বাংলাদেশ থেকে মিশর ভিসা ২০২৫ - ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট ও ওয়ার্ক ভিসার পূর্ণ গাইড

পড়ুনঃ সুইডেন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫- আবেদন, বেতন, খরচ ও চাহিদাসম্পন্ন চাকরি গাইড

২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মিশর ভিসার সম্পূর্ণ গাইড। ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক, বিজনেস ও ট্রানজিট ভিসার ধরন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি, আবেদন প্রক্রিয়া, প্রসেসিং সময় ও টিপস একসাথে।

হ্যাঁ আমাদের প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যারা বিভিন্ন কারণে মিশরের ভিসা পেতে চান বা মিশরের ভিসা সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য আজকের এই প্রবন্ধটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের পড়ুন।

বাংলাদেশ থেকে মিশর ভিসা ২০২৫ – বাংলাদেশিদের মিশর ভিসার সম্পূর্ণ গাইড

আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও সমৃদ্ধ দেশ মিশর (Egypt), যা পিরামিড, নীল নদ, মরুভূমি এবং ইসলামি ঐতিহ্যের জন্য বেশ বিশ্ববিখ্যাত। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো মানুষ মিশরে যান- কেউ ভ্রমণ করতে, কেউ পড়াশোনার জন্য, আবার কেউবা ব্যবসা বা চাকরির উদ্দেশ্যে।

তবে, মিশরে ভ্রমণ বা অবস্থানের জন্য বিদেশি বা বাংলাদেশিদের ভিসা আবশ্যক। আর ভিসার ধরন অনুযায়ী কাগজপত্র, আবেদন প্রক্রিয়া, ফি ও শর্ত আলাদা হয়ে থাকে। মিশরের জনপ্রিয় ভিসাগুলোর মধ্যে রয়েছে— ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, বিজনেস ভিসা ও ট্রানজিট ভিসা। 

যেখানে ট্যুরিস্ট ভিসায় সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ দিন থাকার অনুমতি মেলে। স্টুডেন্ট ভিসায় আল-আজহারসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা যায়, আর ওয়ার্ক ভিসার জন্য চাকরির অফার লেটার ও সরকারের অনুমোদন দরকার হয়। 

তাই, মিশরে ভিসা পেতে সাধারণত পাসপোর্ট, ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও মেডিকেল রিপোর্ট লাগে। ভিসা প্রসেসিং-এ সাধারণত সময় ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস, আর ফি ভিসার ধরনভেদে ২৫–১০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। 

ভিসা প্রারথীর সঠিক কাগজপত্র জমা ও নিয়ম মেনে আবেদন করলে বাংলাদেশিদের জন্য মিশর ভিসা পাওয়া তুলনামূলক অনেক সহজ।

কেন মিশরে ভ্রমণ করবেন? 

মিশর পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার একটি দেশ। যেখানে হাজার বছরের ইতিহাস, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ইসলামি ঐতিহ্যের কারণে দেশটি পর্যটন, শিক্ষা, ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেকেই মিশরে যান নানা উদ্দেশ্যে। নিচে মিশর যাওয়ার কারণ সম্পর্কে দেখুন-

ঐতিহাসিক স্থান- মিশরকে বলা হয় ফারাওদের বা নীলনদের দেশ। এখানে রয়েছে বিখ্যাত গিজার পিরামিড, স্ফিংক্স, লুক্সর টেম্পল, কায়রো মিউজিয়াম এবং অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য বয়ে আনে বা তৈরি করে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

** ইসলামি শিক্ষা- মিশর রয়েছে বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘ দিনের ইতিহাসকে বহন করছে। তাইতো, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে, বিশেষ করে ধর্মীয় জ্ঞান ও আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য।

** সাশ্রয়ী ভ্রমণ খরচ- তাছাড়া, ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় মিশর ভ্রমণ অনেক বেশি খরচ সাশ্রয়ী। এখানে হোটেল, খাবার ও যাতায়াত খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় শিক্ষার্থী, পর্যটক এবং গবেষকদের জন্য অন্যতম একটি উপযোগী একটি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

