ঈদুল আজহা ২০২৫- কবে, কেন এবং কিভাবে পালিত হবে – গুরুত্ব ও ফজিলত জানুন

আরো পড়ুনঃ শবে কদরের রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রিয় পাঠক পাঠক পাঠিকাগণ সবাইকে ঈদুল আজাহার আগাম শুভেচ্ছা, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব ঈদুল আজাহা বা কোরবানির ঈদ ২০২৫ কত তারিখে, ঈদুল আজাহার গুরুত্ব ও ফজিলত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।

ঈদুল আজাহা বা কোরবানীর ঈদ মুসলমানের জন্য অনেক আনন্দের। তাছাড়া, মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসবের একটি হলো কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আজাহা। ঈদুল ফিতরের ন্যায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা উৎসব মুখর পরিবেশে এটিও পালন করে থাকে। ঈদুল আজাহা ২০২৫ ধর্মীয় নিয়মে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে পালিত হয়।

তাই, সঠিকভাবে আগাম ঈদের তারিখ বলা অনেকটা মুসকিল। তবে, বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে, অনেকটাই সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে আগাম তারিখ বলা। আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে, আধুনিক ক্যালেন্ডারে যে সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়েছে, তা থেকে ১ দিন আগে বা পরে হতে পারে।

ইদ উল আজাহা ২০২৫ এর সম্ভাব্য তারিখ

২০২৫ সালে ঈদ উল আজাহা আগামি জুন মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে, জিলহজ মাসের চাঁদ যদি ২৮ মে দেখা না যায়, তাহলে ঈদ ১দিন পর ৮ তারিখে হবে, আর যদি চাঁদ ২৭ মে দেখা যায় তাহলে ঈদ উল আজাহা ৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।

আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, ঈদের তারিখ সঠিকভাবে বেধে দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়, কারণ ঈদ পালন করা হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। তাই, আমদের বেঁধে দেওয়া সময়ে যদি চাঁদ না উঠে, তাহলে আপনাদের ভূল তথ্য দেওয়া হবে। সে কারণে, সঠিক তারিখ দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব হয় না।

ঈদ উল আযহা ২০২৫ সালে কোন মাসে?

আমরা খুব সহজে বলতে পারি যে, ২০২৫ সালে ঈদ উল আজাহা জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুন মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও, ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকার চাঁদ দেখে ঈদের তারিখ ঘোষণা করে থাকেন।

ঈদ উল আজাহার গুরুত্ব ও ফজিলত

পবিত্র ইসলাম ধর্মে ঈদ উল আজাহার গুরুত্ব ফ ফজিলত অনেক। নিম্নে এই সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- 

ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মহোৎসব

ইসলাম ধর্মে যে দুটি ঈদ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো ঈদ উল আজাহা। এই ঈদ জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়, যা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি। অনেকে এই ঈদকে কোরবানির ঈদ বলে, কারণ এই দিনে মুসলমানেরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করেন।

ঈদ উল আজাহার ইসলামিক পটভূমি

ঈদ উল আজাহা বা কুরবানির মূল পটভূমি হজরত ইব্রাহীম (আঃ) ও প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আঃ) এর কুরবানির ঘটনা থেকে। মহান আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে হজরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর প্রিয় পুত্রকে কুরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের পরীক্ষাকে কবুল করেন ও এর পরিবর্তে একটি পশু কুরবানির নির্দেশ দেন। তাঁর আত্মোৎসর্গের স্মরণেই ঈদ উল আজাহায় কুরবানির বিধান এসেছে।

ইসলামে ঈদ উল আজহার গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে ঈদুল আজহা অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ত্যাগ, আনুগাত্য ও তাকওয়ার প্রতিক। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেন, কুরবানীর পশু তাঁর নিদর্শন, এতে রয়েছে কল্যাণ (সূরা হজ্জ ৩৬)। মহান আল্লাহর আদেশে হব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বদলে একটি পশু কুরবানী দান করেন (সূরা ছাফফাত ১০৭)।

আরো পড়ুনঃ নামাজের জন্য সহজ ১০ সূরা বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ

কুরবানি দেওয়া প্রসঙ্গে রাসূলে পাক (সঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি সমর্থ থাকা সর্তেও, কোরবানি না করেন, সে যেন ঈদগাহে না আসে। তিনি ও সাহাবীগণ নিয়মিতভাবে কুরবানি করতেন (ইবনু মাজাহ)। তাই, কুরবানি শুধু পশু জবাহ নয়, বরং আত্মত্যাগের শিক্ষা। এই সম্পর্কে নিম্নে আরো পড়ুন-

