বাংলাদেশের সেরা ১২টি দর্শনীয় স্থান – প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ভ্রমণ গাইড
আরো পড়ুনঃ পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সমসূচী ও ভাড়া ২০২৫
বাংলাদেশের সেরা ১২টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে এই আর্টিকেলে রয়েছে পরিচিতি, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশদ বিবরণ। কক্সবাজারের বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আর সাজেক ভ্যালির মেঘে ঢাকা পাহাড়—সবই ভ্রমণপিপাসুদের মন ছুঁয়ে যায়।
তাই, আপনি যদি বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং সেরা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে, তাহলে আপনি পুরো আর্টিকেল মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন। এসব স্থান শুধু প্রকৃতির উপহার নয়, বরং ইতিহাস ও সংস্কৃতির অসাধারণ নিদর্শন। তাই, ঘুরে আসার জন্য আদর্শ গন্তব্য জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন-
বাংলাদেশ – প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি- Bangladesh – a land of natural beauty
পুরো বাংলাদেশ জুড়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর রয়েছে। এই দেশে রয়েছে ছোট- বড় বিভিন্ন ধরণের পাহাড়, নদী, বনভূমি, হাওর-বাওর, সঙ্গে পৃথিবীর দীর্ঘতম মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত। এছাড়াও, দেশের প্রতিটি প্রান্তে লুকিয়ে আছে অসাধারণ সব দর্শনীয় স্থান। আসুন, জেনে নিই ২০২৫ সালের জনপ্রিয় ও সেরা ১২টি ভ্রমণ গন্তব্য সম্পর্কে-
সেন্টমার্টিন – বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ- Saint Martin – the only coral island in Bangladesh
সেন্টমার্টিন হলো বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যা, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপকূল অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি যদিও, নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অনেক পরিচিত। প্রায় ৮ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি শান্ত, মনোরম, কোলাহলমুক্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। প্রবাল, কাঁকড়া ও নারিকেল গাছে ভরা দ্বীপটি প্রকৃতিপ্রেমীদের যেন এক স্বর্গরাজ্য।
কক্সবাজার – পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত- Cox's Bazar – The longest sea beach in the world
চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত, প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত হিসেবে স্বীকৃত, যা বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে। এখানকার ঝাউবন, সূর্যাস্ত, নরম বালু, ও নীল জলরাশি এইসব মিলিয়ে এটি পর্যটকদের প্রথম পছন্দের তালকায় স্থান করে নিয়েছে।
সুন্দরবন – বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন- Sundarbans – the world's largest mangrove forest
খুলনা অঞ্চল বা বিভাগের সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন "সুন্দরবন''। এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যতন প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলোর একটি। এখানে থাকা বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ হাজার হাজার প্রাণী ও গাছপালায় সমৃদ্ধ রয়েছে বলে, ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়।
সাজেক ভ্যালি – মেঘে ঢাকা পাহাড়ের রাজ্য- Sajek Valley – The Kingdom of Cloud-Covered Mountains
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা অবস্থিত বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন সব পাহাড়ি এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সাজেক। এখানে দেখা যায়, ভোরবেলা আর সন্ধ্যার সময় মেঘের খেলা। যা, দূর- দূরান্তের পাহাড় প্রেমী পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি জীবনে একবার ঘুরে না এলেই নয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর – পাখিদের স্বর্গরাজ্য- Tanguar Haor – A paradise for birds
সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা অবস্থিত, টাঙ্গুয়ার হাওর হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার এলাকা, যা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর রয়েছে। শীতকালে এখানে লাখ লাখ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এই সময়ে এই হাওরটি রূপ নেয় ভ্রমণকারী ও পাখি প্রেমীদের এক জাদুকরী ভ্রমণস্থলে।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া ২০২৫
