মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এর চিকিৎসা ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এর চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে মেয়েদের কমন একটি রোগ হল অনিয়মিত মাসিক। এই নিয়মিত মাসিকের সম্ভাব্য কারণ সকলের ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ কারণগুলির মধ্যে জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত যেমন মানসিক চাপ শরীরের ওজন এবং ধূমপানের অবস্থা ইত্যাদি।
সূচিপত্রঃ মেয়েদের অনিয়ন্তিকা মাসিক কেন হয় এর চিকিৎসায় ও প্রতিকার
- ভূমিকা
- অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ
- মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
- অনিয়মিত মাসিক হলে করণীয়
- অনিয়মিত মাসিক কেন হয়
- অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
- নিয়মিত মাসিকের প্রতিকার
- শেষ কথা
ভূমিকাঃ
প্রতিটি মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যখন এক মাস হওয়ার আগেই হয় বা প্রতিমাসে হয় না অথবা দুই মাস পর পর হয় তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। অনিয়মিত পিরিয়ড নারীদের জটিল সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা খাবারে অতিরিক্ত রাসায়নিকের প্রয়োগ, প্যাকেট খাবার,অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম,অনিয়ন্ত্রিত ঘুম এগুলো অনিয়মিত মাসিকের প্রধান লক্ষণ হতে পারে এবং এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এই লক্ষণগুলো।
অল্প বয়সে নারীদের অনিয়মিত মাসিকের অন্যতম কারণ পলিসিস্টিক ওভারে ডিজিজ। আমাদের আজকের নাটকের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এর চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে। আপনি যদি এ বিষয়ে না জেনে থাকেন তবে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণঃ
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ হচ্ছে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পর ঋতুস্রাব হয়। এছাড়া পিরিয়ড চলাকালীন কারো কারো মাত্রাতিরিক্ত তলপেটে ব্যথা অনুভব করে। অনেকের মেজাজ খিটখিটে হয় আবার বেশি সময় ধরে রক্তপাত হতে পারে এ সময় এবং আগের চেয়ে পরিমাণে বেশি রক্ত যেতে পারে ওজন বেড়ে যেতে পারে আপনার। এছাড়া-
- পুষ্টিকর খাবারের অভাবে
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে
- মানসিক চাপ থাকলে
- অতিরিক্ত কফি পান করলে
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে
- অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকলে ইত্যাদি
কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে আবার অনেক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যেমনটি ইনজেকশন ব্যবহার করলেও পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণঃ
মেয়েদের বেশ কিছু কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। অনিয়মিত মাসিকের কারণে দুই ধরনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে প্রধান সমস্যা হলো-আপনার যদি অনিয়মিত মাসিক হয় তবে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গর্ভধারণ কমে যাবে। চলুন নিম্নে জেনে নেই অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণগুলো-
- জরায়ু টিউমার
- ওজন বেড়ে যাওয়া
- মানসিক চাপ
- পলিসিস্টিক অভারিয়ান সিন্ড্রেম
- ইন্ডোমেট্রিওসিস
- থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য ইত্যাদি।
এছাড়াও অনিয়মিত মাসিকের কারণে দুই ধরনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে, এগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হল-
- সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমে যায়
- অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হয়ে থাকে
অনিয়মিত মাসিক হলে করণীয়ঃ
অনিয়মিত মাসিক হলে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে-
- যাদের ওজন স্বাভাবিক চেয়ে অনেক বেশি তাদের ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
- প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- প্রতিদিন নিয়ম করে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
- এবং আপনাকে আরেকটা জিনিস ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন রোগের ক্ষেত্রেই শুরুতেই আপনি কোন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
- ফাস্টফুড বা জ্যাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে
- নিয়ম করে রোজ ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে
- আর একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন যে কোন রোগের ক্ষেত্রে শুরুতেই পরামর্শ নিতে হবে।
অনিয়মিত মাসিক কেন হয়ঃ
বর্তমান সময়ে অল্প বয়সী নারীদের অনিয়মিত মাসিকের অন্যতম কারণ হলো পলিস্টিক অভারি ডিজিজ। সাধারণত অনিয়মিত মাসিক হয় ওভারে ডিজিজ বা ডিম্বাশয়ে মালার মত অনেক ছোট ছোট সিস্ট হওয়ার কারণে। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মেয়েদের এই রোগটা মেয়েদের রক্তে অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