আল্লাহর নির্দেশ পালনের প্রতীক 

ঈদ উল আজহা আমাদের শিখায় যে, আল্লাহর আদেশের প্রতি কিভাবে পূরণ আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়, এমনকি সেটি যদি আপনার সবচেয়ে প্রিয় ত্যাগ করার দাবি দোলে।

** ত্যাগের আদর্শ- এই ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় সহমর্মিতা, আত্মত্যাগ ও আত্মসংযমের। কোরবানির পশু শুধু মংস খাওয়ার জন্য নয়, এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অন্যতম একটি আত্মিক উৎসর্গ।

** হজের সঙ্গে সম্পর্ক- উদ উল আজহা হজের অন্যতন অংশ। সকল হজ যাত্রীরা নিয়ম অনুযায়ী পশু কুরবানি দেন। তাছাড়া সারা বিশ্বের মুসলমানেরাও, নিজ নিজ স্থান থেকে তারা কুরবানি পালন করেন এবং হজের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার অংশীদার হন।

** গরীবের প্রতি সহানুভূতিকুরবানি করা পশুর মাংসের বড় একটি অংশ দরিদ্র মানুসের মাঝে বিলি করা হয়, যা সামাজিকভাবে সমতা এবং সহানুভূতির বাস্তব একটি রূপ।

ঈদ উল আজহার ফজিলত

ঈদুল আজহা ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মরনীয় এক ইতসব, যা হজরত ইব্রাহীম (আঃ), তাঁর স্ত্রী হাজেরা এবং পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর উপর পরম আনুগত্যের নিদর্শন। হজরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বলা হয়েছে মুসলিম জাতির পিতা (সূরা হজ্জ আয়াত ৭৮)। আর জাতীর পিতার আদর্শ অনুসরন করে মুসলমানেরা কুরবানী করেন মহান আল্লাহর অন্তুস্টি অর্জনের জন্য।

আর এই মাসেই হজ্জ পালিত হয়, যেখানে মুসলিম উম্মাহ ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকেন। তাই, ঈদুল আজহা কেবল আনন্দ নয়, বরং এটি আত্নীক পরিশুদ্ধি ও তাওহীদের প্রতীক। কুরবানির মাধ্যমে মুসলমানেরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন, তাদের প্রিয় বস্তু ত্যাগ করে। কুরবানি হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর আত্নত্যাগের স্মারক এবং মহান আল্লাহর পথে নিবেদনের প্রতীক। এছাড়াও-

আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ

পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, কুরবানির দিনে মানুষ যা কিছু করে, তার মধ্যে মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো পশু কুরবানি করা"। (তিরমিজি)

** গুনাহ মাফ- হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, "পশুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি লেখা হয় এবং এটি কিয়ামতের দিন আমাদের কাছে হাজির হবে সাক্ষী হিসাবে।

** নিয়তের গুরুত্ব- কুরবানির মূল বিসয় হলো নিয়ত, কারণ কুরবানির পশুর মাংস বা রক্ত মহান আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না, পৌঁছায় কেবল মাত্র আমাদের নিয়ত ও তাকওয়া। সূরা হজ- আয়াত ৩৭)।

** সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি- কুরবানির মাধ্যমে ধনী- গরিবের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদ্রিঢ় হয়, যা সমাজে সহানুভূতি ও মানবিকতা গড়ে ওঠে।

ঈদুল আজহা আত্মত্যাগের নিদর্শন- শেষকথাঃ 

ঈদুল আজহা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি মুসলমানদের ঈমান, আত্মত্যাগ, আনুগত্য এবং মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন। পবিত্র এদিনে আমাদের সকলের উচিত কুরবানির মাধ্যমে কেবল পশু নয়, আমাদের মনের অহংকার, লোভ, হিংসা প্রভৃতিরও কুরবানি দেওয়া।

আরো পড়ুনঃ দোয়া কুনুত আরবী বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ বিস্তারিত

আল্লাহ যেন আমাদের এই আত্মত্যাগ কবুল করেন এবং আমাদের জীবনে ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা বাস্তবায়িত করার তাওফিক দান করেন—আমিন। আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে ও উপকারি বলে মনে হলে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url