ইসলামী ব্যাংকের আমানত ২০২৫ | লাভের হার, স্কিম ও খোলার নিয়ম বিস্তারিত

আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ ব্যাংকের সঞ্চয় পণ্য ২০২৫ | Grameen Bank Savings Products 2025

২০২৫ সালে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। মুদারাবা সঞ্চয়, টার্ম ডিপোজিট, হজ সঞ্চয়, পেনশন, দ্বিগুণ আমানত সহ লাভের হার ও একাউন্ট খোলার নিয়ম সহজ ভাষায়। নিরাপদ ও শরীয়াহসম্মত সঞ্চয়ের সেরা গাইড।

ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত প্রকল্প ২০২৫ – পূর্ণাঙ্গ গাইড

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ইসলামী ব্যাংক একটি অতি সু-পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। যা, ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ব্যাংকটি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে জনগণের অনেক আস্থা অর্জন করেছে।

প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমে সুদ ভিত্তিক লেনদেন হয়, কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের সবকিছু পরিচালিত হয়ে থাকে শরীয়াহর নীতিমালা অনুযায়ী। যেখানে সুদ (Interest) ব্যবহার না করে, এর পরিবর্তে লাভ (Profit) প্রদান করা হয়ে থাকে। 

ফলে গ্রাহকের আমানতকে মনে করা হয়, ইসলামসম্মত ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয় এবং সেখান থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশকে গ্রাহকের সাথে ভাগাভাগি করা হয়। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের সারা দেশে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা এবং বিভিন্ন ধরণের আমানত প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করছে। 

এই আর্টিকেলে আমরা ২০২৫ সালের জন্য ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত স্কিম, তাদের বৈশিষ্ট্য, লাভের হার, সুবিধা এবং অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, যা আপনাকে সঠিক সঞ্চয় পরিকল্পনা বেছে নিতে সাহায্য করবে।

ইসলামী ব্যাংকের আমানত কি এবং এর কাজ করার প্রক্রিয়া কী?

ইসলামী ব্যাংকের আমানত বলতে বুঝানো হয়, গ্রাহকের জমাকৃত অর্থকে, যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শরীয়াহসম্মত উপায়ে বিনিয়োগে ব্যবহার করে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা বা আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ গ্রাহকদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

যেখানে দেশের প্রচলিত ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয়, ইসলামী ব্যাংক সেখানে লাভ-ভাগাভাগি (Profit Sharing) নীতি অনুসরণ করে। এর অন্যতম ভিত্তি হলো মুদারাবা (Mudaraba) চুক্তি, যেখানে গ্রাহক মূলধন দেন (Rabb-ul-Mal) এবং ব্যাংক তা ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ করে (Mudarib)। 

আর লাভের হার মূলত ব্যাংকের বার্ষিক আয়ের উপর নির্ভর করে, তাই এটি বছর বছর পরিবর্তিত হতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের প্রধান বিশেষত্ব হলো, এখানে বিনিয়োগ হয় শরীয়াহসম্মত খাতে, এরমধ্য অন্যতম যেমন- হালাল ব্যবসা, শিল্প, কৃষি ও উন্নয়ন প্রকল্প। 

এখানে কোনো ধরনের সুদভিত্তিক লেনদেন বা হারাম ব্যবসায় বিনিয়োগ হয় না। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের অর্থ যেমন নিরাপদে থাকে, পাশাপাশি ইসলামি নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা বৃদ্ধি পায়।

 ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা সঞ্চয় হিসাব (MSA) – সুবিধা, লাভের হার ও ব্যবহার

মুদারাবা সঞ্চয় হিসাব ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রচলিত এবং জনপ্রিয় আমানত প্রকল্প। এটি আমানত মূলত সাধারণ সঞ্চয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে গ্রাহক চাইলে যেকোনো সময় অর্থ জমা বা উত্তোলন করতে পারেন। 

এই অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ৫০০ টাকা জমা দিয়ে শুরু করা যায়, যা ছাত্র, গৃহিণী ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত। এই হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহক ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাভ পান, যার হার সাধারণত ৪.৫% থেকে ৫% এর মধ্যে থাকে। তবে, এটি ব্যাংকের বার্ষিক আয়ের উপর নির্ভর করে তা পরিবর্তিত হতে পারে।

 MSA অ্যাকাউন্টধারীরা চেকবই, এটিএম/ ডেবিট কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা পান, যা লেনদেনকে আরও সহজ করে তোলে। তাছাড়া, দৈনন্দিন লেনদেন, ছোট পরিমাণ সঞ্চয় এবং নিরাপদ অর্থ সংরক্ষণের জন্য এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি। 

