ক্যানসার রোগের সাধারণ লক্ষণ কি?- ক্যানসার প্রতিরোধের ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর উপায়
ক্যানসার যে একটি ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগ, একথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। শরীরে ক্যানসার আক্রান্ত হলে, শরীরের কোসগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে অতি দ্রুত বৃদ্ধি করে এবং বিভাজনের মাধ্যে ঘটে থাকে।
শরীরের বিভিন্ন কোষের গঠণ বা কার্যক্রম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে, ক্যানসার রোগের সৃষ্টি হয়, যার কারণে, শরীরের কোসগুলো বৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিক উপায়ে এবং পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে।
এই রোগের কারণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে এবং ক্ষতি সাধন করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ- প্রতঙ্গের। ক্যানসার শরীরের যে কোন অঙ্গে হতে পারে, যেমন- লিভার, ফুসফুস, পাকস্থলী, স্তন, রক্ত, মস্তিস্ক, ত্বক, জরায়ু ইত্যাদি স্থানে।
এই রোগ যেমন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ- প্রতঙ্গে হয়, তেমনি এর লক্ষণ এবং কারণও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "ক্যানসারের লক্ষণ, কারণ এবং এই রোগ প্রতিরোধে ঘরোয়া কিছু উপায় সম্পর্কে। চলুন দেখি-
এই রোগ যেমন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ- প্রতঙ্গে হয়, তেমনি এর লক্ষণ এবং কারণও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "ক্যানসারের লক্ষণ, কারণ এবং এই রোগ প্রতিরোধে ঘরোয়া কিছু উপায় সম্পর্কে। চলুন দেখি-
ক্যানসার রোগের সাধারণ লক্ষণ কি?- What are the common symptoms of cancer?
ক্যানসার রোগের লক্ষণ সাধারণত নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং অবস্থার উপর। তবে, কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ রয়েছে, যেমন- গাঁঠ বা ফোলা, হঠাত ওজন কমে যাওয়া, রক্তপাত, ত্বকে পরিবর্তন, স্থায়ী ব্যথা, দীর্ঘদিন ধরে কাশি এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি। এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত নিম্নে দেখুন-
*** অস্বাভাবিক রক্তপাত বা স্রাব- প্রসাব বা পায়খানার সময় যদি রক্ত দেখা যায় বা মেয়েদের মাসিকের সময় ছাড়াও, ভারী স্রাব বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হয়, তবে এটি হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ। আবার নাক, মুখ বা কানে রক্তপাত হওয়াও হতে পারে সতর্কতার সংকেত।
*** দীর্ঘদিন ধরে কাশি বা গলা বসে যাওয়া- যদি ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে কাশি থাকে এবং এর সঙ্গে রক্ত বের হয়, তবে এটি হতে পারে ক্যানসারের সাধারণ একটি লক্ষণ। তাছাড়াও, গলার সমস্যা, গলার ক্রমাগত ক্ষতি বা খুশখুশ শব্দ এটি হতে পারে ক্যানসারের ইঙ্গিত।
*** অস্বাভাবিকভাবে ফোলা বা গাঁঠ- শরীরের যে কোন স্থানে যদি হঠাত করে দেখা দেয় ফোলা বা গাঁঠ, তাহলে সেটি হতে পারে সাধারণ কোন রোগের প্রতিক। বিশেষকরে স্তন, বগল, গলা, পেট ইত্যাদি স্থানে ফোলা বা গাঁঠ দেখা গেলে, তা দ্রুত পরীক্ষা করা জরুরী।
*** দীর্ঘদিন যাবত ব্যথা- যদি শরীরের যে কোন অংশে দীর্ঘদিন যাবত বা বারবার ব্যথা হয়, যেমন মাথায়, পিঠে, পেটে বা হাড়ে, তহলে এটি কোন গুরুতর সমস্যার অঙ্গিত বহন করতে পারে। এই ধরণের ব্যথা ক্যানসারের অন্যতম একটি সাধারণ লক্ষণ।
*** দীর্ঘদিন বা চিরস্থায়ী ক্লান্তি- যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি ক্লান্তি দূর না হয়, তবে তা হতে পারে ক্যানসারের সম্ভাব্য লক্ষণ। কারণ, শরীরের কোষগুলির অস্বাভাবিক কার্যক্রমের ফলে, শরীরে সৃষ্টি হতে পারে শক্তির অভাব।
*** হঠাত করে ওজন কমে যাওয়া- যদি বিশেষ কোন ব্যায়াম বা ডায়েট ছাড়াই, ওজন অস্বাভাবিক হারে কমে যায়, এটি ক্যানসারে পূর্বসংকেত হতে পারে। এই ধরণের লক্ষণ সাধারণত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
*** ত্বকের পরিবর্তন- ত্বকের রঙ বা তিলের পরিবর্তন, শুকাতে অনেক দেরি হয়, নতুন নতুন তিল গজানো ইত্যাদি। এই সম্পর্কিত লখণগুলি হতে পারে ক্যানসার সূচনার।
*** ত্বকের পরিবর্তন- ত্বকের রঙ বা তিলের পরিবর্তন, শুকাতে অনেক দেরি হয়, নতুন নতুন তিল গজানো ইত্যাদি। এই সম্পর্কিত লখণগুলি হতে পারে ক্যানসার সূচনার।
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো শরীরের দেখা গেলে, দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরী।
ক্যানসার রোগের সম্ভাব্য কারণ কি?- What are the possible causes of cancer?
