২০২৫ সালে কানাডা কৃষি ভিসা- আবেদন পদ্ধতি, খরচ, বেতন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আরো পড়ুনঃ সৌদি আরব ভিসার আপডেট তথ্য ২০২৫

আপনি কি কানাডা কৃষি ভিসায় যাওয়ার ইচ্ছুক? আপনি কি কানাডা কৃষি ভিসার আপডেট তথ্য জানতে চান? তাহলে, আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন এবং আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, আজকে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কানাডা কৃষি ভিসার আপডেট তথ্য। সারা প্রথিবীর ন্যায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কৃষি শ্রমিক ভিসা নিয়ে কানাডায় যায়। আর কানাডা বা যে কোন দেশে যাওয়ার জন্য, সেই দেশের ভিসা সম্পর্কে জানা অনেক প্রয়োজন। 

কারণ, সঠিক তথ্য না জানার জন্য, অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন। তাই, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের শেয়ার করবো, কানাডা কৃষি ভিসায় যাওয়ার উপায়, কত টাকা লাগবে, বেতন কত, আবেদনের নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক-

কানাডা কৃষি ভিসায় যাওয়ার উপায়

কানাডায় সাধারণত দুই ধরণের কৃষি ভিসার মাধ্যমে যাওয়া যায়। যেমন সরকারীভাবে অথবা কানাডা অনুমোদিত কোন বেসরকারি ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে। এছাড়াও, কানাডায় বসবাসরত আপনার কোন পরিচিত বা আত্নীয়র মাধ্যমেও, আপনার ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে পারেন।

কানাডার সরকার দ্বারা পরিচালিত Temporary Foreign Worker Program (TFWP) এর আওতায় সেই দেশে কৃষি খাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। তবে, আপনার যদি, কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং শারীরিক সামর্থ্য থেকে থাকে।

কিন্তু, আপনি এই প্রোগ্রামের অধিনে কেবলমাত্র কানাডায় অস্থায়ীভাবে কৃষি কাজ করার অনুমোতি পাবেন। এই জন্য আপনাকে মূলত শাকসবজি সংগ্রহ, মৌসুমি ফল- মূল চাষ, দুগ্ধ খামার, পশুপালনসহ বিভিন্ন ধরণের কৃষি সম্পর্কিত কাজ করতে হবে।

কানাডায় কৃষি কাজের ভিসা পাওয়ার শর্ত

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ কৃষি কাজের ভিসা নিয়ে কানাডায় যায়। কানাডায় কৃষি কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য নিয়োগকর্তা ও বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের কিছু শর্ত ও নিয়ম- কানুন অবশ্যই মানতে হয়। কানাডা কৃষি কাজের ভিসার জন্য নিম্নের শর্তাবলী পালন করতে হয়। যেমন-

  • বয়স- কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা- মেডিকেল টেস্ট উত্তীর্ণ হতে বিবে।
  • ভাষার দক্ষতা- ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ ভাষার উপর মৌলিক জ্ঞান প্রয়োজন।
  • কাজের প্রস্তাব- কানাডার কোন নিয়োগ কর্তার কাছ থকে বৈধ কাজের অফার থাকতে হবে।
  • LMIA অনুমোদন- নিয়োগ কর্তার পক্ষে Labour Market Impact Assessment (LMIA) থাকতে হবে।
  • অন্য ভিসা প্রথা বা PNP- অনেক প্রদেশ রয়েছে, যেখানে কৃষিকাজে দক্ষ শ্রমিকদের PNP বা ওয়ার্ক পারমিট নেয়।
  • যোগ্য দেশ- SAWP প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে অনেক দেশের নাগরিকের সুযোগ রয়েছে, তবে বাংলাদেশ এর আওতায় পড়ে না।

কানাডা কৃষি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

আপনি যদি কানাডায় কৃষি ভিসার মাধ্যমে যেতে চান, তাহলে আপনাকে ভিসার আবেদন করার জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কানাডায় কৃষি ভিসার জন্য নিম্নের ডকুমেন্ট বা কাগজ জমা দিতে হবে। যেমন-

  • আবেদনকারীর ১ বছর মেয়াদ আছে এমন বৈধ পাসপোর্টের কপি।
  • সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট সাইজের ১০ টি রঙ্গিন ছবি।
  • মেডিকেলে ফিটনেস আছে তার সাটিফিকেটের কপি।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেটের এর কপি।
  • কানাডা কৃষি ভিসার আবেদন ফরম।
  • ব্যাংক স্টেট্মেন্টের ফটোকপি।
  • চাকুরীর অফার লেটার।
  • এলএমআইএ নম্বর।
  • চাকুরির চুক্তি। 