** ব্যবসা ও ট্রেড- ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মিশর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেছে। যেখানে ব্যবসায়ীদের জন্য এখানে নতুন নতুন বাজার খোলার সুযোগ রয়েছে।

** চাকরির সুযোগ- নির্মাণ, পর্যটন, কৃষি ও পরিষেবা খাতে বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের জন্য মিশরে রয়েছে, বিভিন্ন চাকরির সুযোগ। সেখানে দক্ষ কর্মী ও শ্রমিক উভয়ের জন্যই কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।

সব মিলিয়ে ইতিহাস, শিক্ষা, ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের কারণে মিশর বাংলাদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় এক ভ্রমণ ও কর্মস্থল।

মিশরের ভিসার ধরন

বাংলাদেশ থেকে মিশরে ভ্রমণ, পড়াশোনা, ব্যবসা কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে, কাজের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভিসা নিতে হয়। আর প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা শর্ত ও সুবিধা রয়েছে। নিচে মিশরের বিভিন্ন ভিসা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

মিশর ট্যুরিস্ট ভিসা

মিশরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, নীল নদ, মরুভূমি ইত্যাদিতে ছুটি কাটানোর জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হয়। এই ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ দিন। এর মাধ্যমে একবারে প্রবেশ (Single Entry) বা একাধিকবার প্রবেশ (Multiple Entry) সুবিধা পাওয়া যায়।

মিশর বিজনেস ভিসা

মিশরের ব্যবসায়িক ভিসা হলো এমন একটি ভিসা, যা ব্যবসায়ীদের অফিসিয়াল কাজের জন্য দেওয়া হয়। এটি মূলত মিটিং, কনফারেন্স, ট্রেড ফেয়ার বা বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। তবে এই ভিসায় চাকরি বা আয় করা যায় না।

মিশর স্টুডেন্ট ভিসা

মিশরের স্টুডেন্ট ভিসা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়াশোনার সুযোগ দেয়। বিশেষ করে, বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় যা, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পড়াশোনার সময়সীমা পর্যন্ত এই ভিসা বৈধ থাকে এবং প্রয়োজনে পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবায়ন করা যায়।

মিশর ওয়ার্ক ভিসা

মিশরে চাকরির জন্য ওয়ার্ক ভিসা বাধ্যতামূলক। এ ভিসা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি মিশর সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন পেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিসা প্রদান করা হয়।

মিশর ট্রানজিট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ বা আফ্রিকার অন্য দেশে ভ্রমণের সময় মিশরের কায়রো হয়ে যাত্রা করলে, স্বল্প সময় অবস্থানের জন্য ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন হয়। এ ভিসা সাধারণত ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেওয়া হয় এবং শুধুমাত্র বিমানবন্দর ট্রানজিট বা সংক্ষিপ্ত অবস্থানে ব্যবহার করা যায়।

তবে, প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা আলাদা কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে, যা সঠিকভাবে প্রস্তুত করলে ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।

মিশর ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বাংলাদেশ থেকে মিশরের ভিসা পেতে হলে ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যেমন ব্যবসায়িক, স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক বা ট্রানজিট ভিসার জন্য আলাদা কাগজপত্র দরকার হয়। প্রতিটি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া ও শর্ত ভিন্ন হওয়ায় আগে থেকেই সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। নিচে মিশরের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

আরো পড়ুনঃ ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ | ইউরোপে কোন কাজের বেতন কত? 

ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য

  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
  • পূর্ণাঙ্গ ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)।
  • গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • এয়ার টিকিট বুকিং কপি।
  • হোটেল বুকিং কনফার্মেশন বা স্থানীয় বাসিন্দার আমন্ত্রণপত্র।
  • ভিসা ফি (প্রায় ২৫ থেকে ৫০ মার্কিন ডলার পর্যনজন।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য

  • বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদরাসা থেকে অফার লেটার।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (SSC/HSC বা সমমান)।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্ট।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শিক্ষার খরচ চালানোর সক্ষমতার প্রমাণ)।

ওয়ার্ক ভিসার জন্য

  • নিয়োগদাতার কাছ থেকে চাকরির অফার লেটার।
  • মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন।
  • প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত সনদপত্র।
  • মেডিকেল রিপোর্ট।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিটি কাগজপত্র অবশ্যই সঠিক, হালনাগাদ এবং সত্য হতে হবে। কারণ, ভুল কিংবা ভুয়া কাগজপত্র জমা দিলে ভিসা প্রত্যাখ্যান হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে মিশর ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া

মিশরের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়, এরপর আবেদন ফর্ম পূরণ করে দূতাবাসে জমা দিতে হয়। সবকিছু যাচাই শেষে সাক্ষাৎকার ও ভিসা ফি প্রদান করতে হয়। নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়া সহজ হয়। নিচে ধাপগুলো দেখুন-

ধাপ ১: কাগজপত্র প্রস্তুত করুন- ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। সাধারণত বৈধ পাসপোর্ট, ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আমন্ত্রণপত্র বা অফার লেটারসহ অন্যান্য নথি দরকার হয়। সঠিকভাবে কাগজপত্র জমা দিলে ভিসা অনুমোদন সহজ।

ধাপ ২: ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ- মিশরের ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম দূতাবাস থেকে বা অনলাইনে পাওয়া যায়। আবেদনকারীকে ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। ভুল তথ্য দিলে ভিসা রিজেক্ট হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা জরুরি।

ধাপ ৩: কাগজপত্র জমা দিন- মিশরের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঢাকায় অবস্থিত মিশরের দূতাবাসে সরাসরি জমা দিতে হয়। সব নথি সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। ঢাকায় মিশরের দূতাবাসের ঠিকানা: Embassy of the Arab Republic of Egypt, House #12, Road #90, Gulshan-2, Dhaka-1212

ধাপ ৪: ভিসা ফি প্রদান- মিশরের ভিসার জন্য নির্ধারিত ফি নগদে প্রদান করতে হয়, যা মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় দিতে পারেন। ফি জমা হলে আবেদন প্রক্রিয়া এগোতে শুরু করে।

ধাপ ৫: প্রসেসিং সময়- মিশরের ভিসার আবেদন সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত হয়। এই সময়ের মধ্যে কাগজপত্র যাচাই, ফি অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন শেষে ভিসার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

মিশর ভিসার ফি ও প্রসেসিং টাইম

মিশর বা বিশ্বের যে কোন দেশের ভিসার ফি মূলত ভিসার ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। তবে সাধারণত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ফি নিম্নরূপ-

  • ট্যুরিস্ট ভিসা- প্রায় ২৫ থেকে ৫০ মার্কিন ডলার।
  • স্টুডেন্ট ভিসা- প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মার্কিন ডলার।
  • ওয়ার্ক ভিসা- প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি, যা চাকরি ও অনুমোদনের ধরণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
  • প্রসেসিং সময়: সাধারণত ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে আবেদনকারীর কাগজপত্র, দূতাবাসের ব্যস্ততা এবং ভিসার ধরন অনুযায়ী সময় কিছুটা বেশি বা কম হতে পারে।

বিঃদ্রঃ সঠিকভাবে সমস্ত কাগজপত্র প্রস্তুত ও জমা দিলে এবং ফি প্রদানের পর ভিসা অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়।

বাংলাদেশ থেকে মিশরে পড়াশোনা

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মিশর একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বিশেষ করে সেখানাকার আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত।

এছাড়া Cairo University, Alexandria University প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, কম্পিউটার সায়েন্সসহ বিভিন্ন কোর্সে পড়াশোনা করা যায়। 

