কাজু বাদাম- পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আরো পড়ুনঃ মাশরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, নিরাপদ মাশরুম চেনার উপায় ও জনপ্রিয় রেসিপি

কাজু বাদাম (Cashew nut) অত্যান্ত জনপ্রিয়, বাদাম জাতীয় একটি খাবার, যে খাবারটি কেমলমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং এটি একটি পুষ্টিমূল্য ও স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

কাজু বাদাম মূলত একটি Anacardium occidentale নামক একটি গাছের বীজ। দখিন আমেরিকার ব্রাজিলে যদিও, কাজু বাদামের প্রথম উৎপত্তি স্থল। কিন্তু, বর্তমানে এই উপকারি খাবারটি ভারত, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে উৎপন্ন হচ্ছে।

কাজু বাদাম আধুনিক বিভিন্ন খাদ্যাভাসের মধ্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে, তার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতার জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক- 

কাজু বাদামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ- Various nutrients contained in cashew nuts

কাজু বাদামে ভিটামিন "বি১, বি২, বি৬, কে এবং ই"সহ আরো প্রায় ১২/১৩ টি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। চলুন নিম্নের টেবিলের মাধ্যমে দেখে নেই, প্রতি ১০০ গ্রাম কাজু বাদামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে- 

১০০ গ্রাম কাজু বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদানের নাম

ক্রঃনং

পুস্টির নাম

পরিমাণ

আঁশ

. গ্রাম

ক্যালসিয়াম

৩৭ মিলিগ্রাম

লোহা

.৬৮ মিলিগ্রাম

প্রোটিন

১৮০২২ গ্রাম

ক্যালোরি

৫৫৩ কিলোক্যালরি

জিঙ্ক

.৭৮ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম

২৯২ মিলিগ্রাম

পটাসিয়াম

৬৬০ মিলিগ্রাম

কার্বো হাইড্রেট

৩০.১৯ গ্রাম

১০

চিনি

.৯১ গ্রাম

১১

চর্বি

৪৩. ৮৫ গ্রাম

১২

ফসফরাস

৫৯৩ মিলিগ্রাম

এছাড়াও, কাজু বাদামে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং ফাইটোকে মিক্যালস, যা, আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

কাজু বাদাম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা- Health benefits of eating cashew nuts

বর্তমান বিশ্বে যতগুলো স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম হলো কাজু বাদাম। এই খাবারটি ভরপুর থাকে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে। পরিমাণমত কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে, স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা পাওয়া যায়। কাজু বাদামের পুষ্টি এবং খাদ্যের মান বিবেচনায়, এটিকে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। নিম্নে এর উপকারিতা দেখি-

** চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে- কাজু বাদামে পাওয়া যায়, জিয়াক্সানথিন এবং লুটেইন, যা চোখের জন্য খুবই উপকারি। এই উপাদানগুল চোখের UV রশ্মি থেকে রক্ষার পাশাপাশি বয়সের কারণে চোখের সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

** হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখে- কাজু বাদামে যে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়, তা খারা্প কোলেস্টেরল বা LDL কে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বা HDL কে বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে অনেকটাই কমে যায় হৃদযন্ত্রের ঝুকি।

** ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- কাজু বাদামে যে ফ্যাটগুলো পাওয়া যায়, তা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যারা নিয়মিত কাজু বাদাম খান, তাদের শরীরে কম চর্বি জমে এবং তারা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন।

** ত্বকের সৌন্দর্যকে সঠিক রাখে- এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে, যা ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। তাই কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে ত্বকের ব্রণ ও অন্যান্য চর্মরোগ কমে যায়।

** মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়- কাজু বাদামে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিভিন্ন নিউরো সাপোর্টিভ প্রাকৃতিক উপদান, যা মানুষের মস্তিষ্কের কোষকে রাখে সুস্থ্য এবং স্মৃতি শক্তি বাড়ায়।

** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- কাজু বাদামে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং মিনারেল সমূহ হিউম্যান সিস্টেমকে করে শক্তিশালি। বিশেষ করে এতে থাকা কপার ও জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আরো পড়ুনঃ কালোজিরার পুষ্টি উপাদান উপকারিতা ও অপকারিতা

