) এবং ভিসা সেন্টার ফি প্রায় ৪,৫৬০ টাকা। প্রসেসিং জন্য সময় সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ কার্যদিবস। তাই, সঠিক প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিলে, বাংলাদেশি নাগরিকরা সহজেই ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে সক্ষম হন।

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা - বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৫ সালে বিদেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। এই ভিসা মূলত D-টাইপ ন্যাশনাল ভিসা হিসেবে ইস্যু করা হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে ইতালিতে দীর্ঘমেয়াদি বসবাস ও পড়াশোনা করার অনুমতি দেয়। 

শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নয়, বরং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্যও প্রযোজ্য হয়ে থাকে।

এই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তের মধ্যে অন্যতম রয়েছে, ইতালিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণ, পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা, স্বাস্থ্যবীমা এবং পর্যাপ্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা। তবে, আবেদনকারীর বয়স সাধারণত ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।

ভিসার খরচ হয় প্রায় ১৩,৩৪০ টাকা (প্রায় ১১১ ইউরো) এবং ভিসা সেন্টার ফি প্রায় ৪,৫৬০ টাকা। প্রসেসিং সময় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ কার্যদিবস। আবেদন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীকে ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত, এবং ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হয়। 

এছাড়াও, প্রয়োজন হতে পারে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা ও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর, শিক্ষার্থী ইতালিতে প্রবেশ করে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারে, যা তার বৈধ বসবাস ও শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করে।

ইতালি ইনভেস্টর বা বিজনেস ভিসা - ব্যবসায়িক ভিসার তথ্য

ইতালি ইনভেস্টর বা বিজনেস ভিসা ২০২৫ সালে বিদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেয়। এই ভিসা মূলত D-টাইপ ন্যাশনাল ভিসা হিসেবে ইস্যু করা হয় এবং উদ্যোক্তাদেরকে ইতালিতে ব্যবসা পরিচালনা ও দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের অনুমতি দেয়। 

এটি নতুন ব্যবসা স্থাপন, ইতালিয়ান কোম্পানিতে বিনিয়োগ, বা ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য প্রযোজ্য হয়। তবে, এই ভিসার জন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে, পর্যাপ্ত আর্থিক যোগ্যতা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, ইতালিয়ান ব্যাঙ্কে অর্থের স্থাপন প্রমাণ এবং ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা

আরো পড়ুনঃ কুয়েত কী কী ভিসা পাওয়া যায়? - কুয়েত কোন ভিসার খরচ কত?

আবেদনকারীর বয়স হতে হয় সাধারণত ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। ভিসার খরচ প্রায় ১৩,৯২০ টাকা (যা, প্রায় ১১৬ ইউরো) এবং ভিসা সেন্টার ফি প্রায় ৪,৫৬০ টাকা। প্রসেসিং সময় লাগে সাধারণত ২১ থেকে ৩০ কার্যদিবস। 

আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রথমে ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত এবং ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হয়। প্রয়োজনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ এবং সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর, আবেদনকারী ইতালিতে প্রবেশ করে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারে, যা তার ব্যবসা পরিচালনা ও বৈধ বসবাস নিশ্চিত করে।

ইতালি রেসিডেন্স পারমিট - স্থায়ীভাবে বসবাসের উপায়

ইতালি রেসিডেন্স পারমিট ২০২৫ সালে বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিকদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেয়। এটি মূলত D-টাইপ ন্যাশনাল ভিসা থেকে পাওয়া যায় এবং শিক্ষার্থী, কর্মী, ব্যবসায়ী বা পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য। 

রেসিডেন্স পারমিট কার্ড ধারককে ইতালিতে দীর্ঘমেয়াদি বসবাস, কাজ ও শিক্ষা করার বৈধতা দেয়। স্থায়ী বসবাসের জন্য সাধারণত ৫ বছরের বৈধ রেসিডেন্স পারমিট থাকতে হয়, এরপর বিদেশি নাগরিক লং-টার্ম ইউরোপীয় ইউনিয়ন রেসিডেন্ট হিসেবে আবেদন করতে পারে। 

তবে, আবেদনকারীর উচিত নিয়মিত আয়, কর ও সামাজিক সুরক্ষা অবদান এবং ইতালিয়ায় বসবাসের প্রমাণ থাকা। এতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্ট, বর্তমান ভিসা বা পারমিট, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, বাসস্থানের প্রমাণ এবং স্বাস্থ্যবীমা। 

এরজন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় ভিসা সেন্টারে জমা, বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করা এবং প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ভিসা অনুমোদন হলে, বিদেশি নাগরিক রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করে, যা স্থায়ী বসবাস নিশ্চিত করে।

ইতালি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও যোগ্যতা

ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আবেদনকারিকে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং যোগ্যতা পূরণ করা বাধ্যতামূলক। যারমধ্যে রয়েছে, আবেদনকারীর অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ আবেদন তারিখ থেকে অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস বেশি, থাকতে হবে। 

এছাড়াও, সম্পূর্ণ ভিসা আবেদন ফর্ম, পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স থাকা আবশ্যক। ভিসার ধরণ অনুযায়ী আরও ডকুমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। তবে, সচারাচর নিচের ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। যেমন-

  • ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য হোটেল বুকিং ও ফ্লাইট টিকিট।
  • স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ভর্তি প্রমাণপত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতা।
  • ওয়ার্ক ভিসার জন্য চাকরির প্রস্তাবপত্র ও কাজের অভিজ্ঞতা।
  • ফ্যামিলি ভিসার জন্য সম্পর্কের প্রমাণপত্র।

আবেদনকারীর বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৫৫ বছর, পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা এবং শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও আবশ্যক। তবে, সঠিক ডকুমেন্টস ও যোগ্যতা থাকলে, ইতালি ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