তাছাড়া, মিশরে পড়াশোনা তুলনামূলকভাবে অনেক সাশ্রয়ী খরচে করা সম্ভব হয়। সেখানে হোটেল, খাবার ও যাতায়াতের খরচ অনেকটা কম। এছাড়া, মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবারের সুবিধা অনেক সহজলভ্য।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাপ্ত স্কলারশিপ ও রিসার্চ সুযোগও পেতে পারেন। তাই যারা ইসলামি শিক্ষা বা আধুনিক বিষয়সমূহে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, তাদের জন্য মিশর খুবই উপযোগী।

বাংলাদেশিদের জন্য মিশরে চাকরির সুযোগ

মিশরে চাকরির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া তুলনামূলক কঠিন। দেশটিতে স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার থাকায় আবেদন প্রক্রিয়া কঠোর। তবে, কিছু বিশেষ খাত রয়েছে, যেমন- তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে বিদেশিরা কাজ করার সুযোগ পান। যেমন-

  • টেক্সটাইল/গার্মেন্টস- কারখানা ও উৎপাদন সংক্রান্ত কাজের জন্য।
  • নির্মাণ খাত- প্রকল্প, যন্ত্রপাতি ও সাইট ম্যানেজমেন্টে কর্মী প্রয়োজন হয়।
  • পর্যটন সেক্টর- হোটেল, রিসোর্ট, গাইড এবং ট্রাভেল সার্ভিসে চাকরির সুযোগ।
  • কৃষি খাত- ফসল সংগ্রহ, ম্যানেজমেন্ট ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় বিদেশি শ্রমিক দরকার।
  • সেবা খাত- রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, হেলথ কেয়ার ও পরিষেবা খাতে বিদেশিরা কাজ করতে পারেন।

সফলভাবে মিশরে চাকরি পেতে হলে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং নিয়োগপত্র থাকা আবশ্যক। এছাড়া, মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হবে, যা ওয়ার্ক ভিসার জন্য বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশিরা এই খাতগুলোতে দক্ষতা অনুযায়ী আবেদন করলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মিশর ট্রানজিট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ বা আফ্রিকার অন্য কোন দেশে যাওয়ার পথে, যদি কায়রো বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়, তবে ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন হতে পারে। তবে, ২৪ ঘণ্টার কম স্টপওভার থাকলে সাধারণত আলাদা ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ট্রানজিট ভিসা মূলত অন্য দেশে যাওয়ার সময় মিশরে সীমিত থাকা এবং নিরাপদে অবস্থানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ভিসা রিজেক্ট হওয়ার সাধারণ কারণ

মিশর ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ার সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে, ভুল বা অসম্পূর্ণ কাগজপত্র, আবেদন ফি যথাযথভাবে প্রদান না করা, ভিসার শর্ত লঙ্ঘন, পূর্বের ভিসা ইতিহাসে সমস্যা এবং দূতাবাসের নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকা। নিচে বিস্তারিত দেখুন-

  • পূর্বে ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করা।
  • কাগজপত্র অসম্পূর্ণ বা ভুল থাকা।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা।
  • ভুয়া তথ্য বা জাল কাগজপত্র জমা দেওয়া।
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে উল্লেখ না করা।
  • সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মিশর ভিসা পাওয়ার টিপস

  • সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী থাকুন।
  • জাল কাগজপত্র কখনও জমা দেবেন না।
  • সব কাগজপত্র সঠিক ও হালনাগাদ জমা দিন।
  • ভ্রমণের স্পষ্ট পরিকল্পনা দিন (এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং)।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্টে কমপক্ষে ২–৩ লক্ষ টাকা ব্যালেন্স রাখুন।

শেষকথা- বাংলাদেশ থেকে মিশর ভিসার আপডেট তথ্য

মিশর হলো ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ইসলামি ঐতিহ্যের এক অনন্য দেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেকেই সেখানে পড়াশোনা, চাকরি বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যান। তবে, ভিসা পাওয়ার জন্য সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত করা এবং নিয়ম মেনে আবেদন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট ও ট্রানজিট ভিসা তুলনামূলক সহজ হলেও ওয়ার্ক ভিসা কিছুটা কঠিন। তাই, যারা মিশরে যেতে চান, তাদের আগেই পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এমন আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url