সাধারণত যখন মেয়েলি হরমোন থেকে পুরুষালী হরমোনের উৎপাদন বেশি হয়ে যায় তখন ডিম্ব গুলোর সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হয় না এবং সঠিক সময়ে মাসিকের মাধ্যমে বের না হয়ে সিস্ট আকারে ওভারজিতে জমা হয়। এভাবে অনেক সিস্ট জমা হয়ে অভারের আকার বড় করে ফেলে। যার কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে থাকে এতে জরায়ুর ভেতরের পর্দা টাও মোটা হয়ে যায়।অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসাঃ
অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসার জন্য আপনাকে প্রথমে শনাক্ত করতে হবে আপনার রোগের কারণ গুলো এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। যেমন পলিপ বা টিউমার হলে সেগুলো রিমুভ করতে হবে সে অনুযায়ী চিকিৎসা এবং ক্যানসার হয়েছে কিনা সেটা সনাক্ত করে চিকিৎসা নির্ধারণ করতে হবে।
অনিয়মিত পিরিয়ড হলে রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য হিমোগ্লোবিন লেভেল দেখে মুখে খাবার আয়রন ট্যাবলেট আয়রন ইনজেকশন প্রয়োজন এর শরীরের রক্ত দিতে হবে। এছাড়াও ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য উচ্চ মাত্রার প্রোজেস্টেরন হরমোন এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল দেওয়া যেতে পারে। যদিও অনিয়মিত মাসিক কোন রোগ বা অন্তর্নিহিত রক্ত পা্ত জনিত ব্যাধির কারণে হয় তাহলে ডাক্তার প্রথমে প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা করবেন এবং তারপর মাসিক চক্রের ওপর এর প্রভাব দেখতে পাবেন।
প্রতিটি মহিলাদেরই উচিত একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা। ধূমপান ত্যাগ করা এবং অত্যাধিক অ্যালকোহল শ্রবণ সীমিত করা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং প্রেম করা উচিত যা মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে উপকারী হতে পারে। যদি অনিয়মিত পিরিয়ড ফেলোপিয়ান টিউব ব্লকেজ বা জরায়ুর ফাইব্রয়েডের মত জরায়ুতে কিছু কাঠামোগত সমস্যার কারণে হয় তাহলে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ করা যেতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের প্রতিকারঃ
অনিয়মিত পিরিয়ড নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একটি দিক। নিয়মিত পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে থেকেই শাকসবজি,ফলমূল, টক দই খেতে হবে। আপনার পিরিয়ড যদি সময়ের একভাবে সপ্তাহ আগে শুরু হয় তবে গাজর,কলা, আপেল, পেয়ারা,শসা ইত্যাদি খেতে পারেন। এছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ড শুরু হলে তেল জাতীয় খাবার চা-কফি তরল পানীয় ডিমের কুসুম এ সকল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা অনিয়মিত পিরিয়ড শুরু হলে তৎক্ষণিক একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং অনিমিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে খাবার পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে। আপনি যখন অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাবেন তখন আপনাকে সাধারণত হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হবে।
কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয় তবে ডায়েট ও ব্যায়াম করতে বলা হবে। অনেকের ক্ষেত্রে মেয়ের পাশাপাশি মাকেও পরামর্শ কাউন্সিলিং দেওয়া হয় আর সন্তান ধারণ ক্ষম বয়সে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে বেশি রক্তপাত হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সকল ওষুধ শ্রবন করা উচিত। মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন চলুন নিম্নে জেনে নেই-
- যদি বছরে তিনবারের বেশি ঋতুস্রাব না হয়।
- ঋতুস্রাবের সময় বেশি রক্তপাত হলে।
- ঋতুস্রাবের সময় খুব ব্যথা হলে।
- যদি ঋতুস্রাব ২১ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হয়।
- সাত দিনের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব হলে।
অনিয়মিত মাসিক হলে আপনার জীবন যাপনের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন-
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- পুষ্টিকর স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পরিণত পরিমাণের রক্ত থাকে।
- মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে সব সময়।
শেষ কথাঃ মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এর চিকিৎসা ও প্রতিকার
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে যখন আপনার মাসিক অনিয়মিত হচ্ছে তখন শুরুতেই আপনি একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিন। অনিয়মিত মাসিক হয় বিশেষ করে কিশোরী বা তরুণীদের। এই অসুখটা কিশোরীদের হলে বাড়ির বড়রা প্রায় বলে থাকে এর কোন চিকিৎসা নেই। এটা বলে চুপ থাকা যাবে না কারণ এটা বলে যদি আপনি চুপ থাকেন তবে পরবর্তীতে সেই কিশরীর বন্ধত্বের মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।সেজন্য অনিয়মিত মাসিক দেখা দিলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের আজকের আর্টিকেল এর মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনার কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url