** মজবুত হাড় গঠন করে- এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস, হাড় ও দাতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি বৃদ্ধকালে অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

** রক্তস্বল্পতা দূর করে- যেহেতু কাজু বাদামে কপার ও আয়রণ থাকে, তাই এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী

কাজু বাদাম খাওয়ার অপকারিতা ও সতর্কতা- Disadvantages and precautions of eating cashew nuts

সকল উপকা রিজিনিসের জিনিসের কিছু অপকারিতা থাকে এবং খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করে খাওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে কাজু বাদামও এর বাইরে নয়, তাই কাজু বাদাম অত্যান্ত উপকারি হলেও, এটি খাওয়ার কারণে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। নিম্নে এই সম্পর্কে সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক- 

** অ্যালার্জির সমস্যা- অনেক মানুষের কাজু বাদামে অ্যালার্জি থাকতে পারে। ফলে এটি খাওয়ার কারণে চুলকানিন ফোলাভাব, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আর এই সকল সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাওয়া উচিৎ।

** ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে- কাজু বাদাম উচ্চ ক্যালোরী সম্পন্ন খাবার হওয়ার কারণে, এটি অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, প্রতিদিন ১৫/২০ টি খাওয়াই যথেষ্ট।

** উচ্চ রক্তচাপ- সোডিয়াম সমৃদ্ধ (ভাজা ও লবণাক্ত) কাজু বাদামে খাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

** অক্সলেট সমস্যা- এতে এক ধরণের অক্সলেট উপাদান থাকে, যা কিডনির সমস্যা বাড়ায়। বিশেষ করে যারা কিডনি রোগের ঝুকিতে রয়েছেন।

কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম- The correct rules for eating cashew nuts

কাজু বাদাম বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। যেমন, কাছা, ভাজা করে বা সালাদের সঙ্গে ইত্যাদি। তবে, নিম্নের উপায়ে কাজু বাদাম খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

  • কাছা অথবা হালকা ভাজা কাজু খাওয়া- সবসময় ভাজা ও লবণাক্ত কাজু বাদামকে এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও চর্বিজুক্ত হয়।
  • রাতে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া- এটি রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খেলে সহজে হজম হয় এবং এর মধ্য থাকা পুষ্টি উপাদান সহজে শোষিত হয়।
  • সালাদের উপাদান হিসাবে খাওয়া- কাজু বাদামকে সালাদ, স্মুদি, ওটমিল, দুধ, চকলেটসহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর ডেজার্টে ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে।
  • অল্প পরিমাণে খাওয়া- প্রতিদিন প্রাপ্ত বয়স্কদের সর্বচ্চ ১৫ থেকে ২০ কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের কাজু বাদামের উপকারিতা- Benefits of cashew nuts for pregnant women

স্বাভাবিক অবস্থার ন্যায়, গর্ভবতী নারীদের জন্য কাজু বাদাম নিরাপদ ও উপকারি। কারণ, এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও আয়রন গর্ভের শিশুর বিকাশে সাহায্য করে। তবে, খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকে নজর দেওয়া জরুরি এবং কাঁচা ও ভেজানো কাজু খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

কাজু বাদামের উপকারিতা- শেষকথাঃ Benefits of cashew nuts - Conclusion:

স্বাদে পরিপূর্ণ আর পুষ্টিতে ভরপুর বাদাম জাতীয় একটি খাবার কাজু বাদাম। কাজু বাদাম মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকরীতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

তবে, অন্য যে কোন খাবারের মতোই, এটি খাওয়ার সময় পরিমান ও প্রক্রিয়া জাতের বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই জরুরী। কাঁচা, ভিজানো বা হালকা ভাজা অবস্থায় পরিমিত খেলে কাজু বাদাম হতে পারে একটি দুর্দান্ত স্বাস্থ্য সহচর।

আরো পড়ুনঃ টিউমার হওয়ার কারণ কি কি?- টিউমার প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না, কারণ তারাও যেন এটি পড়ে উপকৃত হন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url