দুবাই কোম্পানি ভিসা পাওয়ার উপায় (সরকারি ও বেসরকারি)
দুবাইয়ে কোম্পানি ভিসা মূলত বর্তমান সময়ে দুইভাবে পাওয়া যায়, যেমন— সরকারি (Government Sector) ও বেসরকারি (Private Sector) মাধ্যমে। নিচে এব্যাপারে বিস্তারিতভাবে দেখুন-
দুবাই সরকারি উপায়ে কোম্পানি ভিসা
যারা দুবাইয়ের সরকারি সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুযোগ পান, তাদের ভিসা সরাসরি সরকারি দপ্তরের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এ ধরনের ভিসায় নিরাপত্তা বেশি, চাকরির স্থায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদি এবং সুবিধাও তুলনামূলক ভালো। সাধারণত স্বাস্থ্য বীমা, আবাসন, যাতায়াত ভাতা ও পরিবার আনার সুযোগ থাকে।
দুবাই বেসরকারি উপায়ে কোম্পানি ভিসা
বেসরকারি খাতে নিয়োগকর্তা কোম্পানি নিজেই কর্মীর ভিসার ব্যবস্থা করে। এটি Construction, IT, Real Estate, Hospitality, Healthcare ও Free Zone কোম্পানির মাধ্যমে বেশি দেওয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানি ভিসার ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্মীর Offer Letter, Labor Contract, Medical Test, Emirates ID ইত্যাদি সম্পন্ন করে ভিসা ইস্যু করে।
তবে, ভিসা পাওয়ার জন্য সঠিক কোম্পানি নির্বাচন করা, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবহার এবং জাল কাগজপত্র এড়িয়ে চলা জরুরি। সরকারি হোক বা বেসরকারি, উভয় ক্ষেত্রেই ভিসার মেয়াদ সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর এবং তা নবায়নযোগ্য।
দুবাই কোম্পানির বেতন কত টকা
বিশ্বের অন্য সকল দেশের ন্যায়, দুবাইয়ে কোম্পানির বেতন নির্ভর করে কর্মীর কাজের ধরণ, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর। তবে, ২০২৫ সালে এসে সেখানে গড়ে বাংলাদেশি কর্মীরা মাসে ৭০ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
- অদক্ষ শ্রমিক (Helper, Cleaner, Loader ইত্যাদি)- মাসিক বেতন প্রায় ৭০০ থেকে ১,০০০ দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় ২১,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা)।
- নির্মাণ শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান- গড় বেতন ১,২০০ থেকে ১,৮০০ দিরহাম (৩৬,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকা)।
- ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড, সেলস স্টাফ- ১,৮০০ থেকে ২,৫০০ দিরহাম (৫৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকা)।
- হসপিটালিটি ও সুপারভাইজার লেভেল- ২,৫০০ তেকে ৪,০০০ দিরহাম (৭৫,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা)।
- প্রফেশনাল (ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, অ্যাকাউন্টেন্ট)- ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ দিরহাম (১,৫০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা)।
- ম্যানেজার বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা- ১০,০০০+ দিরহাম (৩,০০,০০০ টাকারও বেশি)।
বিঃদ্রঃ সাধারণত কোম্পানিগুলো ভিসাধারীদের ফ্রি বাসস্থান, খাবার, স্বাস্থ্য বীমা ও পরিবহন সুবিধা দিয়ে থাকে, ফলে আসল বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত সাশ্রয় হয়।
আরো পড়ুনঃ ফ্রান্সের মৌসুমি কৃষি কর্মী ভিসা ২০২৫ - আবেদন, বেতন, জোগ্যতা ও যাওয়ার উপায়
দুবাই কোম্পানি ভিসার খরচ ২০২৫
দুবাই কোম্পানি ভিসার খরচ মূলত নির্ভর করে কাজের ধরণ, ভিসার মেয়াদ এবং কোম্পানি সরকারি না বেসরকারি তার উপর। আর সাধারণত ভিসার মূল খরচ কোম্পানিই বহন করে, তবে বাংলাদেশ থেকে যারা যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সি বা প্রসেসিং চার্জ যোগ হয়।
- ভিসা প্রসেসিং ফি- প্রায় ৩,০০০ থেকে ৪,৫০০ দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৯০,০০০ থেকে ১,৩০,০০০ টাকা)।
মেডিকেল টেস্ট ও এমিরেটস আইডি ফি- প্রায় ৮০০ থেকে ১,০০০ দিরহাম (২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা)।
টিকিট ও অন্যান্য খরচ- সাধারণত ৪০,০০০ থেকে ৬০,০০ টাকা (কখনো কোম্পানি দেয়, কখনো কর্মীকে দিতে হয়)।
সব মিলিয়ে দুবাইয়ে একজন কর্মীর জন্য ১,৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে, যদি নিয়োগকর্তা সব খরচ বহন করে, তাহলে কর্মীকে কেবল এজেন্সি চার্জ বা ব্যক্তিগত খরচ বহন করতে হয়।
দুবাই কোন কাজের চাহিদা বেশি
দুবাইয়ে ২০২৫ সালে শ্রমবাজারে বিভিন্ন খাতে বিদেশি কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা যাচ্ছে নির্মাণ খাতে (Construction Workers, Electrician, Plumber, Welder ইত্যাদি) কারণ, নতুন অবকাঠামো ও বিল্ডিং প্রজেক্ট চলমান রয়েছে।
