ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ ২০২৫। ইংল্যান্ড কৃষি কাজের বেতন কত ২০২৫

২০২৫ সালে লন্ডন কৃষি কাজের ভিসা আবেদনের নিয়ম, খরচ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নির্ধারিত এজেন্সি ও আয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের এই পূর্ণাঙ্গ গাইডে।

হ্যাঁ, আমাদের পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যারা ইংল্যান্ড বা লন্ডনে কৃষি ভিসা সম্পর্কে যানার জন্য গুগলে সার্চ করেছেন, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এটি একটু সময় করে মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।

লন্ডন কৃষি ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ ২০২৫

ইংল্যান্ডের রাজধানী হলো লল্ডন, যা ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক একটি কেন্দ্র। এই দেশে বা শহরে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলেও, এখানে কৃষি খাতে বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা তুলনা মূলক অনেক বেশি। 

 তাই, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই, প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক ইংল্যান্ডে কৃষি কাজের জন্য নিযুক্ত হন। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, কিভাবে ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসা আবেদনের নিয়ম, কি যোগ্যতা লাগে, ভিসার খরচ, বেতন ও কোথা থেকে আবেদন করবেন। চলুন দেখি-

ইংল্যান্ড কৃষি কাজের ভিসা কি?

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা, যাকে বলা হয় সিজনাল ওয়ার্কার ভিস। এই ভিসাটি মূলত মৌসুমী কৃষি কাজের জন্য দেওয়া হয়। এই ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত হয় (নবায়নযোজোগ্য) এটি আবেদনকারীকে ফসল তোলা, গ্রীনহাউজের কাজ, চাষাবাদ বা গবাদি পশুর যত্ন নেওয়ার মতো কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়।

ইংল্যান্ড কি ধরনের কৃষি কাজ করতে হয়?

ইংল্যান্ডে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ করতে হয়। তবে, সাধারণত সেখানে কৃষি ভিসায় যাওয়া প্রবাসীদের নিম্নের কাজগুলো বেশি করতে হয়। যেমন-
  • ফলমূল বা শাকসবজি সংগ্রহ।
  • কৃষিজ উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ।
  • ফার্ম হাউসে পশু পালনের কাজ।
  • গম, আলু, টমেটো চাষে সহায়তা।
  • গ্রীনহাউজ বা ফুলের বাগানে কাজ।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার যোগ্যতা কি লাগে?

ইংল্যান্ডে কৃষি ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে চাইলে, ইংল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী আপনার কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। নিম্নে ইংল্যান্ডে কৃষি ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনের যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
  • শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা ও পরিশ্রমী হতে হবে।
  • প্রাথমিক পর্যায়ের একাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • ইংরেজির মৌলিক যোগাযোগ দক্ষতা (ভালো হলে অগ্রাধিকার)।
  • নির্ধারিত নথিপত্র থাকতে হবে।

ইংল্যান্ড কৃষি কাজের বেতন ২০২৫

২০২৫ সালে ইংল্যান্ড কৃষি কাজের বেতন অনেকটা নির্ভর করে কাজের ধরণ, সময় এবং নিয়োগদাতা কোম্পানির ওপর। তবে, সাধারণত, সেখানে কৃষি শ্রমিকরা প্রতি ঘণ্টায় £১০ থেকে £১২ পর্যন্ত আয় করতে পারেন। 

যা, একজন শ্রমিক যদি প্রতি সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৬০ ঘণ্টা কাজ করেন। তবে, মাসিক আয় দাঁড়াবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,২০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা। অতিরিক্ত সময় বা ওভারটাইম কাজ করলে আয় আরও বাড়নো সম্ভব। 

এছাড়াও, যদি বসবাস ও খাওয়ার ব্যবস্থা কোম্পানি দেন, তবে খরচ কম হয়, ফলে সঞ্চয় বেশি হয়। তবে, বেতন কোম্পানি ও কাজের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তাই, যাওয়ার আগে চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে নেওয়া জরুরি।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসায় যেতে চাইলে আপনার অবশ্যই সেখানকার কৃষি ভিসা থাকতে হবে। তবে, ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসা পেতে চাইলেও, ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা আবেদন করতে হবে। কিন্তু, আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই ইংল্যান্ডে কৃষি ভিসার জন্য, কি কি কাগজপত্র লাগবে তা জানা জরুরি। 

কারণ, ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা আবেদন করার সময় আপনার যদি, কোন কাগজপত্র ভুল হয় তাহলে, আপনার ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসা আবেদন বাতিল করে দেওয়া হবে। তাই, এখন আমরা জানাবো ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে।

  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
  • পূর্বের কৃষি কাজের প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার সনদ।
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি।
  • চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সত্যায়িত চারিত্রিক সনদ।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার ব্যালেন্স)।
  • কৃষি পরিচয়পত্র (যদি থাকে)।
  • ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট।
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার জন্য নির্ধারিত নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্সি

ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসার জন্য তাদের নির্ধারিত ৬ (ছয়) টি ভিসা এজেন্সি রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আপনি সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। যেমন-