ইতালি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে

ইতালি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সহজভাবে সম্পন্ন করা যায় ধাপ অনুসরণ করে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

** প্রথম ধাপে- আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সঠিক ভিসার ধরণ নির্বাচন করতে হবে, যেমন হতে পারে ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক কিংবা ফ্যামিলি ভিসা। এরপর ভিসা আবেদন ফর্ম অনলাইনে বা প্রিন্ট করে পূরণ করতে হয়।

** দ্বিতীয় ধাপে- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করা জরুরি। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে যেমন- পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, হোটেল বা বাসস্থানের বুকিং, এবং প্রয়োজনে চাকরির প্রস্তাব বা ভর্তি প্রমাণপত্র

** তৃতীয় ধাপে- এই পর্যায়ে ভিসা সেন্টারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ও ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। এখানে আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

** চতুর্থ ধাপে- ভিসা ফি পরিশোধ করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর, আবেদনকারী ইতালিতে প্রবেশ করে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারে, যা তার বৈধ বসবাস ও কাজ নিশ্চিত করে।

ইতালি ভিসা ফি ও অতিরিক্ত খরচের বিস্তারিত তালিকা

ইতালির ভিসা খরচ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় ভিসার ধরণের উপর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ইতালি ভিসা ফি ও অতিরিক্ত খরচের বিস্তারিত তালিকা ২০২৫ সালে বাংলাদেশিদের জন্য নিম্নরূপ হতে পারে। যেমন-

ইতালি ভিসা ফি অতিরিক্ত খরচের বিস্তারিত তালিকা

নম্বর

ভিসার ধরন

ফি (ইউরো €)

আনুমানিক টাকা BDT

ট্যুরিস্ট ভিসা

€80 থেকে €100

10,000 থেকে 12,500

স্টুডেন্ট ভিসা

€50 থেকে €100

6,250 থেকে 12,500

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

€116 থেকে €150

14,500 থেকে 18,500

ফ্যামিলি/ডিপেন্ডেন্ট ভিসা

€100 থেকে €120

12,500 থেকে 15,000

বিজনেস/ইনভেস্টর ভিসা

€150 থেকে €200

18,500 থেকে 25,000

রেসিডেন্স পারমিট (Permesso di Soggiorno)

€80 থেকে €120

10,000 থেকে 15,000

অতিরিক্ত খরচ- ভিসা ফি ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, জেগুলোর কিছু কিছু খরচ  যুক্ত হতে পারে। যেমন-

  • মেডিকেল পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।- €50 থেকে €100।
  • বাসস্থান বুকিং বা ভাড়ার প্রমাণ- €100 থেকে €200।
  • ডকুমেন্ট অনুবাদ ও নোটারি খরচ- €50 থেকে €150।
  • ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স ও ফ্লাইট বুকিং- €80 থেকে €200।

তবে, মোট আনুমানিক খরচ ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রায় €300 থেকে €600 (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৭,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে।

ইতালি কাজের বেতন কত ২০২৫

২০২৫ সালে ইতালিতে বাংলাদেশিসহ যে কোন ডেশের শ্রমিকদের জন্য কাজের বেতন মূলত কাজের ধরন, অবস্থান এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণত বাংলাদেশি প্রবাসীরা ইতালিতে নিম্নোক্ত হারে বেতন পেয়ে থাকেন। যেমন-

** মৌসুমি বা সিজনাল কাজের ক্ষেত্রে, যেমন কৃষি খাতের শ্রমিকরা সাধারণত মাসে  €১,০০০ থেকে €১,২০০ (প্রায় ১,১০,০০০ থেকে ১,৩০,০০০) বেতন পান। 

** হাস্পাতালিটি খাতের কাজ, যেমন হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেতে ওয়েটার, কুক বা ক্লিনার হিসেবে নিয়োজিতরা প্রায় €১,২০০ থেকে €১,৫০০ (প্রায় ১,৩০,০০০ থেকে ১,৬৫,০০০ টাকা) বেতন পান।

** নির্মাণ ও উৎপাদন খাতের শ্রমিকদের বেতন সাধারণত €১,৩০০ থেকে €১,৫০০ (প্রায় ১,৪৫,০০০ থেকে ১,৬৫,০০০ টাকা) পর্যন্ত হয়।

সিজনাল ওয়ার্ক ভিসা (Type D) প্রয়োজন এবং ভিসার মেয়াদ সর্বাধিক ৯ মাস পর্যন্ত হয়। নিয়োগকর্তা অনেক সময় আবাসন ও খাবারের সুবিধা প্রদান করে এবং স্বাস্থ্য বীমা দেওয়া হয়। 

অতিরিক্ত খরচ হিসেবে ভিসা ফি, মেডিকেল পরীক্ষা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও রেসিডেন্স পারমিটের জন্য প্রায় €২০০ থেকে €৩০০ ব্যয় হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি ও অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করা সহজ হয়।

শেষকথা- ইতালি ভিসার আপডেট তথ্য ২০২৫

ইতালি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া জদিও কিছুটা জটিল হয়, তবে সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির মাধ্যমে এটি অনেক সহযে করা সম্ভব হয়। প্রত্যেক ভিসা প্রকারের জন্য নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস এবং ফি প্রযোজ্য, যা আবেদনকারীর উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। 

তাছাড়া, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং আবেদন করতে, আপনি VFS Global বা VisaHQ এর মতো অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন। সঠিক সময়ে আবেদন জমা দিয়ে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করে, আপনি ইতালি ভিসা পেতে সক্ষম হবেন।

আরো পড়ুনঃ কাজের ভিসা অস্ট্রেলিয়া ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ ও চাকরির সুযোগ

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, ইতালি ভিসা ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url