তাছাড়া, হসপিটালিটি ও সার্ভিস সেক্টরে (ওয়েটার, হোটেল স্টাফ, কুক, হাউজকিপার) প্রচুর শ্রমিক নিয়োগ হয়। এছাড়াও, ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড, সেলস স্টাফ ও ডেলিভারি কর্মীরও চাহিদা বেশি।
আবার পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে, আইটি বিশেষজ্ঞ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, নার্স, অ্যাকাউন্টেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফদের জন্যও ভালো সুযোগ রয়েছে। দুবাইয়ের ফ্রি জোন কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও টেকনিক্যাল স্কিল সম্পন্ন কর্মীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সার্বিকভাবে বলতে গেলে, দুবাইয়ে অদক্ষ থেকে শুরু করে দক্ষ ও পেশাজীবী, সব ধরনের চাকরির সুযোগ দুবাইয়ে রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা নির্মাণ, সার্ভিস ও স্বাস্থ্য খাতে।
দুবাই ভিসা এম্বাসির ঠিকানা (ঢাকা, বাংলাদেশ) – ২০২৫
বাংলাদেশ থেকে দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারিকে ঢাকায় অবস্থিত আমিরাত দূতাবাস বা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হয়। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হলো-
সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের ঠিকানা- প্রগতি সরণি, বারিধারা কূটনৈতিক এলাকা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। এখান থেকে সরাসরি ভিসা ইস্যু করা হয় না, তবে ভিসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র যাচাই ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
VFS Global Visa Application Centre (UAE Visa)-ঠিকানা- ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, গুলশান-২, ঢাকা।
এখান থেকে ট্যুরিস্ট, ভিজিট, ট্রানজিটসহ বিভিন্ন ধরনের ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হয়। কাজের ভিসার ক্ষেত্রে সাধারণত দুবাইয়ের নিয়োগকর্তা কোম্পানি অনলাইনে ভিসা প্রসেস করে দেয়, তবে ডকুমেন্ট যাচাইয়ের জন্য দূতাবাস বা ভিসা সেন্টারে যোগাযোগ করতে হয়।
দুবাই ভিসা আবেদন করার ধাপসমূহ
দুবাই কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করতে এবং সফলভাবে ভিসা ফেতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে ধাপগুলো পর্যায় ক্রমে আলোচনা করা হলো-
- প্রথমে দুবাইয়ের কোন কোম্পানি বা স্পন্সর থেকে চাকরির অফার লেটার সংগ্রহ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন (পাসপোর্ট, ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সনদ ইত্যাদি)।
- নিয়োগকর্তা অনলাইনে ভিসা আবেদন জমা দেবে।
- এম্বাসি বা VFS Global Visa Centre (গুলশান-২, ঢাকা) থেকে মেডিকেল ও ডকুমেন্ট যাচাই সম্পন্ন করতে হবে।
- ভিসা অনুমোদন হলে পাসপোর্টে স্টিকার বা ই-ভিসা প্রদান করা হয়।
- এরপর বিমান টিকিট কেটে দুবাই যাত্রা করা যায়।
সরকারি কিংবা বেসরকারি, যেকোনো ভিসার ক্ষেত্রেই সঠিক কাগজপত্র ও অনুমোদিত কোম্পানির মাধ্যমে আবেদন করাই হলো সবচেয়ে নিরাপদ।
দুবাই কোম্পানি ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
দুবাই কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখতে হয়। সাধারণত সচারাচর যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় তা হলো-
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)।
- নিয়োগকর্তা প্রদত্ত অফার লেটার/চাকরির চুক্তিপত্র।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) / জন্ম সনদ।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট (স্বাস্থ্য পরীক্ষা)।
- কোম্পানির পক্ষ থেকে ইস্যুকৃত ভিসা অনুমোদনপত্র (Entry Permit)।
- বিমান টিকিট বুকিংয়ের কপি (কখনো কখনো প্রয়োজন হয়)।
তবে, মনে রাখবেন, ভিসা প্রসেসে কোম্পানিই মূলত ডকুমেন্ট জমা দেয়। তবে, প্রার্থীকে নিজের ব্যক্তিগত কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। ভুল বা জাল কাগজপত্র দিলে ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শেষকথা- দুবাই কোম্পানি ভিসা পাওয়ার উপায় ২০২৫
দুবাই কোম্পানি ভিসা ২০২৫ সালে এসে বাংলাদেশিদের জন্য (বিশেষ করে যারা) বড় সুযোগের পথ উন্মুক্ত করেছে। তাই, ভিসার ধরন, জনপ্রিয় কোম্পানি, বেতন, খরচ এবং আবেদন প্রক্রিয়া জানা থাকলে সহজে ভিসা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ নিউজিল্যান্ড কৃষি ভিসা ২০২৫ – আবেদন প্রক্রিয়া, কাজের ধরন ও সুবিধা
সরকারি বা বেসরকারি যে কোন কোম্পানি থেকে আবেদন করলেও সঠিক কাগজপত্র এবং অনুমোদিত এজেন্সি ব্যবহার করলে ঝুঁকি কমে। কর্মীরা বেতন ছাড়াও বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেয়ে থাকেন। সঠিক প্রস্তুতি এবং ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে কাজ করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url