  1. AG Recruitment & Management
  2. Fruitful Jobs
  3. Concordia Ltd
  4. RE People Ltd
  5. Asha Sram Samadhan
  6. Pro-Force

উল্লেখ থাকে যে, এ ছাড়া অন্য কোনো এজেন্সির মাধ্যমে কখনোই আবেদন করা যাবে না, যদি না তারা এই ছয়টি কোম্পানির অনুমোদিত প্রতিনিধি হয়ে থাকে।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার খরচ ২০২৫

ইংল্যান্ডে কৃষি ভিসা পাওয়ার জন্য, খরচ সাধারণত কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়। নিচে টেবিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে কৃষি ভিসার খরচ দেখুন- 

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার ধাপে ধাপে খরচ ২০২৫

ক্রঃনং

খরচের ধরণ

আনুমানিক খরচ

 ০১

ভিসা প্রক্রিয়াকরণ

৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা

০২

বিমানের টিকিট

১.৫০ থেকে ৫ লক্ষ টাকা

০৩

মেডিকেল ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স

২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা

০৪

অন্যান্য-ডকুমেন্টেশন,এজেন্সি ফি)

৫০ হাজার - ১ লক্ষ টাকা

মোট খরচ- প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা হতে পারে

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কি?

ইংল্যান্ড কৃষি কাজের জন্য যেতে চাইলে, সেখানকার কৃষি ভিসা থাকা প্রয়োজন। আর ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে, নির্দিষ্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হলো https://www.agrecruitment.eu। নিচে ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার ধাপ দেখুন।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা আবেদনের ধাপ

  • প্রথমে তাদের ওয়েবসাইটে যান।
  • “Jobs” বা “Apply Now” সেকশনে যান।
  • পছন্দসই কৃষি কাজটিকে নির্বাচন করুন।
  • আবেদন ফর্ম পূরণ করুন (নাম, ইমেইল, জাতীয়তা, কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি)।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন।
  • ইমেইলে বা ফোনে কোম্পানি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা নিয়ে কত আয় করা যায়?

কৃষি ভিসা নিয়ে ইংল্যান্ড গেলে আপনি সাধারণত প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা বা তার বেশি আয় করতে পারবেন। আপনার যদি দক্ষতা, কোম্পানি এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করতে পারেন, তাহলে আয় আরও বেশি হতে পারে।

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন (FAQ)

কৃষি ভিসা কতদিনের জন্য দেওয়া হয়?

ইংল্যান্ডের কৃষি ভিসা সাধারণত ৬ থেকে ১২ মাসের জন্য দেওয়া হয়।

ভিসার মেয়াদ শেষে আবার আবেদন করা যাবে?

হ্যাঁ, নির্দিষ্ট সময় পর আপনি পুনরায় আবেদন করতে পারবেন এবং সেটি নবায়ন করতে পারবেন।

কৃষি কাজে ইংল্যান্ড যাওয়ার জন্য ইংরেজি জানা কি বাধ্যতামূলক?

এর সহজ উত্তর হলো না। তবে, মৌলিক যোগাযোগ জানলে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।

ভিসা বাতিল হলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে?

এটি আপনার এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই, সঠিক এজেন্সি নির্বাচন করা জরুরি।

শেষকথা- ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার তথ্য ২০২৫

ইংল্যান্ড কৃষি ভিসা ভিসা ২০২৫ সালে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য অন্যতম একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাই, যাদের কৃষি কাজ করার আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা আছে, তারা নির্ধারিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে স্বল্প খরচে মাধ্যমে, ইউরোপের উন্নত দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। 

আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাকে ইংল্যান্ড কৃষি ভিসার আবেদন থেকে শুরু করে খরচ, ডকুমেন্টেশন ও আয়ের ধারণা পেতে সাহায্য করবে। আপনার প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করুন বা নির্ভরযোগ্য ভিসা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আরো পড়ুনঃ দুবাই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ – প্রসেসিং, বেতন, খরচসহ বিস্তারিত

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি উপকারি মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের পেজ ফলো করে সঙ্গে থাকুন। আমাদের ব্লগের নাম বা ঠিকানা Tiretx

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • MAHMUD
    MAHMUD 8 July 2025 at 21:33

    একটা বিষয় আমার মাথায় ধরে না, আমি যাচ্ছি কামলা কাটতে, আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার এমাউন্ট চায় কোন যুক্তিতে? আমার কাছে ২০ লাখ টাকা থাকলে ওখানে কেন কৃষি কাজ করতে যাব?
    এরা কি আসলে কৃষি কাজ করতে যেতে বলে নাকি আমাদের টাকা ডাকাতি করার ফন্দি আঁটে?

  • MAHMUD
    MAHMUD 8 July 2025 at 21:39

    বেতন হবে ১২০০০০ -১৫০০০০ এর মতো। ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করেকৃষি কাজ করার জন্য কেন আমাকে ইংল্যান্ড যেতে হবে? সিজনাল ভিসা হবে মাত্র ৬-১২ মাসের। এই ১২ মাসে আমার টাকা উটবে? একটু বুঝিয়ে বললে উপকৃত হব।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url