বিশেষ করে যে সকল গ্রহকেরা দীর্ঘমেয়াদের জন্য নয়, বরং ধীরে ধীরে সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকের এই হিসাবটি হতে পারে কার্যকর সমাধান।

ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট (MTD) – দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের সেরা উপায়

মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট এমন একটি আমানত প্রকল্প, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা জমা রাখা হয় এবং মেয়াদ শেষে এককালীন লাভ প্রদান করা হয়। এটির মেয়াদ হতে পারে ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর, ২ বছর বা ৩ বছর পর্যন্ত। তবে, ন্যূনতম জমার পরিমাণ সাধারণত ৫০,০০০ টাকা। 

এই ধরনের আমানতের টাকার লাভের হার ,সঞ্চয় হিসাবের চেয়ে বেশি হয়, যেমন- ৫.৫% থেকে ৬.৫% পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়াও, এটি মেয়াদের দৈর্ঘ্যের উপর অনেকটা নির্ভর করে। তবে, এই হিসাব থেকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টাকা উত্তোলন করা যায় না।

সে কারণে। যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ জমা রেখে নিশ্চিত লাভ পেতে চান, তাদের জন্য এই হিসাবটি উপযুক্ত। বিশেষ করে, ব্যবসায়ী, প্রবাসী বা বড় কোন অংকের অর্থ অস্থায়ীভাবে নিরাপদে রাখতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য MTD একটি লাভজনক ও নিরাপদ বিকল্প।

ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা স্পেশাল নোটিস ডিপোজিট (MSND) – স্বল্পমেয়াদি বড় অঙ্কের আমানত

মুদারাবা স্পেশাল নোটিস ডিপোজিট (MSND) মূলত একটি বড় অংকের অর্থ স্বল্প মেয়াদে রাখার জন্য তৈরি একটি হিসাব ব্যবস্থা। এখানে ন্যূনতম ব্যালেন্স ৫০,০০০ টাকা রাখতে হয় এবং যার লাভের হার সাধারণত ৪% থেকে ৪.৫% পর্যন্ত হয়। 

 তবে, এই অ্যাকাউন্টের বিশেষ একটি নিয়ম হলো যে, টাকা উত্তোলনের ন্যূনতম ৭ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। এর ফলে ব্যাংক এই অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করে লাভ উৎপাদন করতে পারে এবং গ্রাহকও তুলনামূলক বেশি হারে লাভ পান। 

এই ধরনের হিসাব সাধারণত, বড় কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, যাদের স্বল্পমেয়াদে বড় অংকের অর্থ নিরাপদে রাখতে হয়। তাছাড়া, এর সুবিধা হলো—নিরাপদ বিনিয়োগ, তুলনামূলক ভালো লাভের হার এবং শরীয়াহসম্মত ব্যবস্থাপনা।

ইসলামী ব্যাংক হজ সঞ্চয় হিসাব – হজের জন্য পরিকল্পিত সঞ্চয় স্কিম 

মুদারাবা হজ সঞ্চয় হিসাব, এমন একটি বিশেষ ধরণের প্রকল্প, যা মুসলিম গ্রাহকদের হজের খরচ সহজে সংগ্রহ করার সুযোগ দেয়। এখানে গ্রাহক মাসিক কিংবা বাৎসরিক কিস্তি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখেন। যা, মেয়াদ শেষে হজের সম্পূর্ণ খরচ কভার করতে সাহায্য করে। 

সাধারণত, এই প্রকল্পের মেয়াদ ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে, তবে গ্রাহকের ইচ্ছা অনুযায়ী। এখানে লাভের হার, সঞ্চয় হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। কারণ, এই অর্থ দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাংকে থাকে এবং ব্যাংক এটি শরীয়াহসম্মত উপায়ে অন্যত্রে বিনিয়োগে ব্যবহার করে। 

এই হিসাবের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—গ্রাহক মেয়াদপূর্তিতে এককালীন অর্থ পান, যা দিয়ে তার হজের সব খরচ পরিশোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও, ইসলামী ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন, হজ প্যাকেজ বুকিং ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে, ফলে হজযাত্রা আরও সহজ হয়। 

তাই, যারা আগামীতে হজের পরিকল্পনা করেছেন, কিন্তু একবারে বড় অংকের টাকা জমা করতে পারছেন না, তাদের জন্য হতে পারে এই সঞ্চয় স্কিম একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।

