কুমিল্লার ১০টি সেরা দর্শনীয় স্থান ২০২৫ – ইতিহাস, প্রকৃতি ও বিনোদনের মিলন
আরো পড়ুনঃ কিশোরগঞ্জের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান (২০২৫)
কুমিল্লা ভ্রমণে কোথায় যাবেন? জানুন কুমিল্লার সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে—ইতিহাসঘেরা শালবন বিহার, ধর্মসাগর দিঘি থেকে লালমাই পাহাড় ও ফান টাইম পার্ক পর্যন্ত সম্পূর্ণ গাইড।
কুমিল্লার জনপ্রিয় ১০ দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি জেলা কুমিল্লা। ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ এই জেলাটি বর্তমান সময়ের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
কারণ, এখানে রয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন, ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর প্রাচীন মসজিদ, প্রাকৃতিক শালবন, পাহাড়ি এলাকা এবং আধুনিক বিনোদন পার্ক। তাছাড়া, ঢাকা থেকে সহজেই যাতায়াতযোগ্য হওয়ায়, কুমিল্লা আজকাল ঘুরে দেখার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কুমিল্লার সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি দর্শনীয় স্থান, যার প্রতিটিই আপনাকে দেবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। চলুন তাহলে আমরা দেখি-
শালবন বিহার – বৌদ্ধ সভ্যতার জীবন্ত ইতিহাস
শালবন বিহার হচ্ছে কুমিল্লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিহারটি ৭ম থেকে ৮ম শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শাসকরা নির্মাণ করেন। বিশাল আয়তনের এই বৌদ্ধ বিহারে রয়েছে, ১১৫টি কক্ষ, কেন্দ্রে একটি চৌকোত্তর মন্দির ও চারপাশে আবাসন কক্ষ।
ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি খননকাজের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক ও ধ্বংসাবশেষ, যা ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাছাড়াও, শালবন বিহারের পাশেই রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর।
ময়নামতি জাদুঘর – ইতিহাস সংরক্ষণের আধার
শালবন বিহারের পাশেই অবস্থিত এই জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত রয়েছে, ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলের খননকৃত মূল্যবান নিদর্শন। যেখানে রয়েছে তাম্রফলক, পোড়ামাটির ফলক, বুদ্ধমূর্তি, প্রাচীন মুদ্রা ও অন্যান্য সামগ্রী।
এই জাদুঘরটি নিয়মিতভাবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে (তবে, মঙ্গলবার বন্ধ)। শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
কোটবাড়ি শালবন – সবুজে ঘেরা নিঃশব্দ প্রকৃতি
কুমিল্লা জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোটবাড়ি শালবন একটি মনোরম প্রাকৃতিক স্থান। এখানে রয়েছে, ঘন শালবনের মাঝে হাঁটার পথ, পিকনিকের জন্য উন্মুক্ত জায়গা এবং পাখির কিচিরমিচির শব্দ, যা আপনাকে প্রশান্তির পরশ দেবে।
পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে একদিনের ভ্রমণের জন্য এটি হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ স্থান। তবে, শীতকালে এখানে প্রচুর মানুষ পিকনিক করতে আসে।
ধর্মসাগর দিঘি – কুমিল্লা শহরের প্রাণ
এই বিশাল দিঘিটি রাজা ধর্মমাণিক্য ১৫শ শতকে খনন করেন। এটি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে (মাঝখানে) অবস্থিত। বর্তমানে এটি কেবলমাত্র পানি সংরক্ষণের উৎস নয়, বরং কুমিল্লা শহরের অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতীক।
প্রতিদিন ধর্মসাগরের পাড়ে, সকাল ও বিকেলবেলা হাঁটা, আড্ডা দেওয়া ও ছবি তোলা অনেকের কাছেন প্রিয়। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য, এটি একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ – ধর্মীয় মিলনের মহান স্থান
বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ ঈদগাহ মাঠ এটি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় এখানে লাখো মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করেন। তাছাড়া, কুমিল্লার মানুষ এই ঈদগাহ মাঠকে ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক মিলনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
মাঠের চারপাশে রয়েছে, খোলা পরিবেশ ও সুসজ্জিত গাছপালা মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে আরও মনোরম ও আকর্ষণীয়।
আরো পড়ুনঃ পঞ্চগড়ের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমূহ ২০২৫ – এক মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ গাইড
লালমাই পাহাড় – প্রকৃতি ও ট্রেকিং প্রেমীদের জন্য
কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত লালমাই পাহাড় হচ্ছে, একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চল। এখানে রয়েছে, ঘন শালবন, নানা জাতের অজানা গাছপালা ও পাখির অভয়ারণ্য। তাছাড়া, এখানে ভোরবেলা সূর্যরশ্মি ও কুয়াশার মায়াজাল এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে।