কানাডা কৃষি ভিসা আবেদনের নিয়ম

কানাডায় কৃষি ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে বেশ কিছু ধাপ বা প্রক্রিয়া অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়ে। নিম্নে প্রক্রিয়াগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

ধাপ- ১ঃ চাকুরির অফার লেটার- কানাডা ভিসা আবেদনের শুরুতেই আপনাকে সেই দেশের কোন নির্দিষ্ট কৃষি প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম থেকে চাকুরীর অফার লেটার সংগ্রহ করতে হবে। যেখানে উল্লেখ থাকবে, কাজের সময়, দায়িত্ব, বাসস্থানের তথ্য এবং বেতন।

ধাপ- ২ঃ LMIA অনুমোদন- আপনার নিয়োগকর্তাকে কানাডিয়ান সরকারের কাছ থেকে LMIA (Labour Market Impact Assessment) অনুমোদন নিতে হবে। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, ওই পদের জন্য কানাডার স্থানীয় শ্রমিক পাওয়া যায়নি।

ধাপ- ৩ঃ ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন- এবার LMIA অনুমোদনের কপি এবং চাকুরীর অফার লেটারসহ ওয়ার্ক পারমিটের জন্য কানাডিয়ান ভিসা অফিসে আবেদন করতে হবে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে- 

  • ছবি।
  • পাসপোর্ট।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
  • মেডিক্যাল সার্টিফিকেট।
  • শিক্ষাগত জোগ্যতার সনদপত্র।
ধাপ- ৪ঃ বায়োমেট্টিক ও মেডিক্যাল টেস্ট- ভিসা আবেদন করার পর আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য বা ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হবে।

ধাপ- ৫ঃ ভিসা অনুমোদন ও কানাডা যাত্রা- আপনার আবেদন অনুমোদিত হলে আপনি, ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কানাডায় কৃষি কাজ করতে পারবেন।

কানাডায় কৃষি কাজের বেতন কত?

কানাডায় সাধারণত কাজের বেতন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, প্রতি ঘন্টায় এবং এটি নির্ভর করে শ্রমিকের কাজের ধরণ এবং প্রদেশের উপর। নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কানাডায় কৃষি শ্রমিকের গড় বেতন

  • শুরুর দিকে প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা যা বার্ষিক দাঁড়ায় প্রায় ২০,৮০,০০০ টাকা।
  • অভিজ্ঞ কর্মী প্রতি ঘন্টা ২৩২০ টাকা যা বার্ষিক দাঁড়ায় প্রায় ৩৬,০০,০০০ টাকা।
  • সাধারণত গড় বেতন প্রতি ঘন্টা ১৫৯৬ টাকা যা বার্ষিক দাঁড়ায় প্রায় ২৩,৯১,২০০ টাকা।,

কানাডায় প্রদেশ ভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের গড় বেতন

  • অন্টারিও প্রদেশ- প্রতিঘন্টা ১,২৪২ টাকা।
  • অ্যালবার্টা প্রদেশ- প্রতি ঘন্টায় ১,৭৮৬ টাকা।
  • ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশ- প্রতি ঘন্টায় ১,৩৯২- ১৬৮০ টাকা।

কানাডায় কোন কাজের বেতন কত?

  • ডেইরি খামার- প্রতিঘন্টা ১,৩৭৮ টাকা থেকে ১,৫২৫ টাকা।
  • মাশরুম খামার- প্রতিঘন্টা ১,৩৭৬ টাকা থেকে ১,৪৩৭ টাকা।
  • ফল ও সবজি খামার- প্রতিঘন্টা ১,৩৭৮ টাকা থেকে ১,৫২৫ টাকা।
এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে সেখানে বিনামূল্যে থাকা- খাওয়া বা স্বল্প খরচ দেওয়া হয়। বিশেষ করে যারা Seasonal Agricultural Worker Program (SAWP) এর আওতায় তাদের।

কানাড়া কৃষি ভিসার মোট খরচ কত

বর্তমানে কানাডায় কৃষি কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তবে, কানাডায় গিয়ে কৃষি কাজ করতে চাইলে প্রয়োজন কৃষি ভিসার। কানাডা অন্যান্য ভিসা করার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। তবে, বর্তমানে আশা করা যাচ্ছে, কানাডা কৃষি ভিসা করতে পূর্বের তুলনায় কিছু হলেও খরচ কম হবে।

কানাডা যাওয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ভাবেই কানাডা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, এখন বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি কাজে দক্ষ করে গড়ে তুলে, সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। নিম্নে কানাডা কৃষি ভিসার সকল প্রকার খরচের আপডেট তথ্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