ইসলামী ব্যাংক ওয়াদিয়া (পেনশন) সঞ্চয় – অবসরের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা

এই সঞ্চয় স্কিমটি মূলত অবসর গ্রহণের পর আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে গ্রাহক নির্দিষ্ট একটি সময় ধরে মাসিক কিস্তি জমা রাখেন এবং মেয়াদ শেষে এককালীন অর্থ অথবা মাসিক আয়ের ব্যবস্থা পান।

আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট ২০২৫ - মেয়াদ, সুদের হার ও আবেদন প্রক্রিয়া

এর মেয়াদ সাধারণত ৫, ১০, ১৫ বা ২০ বছর হয় এবং লাভের হার দীর্ঘ মেয়াদের কারণে বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলাজায়, যদি কেউ ১৫ বছর ধরে মাসিক ৫,০০০ টাকা জমা রাখেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মূলধন ও লাভসহ একটি বড় অংকের অর্থ পাবেন। 

এর মাধ্যমে তিনি অবসরের পর চিকিৎসা, দৈনন্দিন খরচ বা পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ সহজে মেটানো সম্ভব হয়। যেহেতু, ইসলামী ব্যাংকের এই স্কিম শরীয়াহভিত্তিক বিনিয়োগে পরিচালিত হয়, তাই এটি শুধু লাভজনক নয়, বরং ইসলামসম্মতও হয়। 

তাই যারা চাকরি, ব্যবসা কিংবা প্রবাসে আছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা চান, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

ইসলামী ব্যাংক দ্বিগুণ আমানত স্কিম – কিভাবে আপনি টাকা দ্বিগুণ করতে পারেন?

মুদারাবা দ্বিগুণ আমানত স্কিম অন্যতম একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে জমাকৃত অর্থ দ্বিগুণ হয়ে যায়। আটি সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণের লক্ষ্য পূরণ হয়, যা ব্যাংকের লাভের হার এবং বিনিয়োগ আয়ের উপর নির্ভর করে। 

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ৫ লাখ টাকা জমা রাখেন, মেয়াদ শেষে তা ১০ লাখ টাকা হয়ে যাবে। এই স্কিমে মাঝপথে টাকা তোলা যায় না, তবে প্রয়োজন হলে আংশিক উত্তোলনের সুযোগ কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া হয়, যা শর্তসাপেক্ষ। 

তাই, যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যবসায়ী, প্রবাসী বা ভবিষ্যতের বড় পরিকল্পনার জন্য অর্থ জমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী। এর মাধ্যমে আপনি শুধু মূলধন দ্বিগুণ করতে পারবেন না, বরং অর্থকে নিরাপদে শরীয়াহসম্মত উপায়ে বিনিয়োগে রাখতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক স্কুল ও কলেজ সঞ্চয় প্রকল্প – শিক্ষার জন্য সঠিক পরিকল্পনা

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা খরচ মেটানোর জন্য ইসলামী ব্যাংক এই বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্পটি চালু করেছে। এখানে অভিভাবকরা মাসিক বা বাৎসরিক কিস্তি আকারে অর্থ জমা রাখেন, যা মেয়াদ শেষে সন্তানদের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে কাজে আসে। 

এই প্রকল্পটি সাধারণত ৫, ৭, ১০ বা ১৫ বছরের মেয়াদে নেওয়া যায়। লাভের হার দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বেশি হয়, যা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ জমানোর সুযোগ দেয়। এই স্কিমের বিশেষত্ব হলো—এটি শিশুদের জন্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং একই সঙ্গে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে। 

গ্রাহকেরা চাইলে সন্তানের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে পারেন, যা ভবিষ্যতে তার শিক্ষা জীবনের জন্য একটি বড় সহায়তা হবে। এরজন্য ইসলামী ব্যাংক প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তাও প্রদান করে, যাতে গ্রাহক সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেন।

বিদেশি মুদ্রা হিসাব (Foreign Currency Account) – প্রবাসীদের জন্য সুবিধা

প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি মুদ্রায় আয়কারী ব্যক্তিদের জন্য ইসলামী ব্যাংক বিদেশি মুদ্রা হিসাবের সুবিধা দিয়ে থাকে। এই গ্রাহকেরা অ্যাকাউন্টে মার্কিন ডলার (USD), ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP), ইউরো (EUR) ইত্যাদি মুদ্রায় জমা রাখতে পারে। 

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—বৈদেশিক মুদ্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার জমা রাখা আমানতের মূল্যও বাড়ে। এই হিসাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন, ভ্রমণ খরচ বা বিদেশে চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচ পরিশোধ করা যায়। 