যারা ট্রেকিং ও প্রকৃতি ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী, তাদের জন্য লালমাই পাহাড় হয়ে উঠেছে এক স্বর্গরাজ্যের মতো। এটি আবার প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য।
চিওড়া শাহী মসজিদ – মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শন
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া গ্রামে, অবস্থিত ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য এক নিদর্শন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির দেয়ালে রয়েছে, প্রচুর কারুকার্য, খোদাই ও অলংকরণ।
প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদে, এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। স্থানটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক উভয় দিক থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
নবাব বাড়ি, দেবিদ্বার – জমিদারি ঐতিহ্যের ধারক
দেবিদ্বার উপজেলায় অবস্থিত এই নবাব বাড়ি, যেখানে একসময় নবাব পরিবারের আবাস ছিল। এখানে থাকা বিশাল প্রাসাদ, অন্দরমহল, নাটমন্দির, দিঘি ও মন্দির এলাকা এখনো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।
এটি আজ একটি দর্শনীয় ঐতিহ্য হিসেবে স্থানীয় ও বাইরের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যশৈলীর কারণে এটি গবেষকদের কাছেও বেশ মূল্যবান স্থান।
ফান টাইম এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক – আধুনিক বিনোদনের ঠিকানা
কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি শিশু, কিশোর ও পরিবারের সবার জন্য আদর্শ বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের রাইড, ওয়াটার পার্ক, মিনি ট্রেন, খাবারের দোকান ও খেলার মাঠ। বিশেষ করে ছুটির দিনে শিশুদের নিয়ে এখানে সময় কাটাতে অনেক পরিবার আসে।
গোমতী নদীর পাড় – প্রকৃতি ও প্রশান্তির মিলন
গোমতী নদী কুমিল্লা শহরের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত। নদীর পাড়ে বসে বিকেলবেলা হালকা হাওয়া খাওয়া কিংবা সূর্যাস্ত দেখা অনেকের পছন্দ। অনেকেই এখানে ফিশিং, নৌকাভ্রমণ বা ফটোগ্রাফি করতে আসে। শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে যেতে চাইলে গোমতী নদীর পাড় এক আদর্শ গন্তব্য।
কিভাবে যাবেন কুমিল্লা?
ঢাকা থেকে কুমিল্লা পৌঁছানো খুবই সহজ। আপনি বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করতে পারেন। নিচে এই সম্পর্কে দেখুন-
- বাসযোগে- ঢাকার সায়েদাবাদ, জিরানী, কমলাপুর কিংবা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে নিয়মিত এসি ও নন-এসি বাস ছাড়ে। জনপ্রিয় বাস সার্ভিস হলো- এন মল্লিক, তিশা পরিবহন, ইকোনো, গ্রিন লাইন, সাইদাবাদ এক্সপ্রেস। ভাড়া, ২০০–৫০০ টাকা (ধরন অনুযায়ী পরিবর্তন হয়)।
- ট্রেনযোগে- কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কুমিল্লা রুটে চলাচল করে মেইল, এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর ট্রেন। ঢাকা টু কুমিল্লা ট্রেনের সময়সূচী জানতে ক্লিক করুন ঢাকা টু কুমিল্লা ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া
- ব্যক্তিগত গাড়িতে- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে কুমিল্লায় যাওয়া যায়। কুমিল্লা শহর ঢাকার প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে।
কুমিল্লায় কোথায় থাকবেন?
কুমিল্লা শহরে ও আশেপাশে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন মান ও দামের হোটেল ও গেস্ট হাউজ। আপনি চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করে জেনে নিতে পারেন আপনার পছন্দের আবাসিক কুমিল্লার জনপ্রিয় আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া ২০২৫
শেষকথা- কুমিল্লার জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পোর্ট
কুমিল্লা জেলা শুধু একটি প্রশাসনিক অঞ্চল নয়, বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, প্রকৃতি ও বিনোদনের এক অপূর্ব মিশেল। ভ্রমণপ্রেমী, গবেষক, পরিবারসহ ভ্রমণকারী কিংবা একাকী প্রকৃতিপ্রেমী—সবার জন্যই এখানে কিছু না কিছু রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১২টি দর্শনীয় স্থান – প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ভ্রমণ গাইড
ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য রয়েছে শালবন বিহার ও নবাব বাড়ি, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য কোটবাড়ি শালবন ও লালমাই পাহাড়; আর শিশুদের জন্য ফান টাইম পার্ক। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় এটি দিনব্যাপী ভ্রমণের জন্যও উপযুক্ত।
তাই ছুটির দিনে কুমিল্লা ঘুরে এসে নিজ চোখে দেখে নিন এই জেলার গোপন সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url