কুয়েত ভিসা ২০২৫- খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া, চাকরির চাহিদা ও বেতন – বিস্তারিত গাইড

আরো পড়ুনঃ কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫- কানাডা কোন কাজের চাহিদা বেশি

কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম একটি ধনী/ উন্নত রাষ্ট্র। আয়তনের দিন থেকে যদিও, কুয়েত অনেক ছোট একটি দেশ, কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ তেল রপ্তানি করে উন্নত অর্থনৈতিক দেশে পরিনত হয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশ থেকে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশ যেমন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবী মানুষ, উন্নত জীবন যাপনের জন্য কুয়েত যান। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৩০ হাজারের অধিক লোক কুয়েত পাড়ি জমান কাজের সন্ধানে।

আর কুয়েত যাওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে ভিসার। সেই কারণে কুয়েত সরকার চালু রেখছে বিভিন্ন ধরণের ভিসা ব্যবস্থার। তবে, আপনি যদি কাজের সন্ধান বা অন্য যে কোন কারণে কুয়েত যেতে চান, তাহলে আপনাকে কুয়েত কাজের ভিসার দাম, কোন কাজের চাহিদা বেশি, বেতন কত ইত্যাদি সম্পর্কে যানা জরুরি।

তাই, আপনারা যারা কুয়েত যেতে চান, তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজকে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো,  কুয়েত ভিসার দাম ২০২৫ থেকে শুরু করে, কোনা কাজের চাহিদা বেশি, বেতন কত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। যা, কুয়েত গমনে আপনার জন্য প্রয়োজন। চলুন তাহলে দেখি-

কুয়েত ভিসার ধরণ ২০২৫- কুয়েত ভিসার খরচ ২০২৫

কুয়েত যদিও বেশ কয়েক ধরণের ভিসা চালু আছে এবং ভিসার ধরণ অনুযায়ী ভিসা খরচ ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। নিম্নে কুয়েতের কয়েকটি ভিসার ধরণ এবং সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা খরচ ২০২৫

  • এই ভিসাটি কেবল মাত্র শিক্ষার্থী ব্যবহার করতে পারবে।
  • স্টুডেন্ট ভিসার সম্ভাব্য খরচ ৩ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
  • এছাড়াও, সেখানে বিশব্বিদ্যালয়/ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ভর্তি, কোর্স ফি, ভিসা ফি ইত্যাদি।

কুয়েত টুরিস্ট/ ভিজিট ভিসা খরচ ২০২৫ 

  • এই ভিসায় সেখানে থাকা আত্মীয়- সবজনের সঙ্গে দেখা এবং ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য ব্যবহার হয়।
  • কুয়েত টুরিস্ট/ ভিজিট ভিসার সম্ভাব্য খরচ ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
  • এই ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন বা খেত্র বিশেষে এর চেয়েও বেশি দিন হয়।

কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট/ কাজের ভিসা খরচ ২০২৫

  • কুয়েত কাজের/ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার সম্ভাব্য খরচ ৭ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।
  • এই জাতীয় ভিসা শ্রমিক, ড্রাইভার, হোটেল স্টাফ, টেকনিশিয়ান ইত্যাদি কাজের ব্যবহার হয়।
  • এছাড়াও, অতিরিক্ত ফি হিসাবে, মেডিকেল, এজেন্সি চার্জ, প্রবাসী কল্যাণ ফি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

কুয়েত ভিসা আবেদনের নিয়ম ২০২৫

বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে আপনার হাতে যদি একটি স্মার্ট ফোন থাকে, তাহলে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে নিজে নিজেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, এর জন্য আপনাকে অবশ্য কয়েকটি ধাপ অনুসরন করে এগিয়ে যেতে হবে। নিম্নে ধাপ সম্পর্কে দেখে নেই-

ধাপ- ১ঃ প্রথমে গুগলে গিয়ে সার্চ করতে হবে Kuwait Visa Application নামে।

ধাপ- ২ঃ কুয়েতের সরকারি ওয়েব সাইট https://www.moi.gov.kw এ প্রবেশ করুন

ধাপ -৩ঃ এবার আপনাকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। যেমন, আপনার জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, কাজের তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্কান করে আপলোড করুন।

ধাপ - ৪ঃ ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে। আপনার পরিচিত কিংবা বিশ্বস্ত কোন এজেন্সির মাধ্যমে পরিশোধ করুন এবং ব্যাংক রিসিভ কপি সংগ্রহ করে রাখুন।

ধাপ - ৫ঃ ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করুন। আপনার ডেটা জাচাই করার জন্য আপনাকে একটি ই- মেইল বা এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে, এর জন্য সময় লাগতে পারে ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত।

কুয়েত ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে?