রাতারগুল জলাবন – জলের ওপর জঙ্গলের গল্প- Ratargul Wetland – The Story of a Forest on Water
বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট এলাকায় অবস্থিত, বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত মিঠা পানির জলাবন এটি। বর্ষাকালে নৌকায় করে এই বনের ভিতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভজ্ঞতা সত্যি সত্যিই অসাধারণ। তাছাড়া, এখানে থাকা হিজল-করচের গাছ আর জলরাশির মিতালী যেন, স্বপ্নের মতো এক পরিবেশ তৈরি করে।
নাফাখুম ঝর্ণা – গর্জন করে নেমে আসা জলরাশি- Nafakhum Waterfall – A roaring waterfall
চট্টগ্রম বিভাগের বান্দরবানের থানচি উপজেলা অবস্থিত নাফাখুম ঝর্ণা বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় এবং সুন্দর জলপ্রপাত। এখানে থাকা রেমাক্রীর অপরূপ দৃশ্য ও ঝর্ণার গর্জন এবং ঝরনা থেকে নেমে আসা জলরাশি এসব মিলিয়ে হয়ে উঠে এটি একটি রোমাঞ্চকর গন্তব্য স্থান।
নিঝুম দ্বীপ – নির্জন প্রকৃতির কোলে- Nijhum Island – In the lap of secluded nature
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা অবস্থিত নিঝুম দ্বীপে রয়েছে, হাজারো চিত্রা হরিণ, শুঁয়োপোকা, নানান প্রজাতির পাখি ও ম্যানগ্রোভ গাছ। জাতীয় উদ্যান হিসাবে ২০০১ সালে স্বীকৃতি পাওয়া এই দ্বীপটি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এমন মানুষের জন্য নিঃসন্দেহে এক স্বপ্নের এক জায়গা।
কুয়াকাটা – সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখার স্থান- Kuakata – A place to watch sunrise and sunset together
খুলনা অঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা অবস্থিত কুয়াকাটা বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত, যেখান থেকে খুব সহজে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখার আনন্দ উপভোগ করা যায়। তাইতো কুয়াকাটা আদর করে বলা হয় “সাগরকন্যা”। এখানকার নিরিবিলি পরিবেশের পাশাপাশি কুয়াকাটার প্যাগোডা এটিকে করেছে দারুণ এক গন্তব্য স্থান।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক – পশু-পাখির এক জীবন্ত জগত- Bangabandhu Safari Park – A living world of animals and birds
ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি হলো দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণী উদ্যান। এখানে আপনি বাঘ, সিংহ, জিরাফ, হরিণসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণীকে, স্বাভাবিক পরিবেশে ঘুরতে দেখতে পাবেন। এটি পরিবার থেকে বন্ধু- বান্ধব কিংবা অফিস স্টাগদের নিয়ে ঘুরে আসার জন্য আদর্শ স্থান।
মহাস্থানগড় – প্রাচীন বাংলার ঐতিহাসিক নিদর্শন- Mahasthangarh – Historical Monument of Ancient Bengal
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নগরী, যা বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। যদিও এটি প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের অংশ হিসেবে পরিচিত এবং এটি সমৃদ্ধ মোর্য ও গুপ্ত যুগসহ বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে। ইতিহাসপ্রেমী এবং শিক্ষা সফরের জন্য মহাস্থানগড় এক আকর্ষণীয় স্থান।
নীলগিরি ও নীলাচল – মেঘের রাজ্যে পাহাড়ের জাদু- Nilgiris and Nilachal – The magic of mountains in the kingdom of clouds
পাহাড়প্রেমীদের জন্য বান্দরবানের নীলগিরি ও নীলাচল যেন এক স্বপ্নপুরী। এখানকার মেঘে ঢাকা পাহাড়চূড়ার সঙ্গে সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তাছাড়া বর্ষাকালে সাদা মেঘের ভেলা আপনাকে মেঘের রাজ্যে নিয়ে যাবে। আপনি যদি একজন প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকেন, তাহলে জন্য এটি আদর্শ গন্তব্য।
উপসংহার:- বেরিয়ে পড়ুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে- Conclusion:- Get out and enjoy the natural beauty.
আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশের এই ১২টি স্থান আপনাকে দিতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বন্ধু- বান্ধব বা পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে অথবা নতুন কিছু আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে আজই এই সকল গন্তব্য নির্ধারণ করুন।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা টু বগুড়া ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া ২০২৫
পাঠকদের প্রতি অনুরোধ- Request to readers
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে ও উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ। ফেসবুক
ভ্রমণ হোক আনন্দময়, নিরাপদ ও মনে রাখার মতো।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url