ক্যানসার রোগ সৃষ্টির জন্য বিশেষ কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যেমন মদ্যপান, ধুমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, ভাইরাস সংক্রামণ, স্থূলতা অন্তর্ভুক্ত, বিষাক্ত বা রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এবং জিনগত কারণ, ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন-
** অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাবাস- বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুকি বাড়ে। আবার ক্যানসার রোগের ঝুকি বৃদ্ধি করে অধিক পরিমাণে প্যাকেটজাত ও ফাস্টফুট খাবার অধিক পরিমাণে খাওয়ায়।
** জিনগত কারণ- ক্যানসার রোগে যদি আপনার পরিবারের কেই আক্রান্ত থাকে, সেক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আপনারও বাড়তে পারে। কারণ, ক্যানসারের উপসর্গ চলে আসে জিনগতভাবে।
** মদ্য পান- অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়, যেমন লিভার, মুখগহ্বর এবং স্তনের। কারণ, অ্যালকোহল শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে শরীরের কোষের উপর।
** জিনগত কারণ- ক্যানসার রোগে যদি আপনার পরিবারের কেই আক্রান্ত থাকে, সেক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আপনারও বাড়তে পারে। কারণ, ক্যানসারের উপসর্গ চলে আসে জিনগতভাবে।
** মদ্য পান- অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়, যেমন লিভার, মুখগহ্বর এবং স্তনের। কারণ, অ্যালকোহল শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে শরীরের কোষের উপর।
আরো পড়ুনঃ নাক ডাকার কারণ ও লক্ষণ এবং নাক ডাকা প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায়
** ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন- ফুসফুস, খাদ্যনালি, মুখ, গলা, প্যানক্রিয়াস ইত্যাদি অঙ্গে ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়। ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ ধুমপান।
** রাসায়নিক ও জীবাণু সংক্রমণ- অনেক ভাইরাস রয়েছে ক্যানসারের সৃষ্টি করে, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস "বি এবং সি" ইত্যাদি।
** বিষাক্ত ও রাসায়নিক পদার্থ- ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায় দীর্ঘদিন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ, যেমন অ্যাজবেস্টস, বেনজিম, কীটনাশক ইত্যাদি।
** অধিক ওজন বা স্থূলতা- অতিরিক্ত মেদ বা ওজন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় ক্যানসারের ঝুকি, বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যানসার।
** ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন- ফুসফুস, খাদ্যনালি, মুখ, গলা, প্যানক্রিয়াস ইত্যাদি অঙ্গে ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়। ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ ধুমপান।
** রাসায়নিক ও জীবাণু সংক্রমণ- অনেক ভাইরাস রয়েছে ক্যানসারের সৃষ্টি করে, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস "বি এবং সি" ইত্যাদি।
** বিষাক্ত ও রাসায়নিক পদার্থ- ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায় দীর্ঘদিন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ, যেমন অ্যাজবেস্টস, বেনজিম, কীটনাশক ইত্যাদি।
** অধিক ওজন বা স্থূলতা- অতিরিক্ত মেদ বা ওজন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় ক্যানসারের ঝুকি, বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যানসার।
ক্যানসার প্রতিরোধের ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর উপায়- Home and healthy ways to prevent cancer
ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী বা মরণ রোগ হিসাবে পরিচিত। ক্যানসারের চিকিৎসা করা অনেক কঠিন হইয়ে পড়ে, যদি সঠিকভাবে নির্ণয় না হয়। যে কোন ব্যক্তির জীবণে ক্যানসারের সমস্যা হতে পারে এবং এটি শরীরের যে কোন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে।