IRCC নির্ধারিত সরকারি ফি

সর্বমোট সরকারি ফি বাবদ (গড় হিসাবে) খরচ লাগে ৩২, ০০০ টাকা। যেমন-

  • যদি ফ্রি ওয়ার্ক পারমিট হয়, তবে আরো ১০,০০০ টাকা।
  • ওয়ার্ক পারমিট আবেদন ফি বাবদ- ১৪,০০০ টাকা।
  • বায়োমেট্রিক ফি বাবদ- ৮,০০০ টাকা।

কানাডা কৃষি ভিসার অন্যান্য খরচ

সর্বমোট অন্যান্য খরচ হবে আওনুমানিক ১৫,০০০ টাকার মত। যেমন-

  • পাসপোর্ট নবায়ন (যদি লাগে) ৫,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা।
  • মেডিক্যাল পরীক্ষা বাবদ- ৫,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা।

ঢাকা থেকে কানাডা বিমান ভাড়া

সাধারনত ওয়ান ওয়ে টিকিট ইকোনিমি ক্লাস ১,১০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকা। বিভিন্ন শহর অনুযায়ী ভাড়া কম- বেশি হতে পারে। তবে, এটি ধরা যায় ১,৩০,০০০ টাকা।

এজেন্সি বা দালাল খরচ

অনেক সময় দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে কানাডা কৃষি ভিসা পেতে, তাদেরকে ১,০০,০০০ টাকা থেকে ২,০০,০০০ টাকা দেওয়া লাগে। এটি পুরোটাই নির্ভর করে আপনার এজেন্সি বা দালালের উপর।

তাহলে, সর্বমোট আনুমানিক খরচ দাঁড়ায়-

  • সরকারি ফি বাবদ-   ৩২,০০০ টাকা।
  • অন্যান্য খরচ বাবদ-  ১৫০০০ টাকা।
  • বিমান ভাড়া বাবদ-১,৩০,০০০ টাকা।
  • দালাল বা এজেন্সি ২,০০,০০০ টাকা

সর্বমোট দালালের মাদ্যমে ২,৭৭,০০০ টাকা থেকে ৩,৭৭,০০০ টাকা।

আপনি যদি দালাল বা এজেন্সি ছাড়া যেতে পারেন তাহলে, আপনার খরচ হবে, ১,৭৭,০০০ টাকা।

কানাডা ভিসা আবেদনের অফিশিয়াল নিয়ম

কানাডা কৃষি ভিসা আবেদন করার জন্য প্রথমেই নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোতি পাওয়ার জন্য, কাজের আবেদন করতে হবে। এরপর কানাডার সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে কানাডা ভিসার আবেদন ফরম ২০২৫ এ আবেদন করতে হবে।

কানাডা কৃষি কাজের চাকুরিসহ যে কোন ধরনের চাকুরী খোজ করতে এবং আবেদন করতে Canada Government Job Website www.jobbank.gc.ca ভিজিট করতে পারেন। কানাডায় Job Application এর ক্ষেত্রে কানাডার Standard অনুসারে আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতার বিবিরণ দিয়ে Resume তৈরি করতে হবে।

কানাডা কৃষি ভিসা আবেদনের সঠিক নিয়ম অনেকেই জানে না। সঠিক নিয়মে ভিসার আবেদন করলে, ভিসা অনুমোদনের সম্ভবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাছাড়া, আপনাকে স্মরন রাখতে হবে যে, কানাডা ভিসার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ভাবেই করা যায়।

কানাডা কৃষি কাজের ভিসা খরচ- শেষকথা

কোন দালাল বা ভুয়া এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবন থাকে। তাই চেষ্টা করবেন, সরকারি ওয়েব সাইটে কানাডার নির্দিষ্ট কনসালট্যান্টের মাধ্যমে আবেদন করার। তাছাড়া, আপনি যদি নিজে সরাসরি আবেদন করতে পারেন, তাহলে খরচ অনেক কমে যাবে।

এই জন্য সরকারি ওয়েব সাইট থেকে সরাসরি আবেদন করলে নিরাপদ এবং সবচ্ছ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানি বিমান ভাড়া এবং ভিসা খরচ বহন করে, তাই স্পনসর চাকরি পেলে খরচ আরো অনেক কমে যাবে।

আরো পড়ুনঃ সোহাগ পরিবহনের চলাচলের রুটসমূহ

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগন, আমরা আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিশেষ করে যারা কৃষি ভিসায় ক্যানাডা যেতে চান। আর এটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয় তাহলে, অন্যের সঙ্গে শেয়ার কবেন। আরো নতুন কোন তথ্য যানতে, চোখ রাখুব আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলে, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url