আবেদনকারীর ভিসার ধরণ ছাড়াও আবেদন প্রক্রিয়ার উপর অনেকটা নির্ভর করে ভিসার পাওয়ার সময়। তাছাড়া, এম্বাসিতে কাজের চাপ এবং আপনার আবেদনের নির্ভুলতার উপরও নির্ভর করে। তবে, সাধারনত ভিসার ধরণ অনুযায়ী নিম্নের দেওয়া সময় লাগতে পারে। যেমন-

আরো পড়ুনঃ ২০২৫ সালে ইউ কে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

  • স্টুডেন্ট ভিসা- ৩০ থেকে ৬০ দন।
  • টুরিস্ট ভিসা- ১৫ থেকে ৩০ দন এবং
  • ওয়ার্ক পারমিট/কাজের ভিসা- ৬০ থেকে ৯০ দিন, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮০ মাস সময় লাগতে পারে।

বর্তমানে কুয়েতে ভিসা ২০২৫ চালু আছে কি?

আপনার প্রশ্ন যদি হয়ে থাকে বর্তমানে কুয়েতে ভিসা চালু আছে কি না। তাহলে উত্তর হলো হ্যাঁ। কারণ, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কুয়েত সরকার বাংলাদেশীদের ২০২৫ সালের শুরুর দিক থেকে পুনরায় ভিসা চালু করেছে। নিম্নে কুয়েত সরকার বাংলাদেশীদের জন্য যে সমস্ত ভিসা চালু করেছে, তা হলো- 

  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা- শ্রমিক ও টেকনিক্যাল কাজ।
  • ভিজিট বা ফ্যামিলি ভিসা- পরিবার সঙ্গে দেখা বা স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণ।
তবে, সকল ভিসার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোটা এবং সকল নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে।

বর্তমানে কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি? বেতন কত?

কুয়েত বিশ্বের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় উন্নয়নশীল দেশ এবং সেখানে বিভিন্ন প্রকারের প্রচুর পরিমাণে শিল্প কারখানা থাকার কারণে, প্রায় সকল সেক্টরে কাজের চাহিদা রয়েছে। তবে, যারা বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় কুয়েত যান, তারা সাধারণত নিম্নের কাজগুলো করেন এবং  বেতন নিম্নরূপ- 

বিঃদ্রঃ বেতন ছাড়াও অনেক কোম্পানি আছে, যারা ফ্রি খাবার, থাকার জায়গাসহ ওভারটাইম দিয়ে থাকে। এতে করে মাসিক আয় আরও বাড়ে।

কুয়েত ভিসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • প্রতারকের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন।
  • সকল চুক্তি লিখিত নিন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন।
  • সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসা নিন।
  • কখনো দালালের কথায় ভরসা করে টাকা লেনদেন করবেন না।

কুয়ের ভিসার আপডেট তথ্য- শেষকথা

আপনি যদি ২০২৫ সালে কুয়েত যেতে চান, তাহলে আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হবে সঠিকভাবে ভিসার তথ্যসহ বেতন জেনে নেওয়া। আজকের আর্টিকেলে আমরা কুয়েত ভিসার ধরন, বর্তমান খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া, জনপ্রিয় চাকরি ও গড় বেতনের বিস্তারিত তুলে ধরেছি।

আরো পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিতকে শেয়ার করুন, তারাও যেন উপকৃত হন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

সঠিক সিদ্ধান্ত নিন, প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন, এবং স্বপ্নের কুয়েত যাত্রাকে সফল করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • MAHMUD
    MAHMUD 8 July 2025 at 21:16

    মুদ্রার মান হিসাবে ইউরোপের তোলনায় বেতন বেশি না। RTV এর একটা নিউজ দেখে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ব্যাপারে জানতে আপনার পেইজে আসা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এজেন্সি ছাড়া নিজে নিজে কি কি কাজ করতে পারব ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবরদন করতে?
    বিশেষ করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবার আবেদন ফি দিতে হবে কেন? এর কোন যৌক্তিক কারণ আছে কি জানালে উপকৃত হব।

  • MAHMUD
    MAHMUD 8 July 2025 at 21:26

    আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে, ৭-৮ লক্ষ টাকা খরচ হওয়ার কারণটা কি? কুয়েত কি কর্মীদের কাজ থেকে পায়েদা খায় নাকি অন্য কারো কারসাজি? আমি যাচ্ছি কাজ করতে, কাজ করে কত টাকাই বা ইনকাম করতে পারবো? থাকা খাওয়ার খরচ যদিও বা কোম্পানি বহন করে তবুও খরচের তোলনায় বেতন কম। তাহলে ৪২০০০ টাকা না হয় ৫০০০০ টাতা ধরলাম, বেতন দিয়ে ৭-৮ লক্ষ টাকা তোলব কখন? আমার কি দুনিধারীকরা লাগবে না? আমি কি আজীবন ওখানে কামলা কেটে দিন পার করব? আমার কি অবসরে যেতে হবে না?

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url