দিনাজপুরের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ ২০২৫ – ইতিহাস, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের মিলন
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার ১০টি সেরা দর্শনীয় স্থান ২০২৫ – ইতিহাস, প্রকৃতি ও বিনোদনের মিলন
জানুন! দিনাজপুরের ১৫টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে – কান্তজিউ মন্দির, রামসাগর, রাজবাড়ি, সিংড়া বনসহ ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও ধর্মীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত বিবরণ, অবস্থান, প্রবেশ ফি ও ভ্রমণ টিপস।
দিনাজপুর জেলা পরিচিতি - ইতিহাস, প্রাকৃতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু
দিনাজপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা, যা দেশের প্রাচীন ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ধর্মীয় স্থাপনার অপূর্ব সমন্বয়। এখানকার কান্তজিউ মন্দির, রামসাগর দীঘি, নয়াবাদ মসজিদসহ বহু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে।
তাছাড়া, কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলের জেলায় শীতকালীন শাকসবজি, মৌসুমি ফল লিচু ও ধানের চাষ বিখ্যাত। ইতিহাসপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা ধর্মীয় তীর্থযাত্রী—সবার জন্যই দিনাজপুর একটি আদর্শ গন্তব্য স্থান।
আজকের এই লেখায় আমরা তুলে ধরেছি, দিনাজপুর জেলার ১৫টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যা আপনার ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। চলুন তাহলে দেখুন-
কান্তজিউ মন্দির - দিনাজপুরের ঐতিহাসিক পোড়ামাটির শৈল্পিক নিদর্শন
বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন কান্তজিউ মন্দির। এটি ১৭৫২ সালে রাজা প্রাণনাথের দৌহিত্র মহারাজা রামনাথ নির্মাণ করেন। এই মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে পোড়ামাটির ফলকে খচিত, যেখানে রামায়ণ, মহাভারত এবং কৃষ্ণলীলার দৃশ্য খোদাই করা হয়েছে।
এই স্থানটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র স্থান পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যই দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণ।
- অবস্থান- কান্তনগর, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
- ভ্রমণের সেরা সময়- নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি।
রামসাগর দিঘি ও জাতীয় উদ্যান - প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বনজ জীববৈচিত্র্যের ঠিকানা
মহারাজা রামনাথ ১৭৫০ সালের দিকে তাঁর প্রজাদের পানির কষ্ট লাঘবের জন্য, এই বিশাল আকারের দিঘিটি খনন করেন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘিগুলোর একটি। দিঘির পাড়ে রামসাগর জাতীয় উদ্যান, যেখানে হরিণ, বানর, পাখি ও নানা প্রজাতির গাছপালা রয়েছে।
পরিবার নিয়ে পিকনিক ও নৌকাভ্রমণের জন্য হতে পারে রামসাগর দিঘি ও জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ স্থান।
- অবস্থান- আউলিয়াপুর, সদর উপজেলা।
- প্রবেশ ফি- প্রাপ্তবয়স্ক ৩০ টাকা, শিশু ২০ টাকা।
দিনাজপুর রাজবাড়ি - রাজাদের প্রাচীন বাসভবনের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
দিনাজপুরের রাজাদের প্রাচীন বাসভবন ছিল এই রাজবাড়িটি। এই রাজবাড়িটি একটি স্থাপত্যশৈলীর বিস্ময়। এখানে প্রধান প্রাসাদ ছাড়াও রয়েছে নাট্যমঞ্চ, শিব মন্দির ও রাজপরিবারের ব্যবহৃত অন্যান্য ভবন। বর্তমানে এটি আংশিকভাবে ব্যবহৃত হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
অবস্থান- রাজবাড়ি রোড, দিনাজপুর শহর।
সিংড়া বন - বিরামপুরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও ভ্রমণ উপযোগী স্থান
জেলার বিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত সিংড়া বন, এটি একটি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, যা প্রায় ৩০৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এখানে রয়েছে হরিণ, বানরসহ নানা প্রজাতির পাখি এবং গাছপালা। পরিবেশ প্রেমী ও পিকনিককারীদের জন্য বনটি আদর্শ স্থান।
অবস্থান- বিরামপুর, দিনাজপুর।
চেহেলগাজী শাহী মসজিদ - মোঘল স্থাপত্যশৈলীর পবিত্র নিদর্শন
এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল মোঘল আমলে, যা আজও দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে সমাধিস্থ আছেন, বিখ্যাত দরবেশ চেহেলগাজী। মসজিদটির মোঘল স্থাপত্যশৈলী দর্শকদের আকৃষ্ট করে।
অবস্থান- চেহেলগাজী ইউনিয়ন, দিনাজপুর সদর।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি - বাংলাদেশে আধুনিক কয়লা উত্তোলনের কেন্দ্র