ক্যানুসার যদি প্রথমিক পর্যায়ে সঠিক ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং অনেক ক্যানসার আছে যার ভালো চিকিৎসা করা যেতে পারে। তাছাড়া, চিকিৎসাগতভাবে এই রোগের তীব্রতা কমানোর জন্য অনেক গবেষণা চলছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অনেক রোগী রয়েছে, যাদের সফল বা সার্থকভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন ক্যানসারের রোগী যুক্ত হচ্ছেন তালিকায়। বেশ কিছু স্ক্রীনিং পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে, অনেক ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য।
তবে, একটি কথা প্রমাণিত যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক ভালো। বর্তমানে এই রোগের প্রতিষেধক আবিস্কারের জন্য অনেক গবেষণা করা হচ্ছে, বিভিন ক্যানসার এবং প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন চিকিৎসা।
তবে, জোর দিয়ে বলা যায় যে, ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিম্নে ক্যানসার প্রতিরোধের কিছু ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর উপায় সম্পর্কে জানুন-
*** স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তোলা- প্রতিদিন বিভিন্ন মৌসুমি ফল, বাদাম, শাকসবজি, লাল চাল, ডাল, ছোলা এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ুন। তাছাড়া, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরী গুণ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন হলুদ, আদা, রসুন ইত্যাদি গ্রহন করুন।
*** নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা- প্রতি বছর কমপক্ষে একবার পূর্ণ শরীর পরীক্ষা করুন। তাছাড়া, বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন স্ক্রিনিং টেস্ট, যেমন স্তন পরীক্ষা, কলোনোস্কোপি, প্যাপ স্মিয়ার ইত্যাদি জরুরী।
*** মানসিক চাপ কমানো- প্রিয় কাজ করা বা হালকা গান শোনা, যোগব্যায়াম, ধ্যান, ইত্যাদি মানুষিক চাপ কমায়, যা সাহায্য করে শরীর সুরক্ষায়।
*** ত্বক রক্ষা করুন- সরাসরি বাইরের রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রীন ব্যবহার এবং দুপুরের তাপ থেকে নিজের ত্বককে রক্ষা করা উচিত।
*** বিরত থাকা ধূমপান ও মদ্যামান থেকে- ক্যানসারের ঝুকি প্রায় ৭০ ভাগ কমে যায় অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যাপান থেকে বিরত থাকলে।
*** বিভিন্ন ভ্যাকসিন গ্রহণ- হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এবং HPV প্রতিরোধী টিকা গ্রহন করলে অনেকটাই কমে যায় ক্যানসারের ঝুকি।
*** নিয়মিত ব্যায়াম- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০/৪০ মিনিট হাটা-চলা বা ব্যায়াম ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
ক্যানসার থেকে বাঁচার উপায়- শেষকথাঃ Ways to avoid cancer
ক্যানসার যদিও একটি ভয়ংকর রোগ, তবুও সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে এবং যদি প্রাথমিক দিকে ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসা করা সম্ভব। তাছাড়া, সাধারণ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা সাহায্য করতে পারে ক্যানসারের ঝুকি কমাতে।
প্রতিদিনের অভ্যাসে আমরা যদি কিছুটা সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং ভালো খাদ্যাভাস অনুসরণ করতে পারি, তাহলে এই রোগ থেকে আমরা অনেকটা রক্ষা পেতে পারি। অমরা নিজের, পরিবারের এবং সমাজের জন্য সচেতন হব, সুস্থ্য থাকব এবং সুস্থ্যজীবণ যাপন করব, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই যেনে গেছেন, "ক্যানসার রোগের লক্ষণ, কারণ এবং ক্যানসার প্রতিরোধের ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর উপায়" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url