কিছু ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের জমা অর্থের উপর শরীয়াহসম্মত লাভও পাওয়া যায়, যা ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে নির্ধারিত হয়। প্রবাসীরা তাদের বৈদেশিক আয় সরাসরি এই অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারেন, যা নিরাপদ এবং কর সুবিধাপ্রাপ্ত।

২০২৫ সালের ইসলামী ব্যাংকের লাভের হার – প্রকল্পভিত্তিক তুলনা

২০২৫ সালের জন্য ইসলামী ব্যাংকের লাভের হার প্রকল্পভেদে ভিন্ন। সাধারণত সঞ্চয় হিসাবের জন্য হার থাকে ৪.৫% থেকে ৫%, টার্ম ডিপোজিটের জন্য ৫.৫% থেকে ৬.৫%, আর দীর্ঘমেয়াদি স্কিম যেমন দ্বিগুণ আমানত বা পেনশন স্কিমে কার্যকর লাভের হার আরও বেশি হয়। নিচের টেবিলে একটি আনুমানিক হার দেখানো হলো-

২০২৫ সালের ইসলামী ব্যাংকের প্রকল্প ভিত্তিক লাভের হার

কঃনং

আমানত প্রকল্প

লাভের হার (২০২৫)

মুদারাবা সঞ্চয় হিসাব

.% – %

মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট

.% – .%

মুদারাবা হজ সঞ্চয়

% – .%

পেনশন সঞ্চয় স্কিম

.% – %

দ্বিগুণ আমানত স্কিম

%+ (দ্বিগুণ ১০ বছরে)

স্কুল/কলেজ সঞ্চয়

% – .%

ইসলামী ব্যাংকে আমানত খোলার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রতিটি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেখত্রে ইসলামী ব্যংকে একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহককে নিচের নিয়ম অনুসারে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যেমন-

  • একাউন্ট ফরম পূরণ।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ পাসপোর্টের কপি জমা।
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২ কপি)।
  • ন্যূনতম জমার অর্থ প্রদান।
  • মনোনীত ব্যক্তির তথ্য (Nominee) প্রদান।

আপনি চাইলে ব্যাংক শাখায় সরাসরি বা অনলাইন আবেদন করে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এরজন্য অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে, তা একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াও শুরু করা সম্ভব, যা সময় সাশ্রয় করে।

কেন ইসলামী ব্যাংকের আমানত নির্বাচন করবেন?

ইসলামী ব্যাংক বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংক হওয়ার পাশাপাশি এর বিশেষ কিছু নিয়ম এবং সুযোগ- সুবিধা রয়েছে, যা সাচারাচর অন্যকোন ব্যাংকে পাওয়া যায় না। নিচে ইসলামী ব্যংকের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করছি, যে কারণে আমরা আমানতের জন্য ইসলামী ব্যাংককে বেছে নিব। যেমন-
  • শরীয়াহসম্মত বিনিয়োগ ব্যবস্থা।
  • তুলনামূলক নিরাপদ মূলধন সুরক্ষা।
  • লাভ-ভাগাভাগির নীতি।
  • দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত স্কিম।
  • আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা (ইন্টারনেট, মোবাইল, এটিএম)।

ইসলামী ব্যাংকের আমানত সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

ইসলামী ব্যাংকের লাভ কি নিশ্চিত?

লাভ নির্ভর করে ব্যাংকের বিনিয়োগ আয়ের উপর, তবে স্থিতিশীল আয়ের কারণে প্রায়শই কাছাকাছি হারে প্রদান হয়।

দ্বিগুণ আমানত কত বছরে দ্বিগুণ হয়?

সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছরে, লাভের হার অনুযায়ী।

হজ সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে টাকা কম পড়লে কী হবে?

গ্রাহক অতিরিক্ত অর্থ জমা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।

শেষকথা– ইসলামী ব্যাংক আমানত প্রকল্প বাছাইয়ে সঠিক পথ

ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত প্রকল্প কেবল নিরাপদ বিনিয়োগ নয়, বরং এটি শরীয়াহসম্মত অর্থনৈতিক সমাধানও বটে। এর প্রতিটি স্কিমে জন্য রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্রকল্প বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

আরো পড়ুনঃ আমেরিকা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ, বেতন ও যোগ্যতা

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত প্রকল্প ২০২৫ এর পূর্ণাঙ্গ গাইড। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা অনেক আশাবাদি। আপনার চলার পথ হোক ইসলামী শরীয়াহসম্মত, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url