বাংলাদেশের একমাত্র কার্যকর কয়লাখনি হচ্ছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। এখানে আপনি কয়লা উত্তোলনের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এটি অন্যতম একটি আধুনিক শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং শিক্ষামূলক সফরের জন্য জনপ্রিয়।
অবস্থান- বড়পুকুরিয়া, পার্বতীপুর।
ঘোড়াঘাট দুর্গ ও শাহ ইসমাইল গাজী মাজার - ঐতিহাসিক দুর্গ ও পবিত্র মাজারের মিলন
ঘোড়াঘাট উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছে, যা মুঘল ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এর নিকটেই রয়েছে, হযরত শাহ ইসমাইল গাজীর মাজার। এখানে দুর্গ ও মাজার একসাথে দেখে নেওয়া যায়।
অবস্থান- ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
বিরল উপজেলার ধানচিত্র - কৃষি ও শিল্পকলার ব্যতিক্রমধর্মী সংমিশ্রণ
দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় কৃষকেরা ধানের মাধ্যমে, বিশাল মাঠজুড়ে চিত্র অঙ্কন করেন। এটি বাংলাদেশের এক ব্যতিক্রমধর্মী কৃষি-ভিত্তিক শিল্প। ফসল কাটার মৌসুমে এটি ড্রোন ও উপগ্রহ চিত্রে দারুণভাবে ফুটে ওঠে।
- দর্শন সময়- নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি।
- অবস্থান- বিরল উপজেলা।
পার্বতীপুর রেলওয়ে জাদুঘর - রেলওয়ের ঐতিহ্য ও পুরনো যন্ত্রাংশের সংগ্রহশালা
রেলওয়ের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ছোট জাদুঘরটিতে রয়েছে, পুরনো ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। রেলভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি একটি দুর্লভ ও শিক্ষণীয় স্থান, যা অতীতকে জীবন্ত করে তোলে।
অবস্থান- পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন।
ফুলবাড়ী জমিদার বাড়ি - ইতিহাসের সাক্ষী পুরনো জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী
অবস্থান- ফুলবাড়ী উপজেলা।
সুইমারডাঙ্গা বোটানিক্যাল গার্ডেন - ঔষধি ও বাহারি উদ্ভিদের সমৃদ্ধ সংরক্ষণ কেন্দ্র
প্রাকৃতিক উদ্ভিদের এক সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হলো এই উদ্যান। এখানে রয়েছে, নানান প্রজাতির গাছ, বাহারি ফুল ও ঔষধি গাছ। বর্তমানে পরিবেশপ্রেমী, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত।
অবস্থান- খানসামা উপজেলা।
নীলফামারী বাঁধ ও জলাশয় - সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রাকৃতিক পিকনিক স্পট
দিনাজপুর জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছোট নদীর বাঁধ ও আশপাশের জলাশয়গুলো স্থানীয়দের জন্য একটি জনপ্রিয় পিকনিক ও বিনোদনের স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ স্থানটি পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত।
অবস্থান- খানসামা ও পার্বতীপুর সংলগ্ন এলাকা।
হাকিমপুর শিব মন্দির - হিন্দু ধর্মীয় তীর্থস্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, যেখানে প্রতিবছর ধর্মীয় উৎসব ও পূজা-অর্চনার আয়োজন হয়। এ স্থানটির রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, যা বহু বছর ধরে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
অবস্থান- হাকিমপুর (হিলি)।
বাসুদেবপুর শালবন - প্রাকৃতিক বনভূমিতে সাজানো হাঁটার পথ ও ফটোগ্রাফির জনপ্রিয় স্থান
প্রাকৃতিক শালবনে ঘেরা এই স্থানে রয়েছে সাজানো হাঁটা পথ ও সবুজ বনজ পরিবেশ। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়, আর ফটোপ্রেমীদের জন্য একটি জনপ্রিয় লোকেশন যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য ধরা দেয় প্রতিটি ফ্রেমে।
অবস্থান- নবাবগঞ্জ উপজেলা।
রানীর দিঘি - ঐতিহাসিক পিকনিক স্পট ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্র
“রানীর দিঘি” নামে পরিচিত এই ঐতিহাসিক দিঘিটি এক সময় কোনো রানীর দ্বারা খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ স্থানটি বর্তমানে পিকনিক ও অবসর সময় কাটানোর জন্য জনপ্রিয় এক বিনোদনকেন্দ্র।
অবস্থান- বিরল উপজেলা।
দিনাজপুরে কোথায় থাকবেন? - আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের তালিকা ও বুকিং তথ্য
দিনাজপুর জেলা শহরে স্বল্প, মাঝারি ও উন্নতমানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য। আপনি চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করে বিস্তারিত তথ্য ও রুম বুকিং সংক্রান্ত সুবিধা পেতে পারেন। দিনাজপুরের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া ২০২৫
দিনাজপুরে কি খাবেন? - কাটারী ভাত, গরুর মাংস ও অন্যান্য স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের বিবরণ
দিনাজপুর তার কাটারী ভাত ও সুস্বাদু গরুর মাংসের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। শহরের বিভিন্ন স্থানীয় রেস্টুরেন্টে মিলবে কাচ্চি, চাইনিজ ও দেশি খাবারের বাহারি আয়োজন। ভোজনরসিকদের জন্য এটি এক আদর্শ গন্তব্য, যেখানে স্থানীয় স্বাদে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url